যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের হাতে ২০১৫ থেকে পাঁচ বছরে ১৩৫ জন নিরস্ত্র কৃষ্ণাঙ্গ মার্কিন নাগরিক নিহত হয়েছে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম ন্যাশনাল পাবলিক রেডিও (এনপিআর) এর এক তদন্ত প্রতিবেদনের বরাতে আল-জাজিরার প্রতিবেদনে উঠে আসে এ তথ্য।
এনপিআর তার প্রতিবেদনে জানায়, এসব মৃত্যুর বিষয়ে পুলিশী রেকর্ডের ‘হাজার হাজার পৃষ্ঠার’ তথ্য তাদের তদন্তকারী প্রতিবেদকরা নিরীক্ষণ করেছে।
প্রতিবেদনে জানানো হয়, হত্যার সাথে সংশ্লিষ্ট ৭৫ শতাংশ পুলিশ কর্মকর্তাই শেতাঙ্গ। এদের মধ্যে ১৯ কর্মকর্তা নিয়োগের অল্প কিছুদিনের মধ্যে নিরস্ত্র কৃষ্ণাঙ্গ নাগরিককে গুলি করে হত্যা করে। একজন কর্মকর্তা নিয়োগের মাত্র চার ঘণ্টা পরেই একজন কৃষ্ণাঙ্গ নাগরিককে গুলি করে হত্যা করে।
প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে, যেসব কর্মকর্তার পারিবারিক সহিংসতা ও অতীতে মাদক ব্যবহারের মতো খারাপ কাজে জড়িত তারাই বেশি অপরাধের সাথে জড়িয়েছে এবং পুলিশি নীতিমালা লঙ্ঘন করেছে।
এমনই এক অভিযুক্ত শেতাঙ্গ কর্মকর্তা প্রিসলি। তাকে ২০১৬ সালে সেন্ট মেরি পুলিশ বিভাগের সাথে সাক্ষাতকারে দুর্বল ফলাফলের কারণে নিয়োগ দেয়া হয়নি।
এর পরে প্রিসলি ১৩ কিলোমিটার (আট মাইল) দূরের এক শহরে যান এবং কিংসল্যান্ড পুলিশ বিভাগের জন্য আবেদন করে পুলিশে নিয়োগ পায়।
২০১৮ সালে প্রিসলি ৩৩ বছর বয়স্ক অ্যান্থনি গ্রিন নামের এক কৃষ্ণাঙ্গ নাগরিককে গাড়ি চালিয়ে যেতে দেখেন। প্রিসলি জানতে পারেন, গ্রিনের কাছে কোনো বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই।
প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রিসলি কৃষ্ণাঙ্গ গ্রিনকে ধাওয়া করতে গিয়ে আট বার গুলি করে। গ্রিন পাঁচটি গুলিতে বিদ্ধ হয়ে নিহত হন।
প্রিসলির বিরুদ্ধে ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যার অভিযোগ এনে তাকে পদচ্যুত করা হয়। কিন্তু আদালত তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগের প্রমাণ পায়নি।
প্রিসলিকে পদচ্যুত করা হয় এবং তার বিরুদ্ধে ইচ্ছাকৃত ও অনিচ্ছাকৃতভাবে হত্যা ও গুলি করার অভিযোগ করা হয়। আদালতে বিচারক তাকে হত্যার অভিযোগ থেকে মুক্তি দেয়।
এনপিআর তাদের প্রতিবেদনে দেখায়, মোট ১৩৫ হত্যাকাণ্ডের মধ্যে ৩০টির বিচার হয়েছে এবং ১৪২ মিলিয়ন ডলারের মতো অর্থদণ্ডের আদেশ জারি করা হয়েছে। কিছু কিছু মামলার শুনানি এখনো চলমান।
যে হত্যাকাণ্ডের ফলে যুক্তরাষ্ট্রে ব্ল্যাক লাইভ ম্যাটার আন্দোলনের সূচনা হয়েছে, সেই জর্জ ফ্লয়েডের পরিবার গত বছরের জুলাই মাসে মিনিয়াপোলিস শহরের পুলিশ বিভাগের কাছে বিপুল ক্ষতিপূরণ দাবি করেছে। ক্ষতিপূরণের অর্থের পরিমাণ অপ্রকাশিত রয়েছে। মামলার শুনানি এখনো চলমান আছে।
লুসভিল শহরের পুলিশ ব্রিওনা টেইলরের পরিবারকে গত সেপ্টেম্বরে ১২ মিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ দিতে সম্মত হয়। ২০২০ সালের মার্চে কৃষ্ণাঙ্গ ওই নারীর বাড়ি লক্ষ্য করে পুলিশ গুলি করলে গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনি নিহত হন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ৮০টির বেশি মামলায় সরাসরি পুলিশের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করা হয়নি। অবশ্য ৩৩ হত্যাকাণ্ডের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার পদত্যাগ বা পদচ্যুতির ঘটনা ঘটেছে।
সংশ্লিষ্ট মামলাগুলোতে মাত্র ১৩ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। এই সকল মামলায় দুইজনকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। অন্যদিকে সাতজনের বিরুদ্ধে এখনো মামলার শুনানি চলছে।
সূত্র: আলজাজিরা