গ্রাম এবং শহরজুড়ে এনআরসি, সিএএ নিয়ে ভয়ের আবহ। সাধারণ মানুষের আলাপে বারবার উঠে আসছে এই ভয়ের কথা।
পশ্চিমবঙ্গের কিছু রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং রাজনীতির সাথে জড়িত মানুষদের সাথে আলাপ করে দৈনিক কালের কণ্ঠের এই প্রতিবেদন।
ভয়ের কারণ:
আসামে এনআরসির অভিজ্ঞতা থেকে মানুষ বুঝেছেন যে নাগরিকপঞ্জিতে নাম তুলতে লাগবে নানা রকমের তথ্য। যেমন বাবা মার জন্মস্থান, জন্মতারিখ, ১৯৭১ এর ২৪শে মার্চ এর আগের জমির দলিল বা ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট ইত্যাদি। গ্রাম-গঞ্জের মানুষ এমনকি শহরের বসবাসকারী মানুষদের কাছেও এত তথ্য নেই। তাই মানুষের মনে এক অজানা আশঙ্কা।
ভয়ের প্রমাণ:
১. হঠাৎ করে ভোটার তালিকায় নিজের নাম সুনিশ্চিত করতে ঝাঁপিয়ে পড়েছে রাজ্যবাসী। ১৬ ডিসেম্বর শুরু হওয়া ভোটার তালিকা সংশোধনে অংশগ্রহণকারী নাগরিকের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ৭৩ লক্ষ, যা সর্বকালীন রেকর্ড। নাগরিকত্ব নিয়ে আতঙ্ক থেকেই ভোটার তালিকায় নাম তোলা বা সংশোধনের হিড়িক পড়ে গেছে বলে মনে করা হচ্ছে। যাদের ভোটার তালিকায় বা ভোটার কার্ডে কোনো ভুল আছে, তারা সংশোধনের জন্য আবেদন করেছেন। সেই সংখ্যাও অতীতের সব রেকর্ডকে ছাপিয়ে গেছে।
২.তিন মাসের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের প্রায় ৬.২ কোটি মানুষ নিজেদের রেশন কার্ডের সাথে আধার কার্ডের সংযুক্তিকরণ করিয়েছেন এই আশায় যে, এনআরসি হলে এই সংযুক্ত্করণের কারণে হয়তো তারা বেঁচে যাবেন। ভারতে বিজেপি সরকার আসার পর ব্যাংক একাউন্টের সাথে এবং আয়করের জন্য একাউন্টের সাথে আধার কার্ডের সংযুক্তিকরণ বাধ্যতামূলক করেছিল। কিন্তু সেক্ষেত্রে বারবার সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে কারণ মানুষের থেকে সাড়া মেলেনি। কিন্তু রেশন কার্ড, যা একটি প্রামাণ্য ডকুমেন্ট, আধার এর সাথে সংযুক্তি করার জন্য মানুষ নিজেরা লাইনে দাঁড়িয়েছেন।
৩.গ্রাম থেকে শহরে হঠাৎ করে স্কুল, পোস্ট অফিস বা ব্যাংকে উপচে পড়ছে মানুষের ভিড়। স্কুল বা কলেজে গিয়ে মানুষ নিজেদের সার্টিফিকেট এর ভুল সংশোধন করছেন। পোস্ট অফিস বা ব্যাংকে এবার লাইন পড়ছে কারণ মানুষ নিজেদের আধার কার্ডের কোনো ভুল-ভ্রান্তি থাকলে তা সংশোধন করিয়ে নিচ্ছেন। অবস্থা এমন যে, মুর্শিদাবাদ, নদিয়া, বীরভূমের মতো জেলাগুলোতে, যেখান থেকে অনেক মানুষ ভারতের অন্য রাজ্যে কাজ করতে যান,সেখান গরিব মানুষ অন্য রাজ্যে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন।