ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ফেনীতে বন্যায় প্লাবিত ৯৮টি গ্ৰাম; জনজীবনে দুর্ভোগ

0
51

ভারতের পানি আগ্রাসনের ফলে গত বছরের ভয়াবহ বন্যার ক্ষত না শুকাতেই আবারও বন্যার মুখোমুখি হলো ফেনীবাসী। এবারের ভয়াবহ বন্যায় ফুলগাজী-পরশুরামের মানুষের দিন কাটছে চরম অনিশ্চয়তায়। ১০ জুলাই (বৃহস্পতিবার), বন্যা পরিস্থিতির অবনতি দেখা গেছে। মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর পানির তোপে আরও কয়েকটি স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙেছে। প্লাবিত হয়েছে ৯৮টি গ্রাম। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত, মুহুরী নদীর পানি এখনও বিপদসীমার নিচে রয়েছে। কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর পানির উচ্চতাও কমেছে। তবে ভাঙ্গনকবলিত জায়গা দিয়ে পানি ঢুকছে লোকালয়ে। সব মিলিয়ে বাঁধের অন্তত ২১টি ভাঙা স্থান দিয়ে লোকালয়ে পানি ঢুকছে। অন্যদিকে ভারীবর্ষণের ফলে বিভিন্ন শহরে যে পানিবদ্ধতা দেখা দিয়েছে সেটা এখনো অব্যাহত রয়েছে। কুমিল্লা, নোয়াখালী ও খাগড়াছড়ির বিভিন্ন এলাকা ও সড়ক এখনো পানির নিচে। টানা ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে খাগড়াছড়ির বেশ কিছু নিচু এলাকা প্লাবিত হয়ে আছে। জলাবদ্ধ রয়েছে নোয়াখালী সদর, কোম্পানীগঞ্জ, সুবর্ণচর, মাইজদি ও কবিরহাটের বিভিন্ন এলাকা। গত তিনদিন ধরেই এসব এলাকাগুলোর সড়ক পানির নিচে তলিয়ে আছে বলা জানা গেছে। গণমাধ্যমের বরাতে জানা যায়, গত কয়েকদিনের টানা বর্ষণ ও ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের পাহাড়ি ঢলে ফেনী জেলার পরশুরাম, ফুলগাজীর বিস্তীর্ণ এলাকা পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এছাড়া ছাগলনাইয়া, সোনাগাজী, দাগনভূঁঞা ও ফেনী সদরের নিম্নাঞ্চল পানিতে প্লাবিত হচ্ছে। এদিকে মুছাপুর রেগুলেটর ভেঙে যাওয়ায় সোনাগাজী ও দাগনভূঁঞা উপজেলার নিম্নাঞ্চল জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হচ্ছে। ছোট ফেনী নদীর দু’কূল ছাপিয়ে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করছে।

ভারতের ত্রিপুরার পাহাড়ি ঢলে ফেনীতে বন্যা:

ভারতের ত্রিপুরার পাহাড়ি ঢলে প্রতিবছর বর্ষাকালে বন্যার কবলে পড়ে ফেনীর ফুলগাজী, পরশুরাম ও ছাগলনাইয়ার বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষ। ২০২৪ সালের বন্যা অতীতের রেকর্ড অতিক্রম করে। ওই বন্যায় পুরো ফেনী জেলার প্রায় ১০ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হয়। মারা যায় ২৯ জন। বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৬শ’ ছিয়াশি কোটি টাকা। ভারত ত্রিপুরা রাজ্যের ডুম্বুর জল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পানি ছেড়ে দেয়ায় তখন লাখ লাখ কিউসেক পানির নিচে তলিয়ে যায় ফেনীর জনপদ। এবারো টানা বর্ষণে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে বন্যা সৃষ্টি হয়েছে।

ভূ-প্রাকৃতিক দিক থেকে ত্রিপুরা একটি পাহাড়ি এলাকা। ফলে সেখানে বৃষ্টি হলেই পানি গড়িয়ে পড়ে বাংলাদেশে। ত্রিপুরার কোল ঘেঁষে বয়ে চলা ফেনী নদী ও পরশুরামের মুহুরী, কহুয়া, সিলোনিয়া ও অভয়া নদী হয়ে বৃষ্টির পানি বাংলাদেশে প্রবেশ করে। পুরো ত্রিপুরা রাজ্যের পানির চাপে বাংলাদেশের এসব নদ-নদীর দু-কূল ছাপিয়ে লোকালয়ের বিস্তীর্ণ জনপদ প্লাবিত হয়। বাড়তি পানির চাপে বেড়িবাঁধ ভেঙে যায়।

টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে বেড়িবাঁধের ২১ স্থানে ভাঙন ও ৯০ গ্রাম প্লাবিত :

চলতি বছর বন্যায় ফেনীর পরশুরাম ও ফুলগাজীর মুহুরী কহুয়া এবং সিলোনিয়া নদীর বেড়িবাঁধের ২১টি স্থানে ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। এতে গত কয়েকদিনে অন্তত ৯০টি গ্রাম পানিমগ্ন হয়েছে। বন্যায় ফুলগাজী ও পরশুরামের বিস্তীর্ণ অঞ্চল পানির নিচে তলিয়ে গেছে। বিশেষ করে ফুলগাজী উপজেলার কয়েকটি অঞ্চলের ঘরবাড়িতে ৫/৬ ফুট পানি প্রবেশ করেছে। পানির নিচে তলিয়ে গেছে ফেনী বিলোনিয়া আঞ্চলিক সড়কের বেশিরভাগ অংশ। এছাড়া নতুন করে পানিতে ডুবছে ফেনী-ছাগলনাইয়া আঞ্চলিক সড়ক।
এদিকে ফেনীর উত্তরাঞ্চলের পানি নেমে আসছে নিচু এলাকার দিকে। এতে ছাগলনাইয়া ও ফেনী সদর নতুন করে পানিমগ্ন হচ্ছে। ফেনী ছাগলনাইয়া আঞ্চলিক সড়কে পানি উঠায় এ পথে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। মানুষ ট্রাক, ট্রাক্টর ও ট্রলিতে করে যাতায়াত করছে। ইতোমধ্যে উজানের পানিতে ছাগলনাইয়ার বেশ কিছু গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

আশ্রয় কেন্দ্রে ৪০টি গ্রামের ৭ হাজার মানুষ:

গত ৭ জুলাই (সোমবার), থেকে শুরু হওয়া টানা বৃষ্টিতে গত ৮ জুলাই (মঙ্গলবার) সকাল থেকে ফেনী শহরের বিভিন্ন এলাকায় পানিবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এসময় শহরের কয়েকটি আশ্রয় কেন্দ্রে নিম্নাঞ্চলের মানুষ আশ্রয় নেয়। এদিকে ৮ জুলাই (মঙ্গলবার) বিকাল থেকে ফুলগাজী ও পরশুরামে বেড়িবাঁধে ভাঙন শুরু হয়। এসময় বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হতে থাকে। গত মঙ্গলবার ও বুধবার অর্থাৎ ৮ ও ৯ জুলাই সকালে ফুলগাজী ও পরশুরামের হাজার হাজার মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছুটতে থাকে। বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) বিকাল পর্যন্ত বন্যা দুর্গত এলাকার বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে প্রায় আট হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। আবার দুর্গত এলাকার অনেকেই নিজের ঘরবাড়ি ছেড়ে যেতে রাজি হননি। অনেকে বাড়ি ছাদে বা উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন। গৃহপালিত পশু, হাঁস ও মুরগি রেখে বাড়ি ছাড়তে রাজি নয় দুর্গত এলাকার বেশিরভাগ মানুষ। এতে সীমাহীন দুর্ভোগে না খেয়ে ঘরবাড়িতে পড়ে আছেন অনেকে।
এদিকে পরশুরামের সাতকুচিয়া দাখিল মাদরাসায় আশ্রয় নিয়েছেন ৭’শ মানুষ। এছাড়া চিথলিয়া উচ্চ বিদ্যালয় ও ফুলগাজীর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রায় ৩ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে।


তথ্যসূত্র:
১.ফেনীতে ৯৮টি গ্রাম প্লাবিত
-https://tinyurl.com/bddnspzp

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধপবিত্র ঈদুল ফিতরকে ব্যঙ্গ করে পত্রিকায় কার্টুন প্রকাশ; প্রথম আলোর সম্পাদকসহ ০৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা
পরবর্তী নিবন্ধখুনি হাসিনার চালু করা সরকারি চাকুরিজীবীদের ‘স্যার’ ডাকার আইন বাতিল