মুমিনদের হৃদয় শীতলকারী ঐতিহাসিক শার্লি হেবদো হামলার সাত বছর

ত্বহা আলী আদনান

4
1470
মুমিনদের হৃদয় শীতলকারী ঐতিহাসিক শার্লি হেবদো হামলার সাত বছর

ফরাসি ম্যাগাজিন শার্লি হেবদোতে হামলার সাত বছর পূর্ণ হয়েছে গত ৭ জানুয়ারি। বিশ্ব মুমিনের প্রাণের স্পন্দন হযরত মুহাম্মাদ মোস্তফা (সা.) কে নিয়ে অশালীন ও কুরুচিপূর্ণ ছবি অঙ্কন করায় ম্যাগাজিনটির অফসে হামলা চালান ইসলামি প্রতিরোধ বাহিনী আল-কায়েদার দু’জন বীর মুজাহিদ।

ঘটনাটি ঘটে ২০১৫ সালের ৭ জানুয়ারি, স্থানীয় সময় সকাল ১১:৩০ এ।
হামলার কারণ:
দীর্ঘদিন ধরে ইসলাম বিদ্বেষী এই ম্যগাজানটি বিশ্ব মুসলিমদের প্রাণের স্পন্দন রাসুল মুহাম্মদ (স.) কে নিয়ে ব্যঙ্গচিত্র অঙ্কন করে আসছিল। যার প্রতিবাদে বিশ্বব্যাপী মুসলিমরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

paki-PROTEST

পরে দুইজন নবী প্রেমিক যুবক ঐ বছরের ৭ জানুয়ারি ম্যাগাজিনটির কার্যালয়ে বন্দুক নিয়ে হামলা চালান। এসময় ঐ যুবকরা ম্যাগাজিনটির সম্পাদক ও নামকরা তিনজন কার্টুনিস্টসহ মানুষরূপী জগতের ১২ জন নিকৃষ্ট রুচির অপরাধীকে জাহান্নামে পাঠাতে সক্ষম হন।

মুমিনদের হৃদয় শীতলকারী বরকতময় উক্ত হামলাটি চালান আলজেরিয়ান বংশোদ্ভূত দুই ভাই, শরিফ এবং সাইদ। ঘটনার দুই দিন পরে ফ্রান্সের সন্ত্রাসী পুলিশ বাহিনী কর্তৃক আয়োজিত একটি অভিযানে তাঁরা শহিদ হন।

attackers3

বরকতময় এই হামলার প্রায় এক সপ্তাহ পর, আল-কায়েদা আরব উপদ্বীপ শাখা থেকে ঘটনার দায় স্বীকার করা হয়। এবং বলা হয় আমাদের দুই ভাইয়ের দ্বারা সংগঠিত উক্ত হামলার মাধ্যমে “নবী মুহাম্মদ (সা.) এর প্রতিশোধ নেওয়া হয়েছে।”

শাইখ নাসের আল-আনসারী, আল-কায়েদা আরব উপদ্বীপের অন্যতম নেতা, যিনি হামলার বিষয়ে এক ভিডিও বিবৃতিতে বলেছেন, “আমরা আরব উপদ্বীপের আল-কায়েদা সংগঠন হিসাবে এই অপারেশনের দায় স্বীকার করছি, যার মাধ্যমে আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তাআ’লার প্রেরিত রাসূল মুহাম্মাদ (সা.) এর প্রতিশোধ নেওয়া হয়েছে।”

তিনি আরও বলেন যে, বৈশ্বিক ইসলামি প্রতিরোধ বাহিনী আল-কায়েদার সর্বোচ্চ আমীর শাইখ আয়মান আজ-জাওয়াহিরি হাফিজাহুল্লাহ্-এর নির্দেশে এই বরকতময় হামলাটি চালানো হয়েছে।

OFFICE2

বরকতময় এই হামলার প্রথম দিনে এজেন্সিগুলোর সংকলিত তথ্য ছিল নিম্নরূপ:

– প্যারিসে রম্য ম্যাগাজিন শার্লি হেবদো-এর সদর দফতরে মুখোশধারী এবং সশস্ত্র হামলাকারীরা ৯ সাংবাদিক, দুই পুলিশ কর্মকর্তা এবং একজন প্রযুক্তিবিদ সহ ১২ জনকে হত্যা করেছে।

– প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন যে হামলাকারীরা তাকবীর উচ্চারণ করে এবং বলে, “আমরা নবীর প্রতিশোধ নিলাম।” দুই প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, হামলাকারীরা আল-কায়েদার সঙ্গে যুক্ত।

– প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, হামলাকারীরা বেশ শান্ত এবং পেশাদার চেহারার ছিল। তারা যেভাবে অস্ত্র ধারণ করছিল তাতে ধারণা দেওয়া হয়েছিল যে, তারা সামরিক প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। কিন্তু যখন তারা পত্রিকার কেন্দ্রে প্রবেশ করেন, তখন অফিসগুলো কোন তলায় ছিল সে বিষয়ে তারা এতটা নিশ্চিত বলে মনে হয়নি।

– কারণ তারা সেই বিল্ডিংয়ে গিয়েছিল যেখানে ম্যাগাজিনের আর্কাইভ আছে, রাস্তায়, যেখানে শার্লি হেবদো অবস্থিত। কেন্দ্র নয় বুঝতে পেরে তারা দুটি গুলি করে চলে যায়।

– যখন তারা ম্যাগাজিনের বিল্ডিং এ পৌঁছে, তখন তারা দরজা খুলতে একজন মহিলা কার্টুনিস্টকে কোড ব্যাবহার করে প্রবেশ করতে বাধ্য করেন।

– হামলাকারীরা ম্যাগাজিনটির অফিসে প্রবেশ করার পর কর্মচারীদের, বিশেষ করে প্রধান সম্পাদক স্টিফেন চারবোনিয়ারের নাম বলে চিৎকার করে গুলি শুরু করেন।

হামলায় নিহতদের বিবরণ:
– স্টিফেন চারবোনিয়ার – ৪৭ বছর বয়সী, শার্লি হেবদোর প্রধান সম্পাদক।

– জিন ক্যাবুট – ৭৬ বছর বয়সী – ম্যাগাজিনের প্রধান কার্টুনিস্ট।

– জর্জ ওলিঙ্কসি – ৮০ বছর বয়সী – কার্টুনিস্ট।

– বার্নার্ড ভার্লহ্যাক – ৫৭ বছর বয়সী – কার্টুনিস্ট।

– বার্নার্ড মারিস – ৬৮ বছর বয়সী – অর্থনীতিবিদ, ম্যাগাজিনের কলামিস্ট।

– ফিলিপ অনার – ৭৩ বছর বয়সী – ২২ বছর ধরে ম্যাগাজিনটির কার্টুনিস্ট।

– মিশেল রেনড – প্রাক্তন সাংবাদিক, যিনি হামলার আগে পত্রিকাটি পরিদর্শন করেছিল।

– মুস্তাফা ওরাদ – আলজেরিয়ান বংশোদ্ভূত ম্যাগাজিনের সম্পাদক।

– এলসা কায়াত – ম্যাগাজিনের কলামিস্ট এবং বিশ্লেষক।

– ফ্রেডেরিক বোইসো – অফিসের টেকনিশিয়ান।

– ফ্রাঙ্ক ব্রিনসোলারো – ৪৯ বছর বয়সী – পুলিশ অফিসার, ম্যাগাজিন বিল্ডিং পাহারা দেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া দলের প্রধান।

– আহমেদ মেরাবেত – ৪২ বছর বয়সী – ফরাসি পুলিশ অফিসার।

ফরাসিরা এমন এক অপরাধী জাতি, যারা শতাব্দির পোর শতাব্দী ধরেই ইসলাম, মুসলিম ও প্রিয় নবী মুহাম্মাদ (সা:)-কে নিয়ে ব্যাঙ্গ ও কটূক্তি করে আসছে। শেষ উস্মানি সুলতান আব্দুল হামিদ (রাহি:) এর শাসনামলেও তারা রাসুল (সা:) নিয়ে ব্যাঙ্গমূলক নাটক মঞ্চায়িত করতে চেয়েছিল। পরে খলীফা খবর পেয়ে ফ্রান্সকে যুদ্ধের হুমকি দিলে তারা ঐ নিকৃষ্ট কাজ থেকে সরে আসে।

ইসলাম, মুসলিম ও প্রিয় নবী মুহাম্মাদ (সা:)-কে নিয়ে ব্যাঙ্গ ও কটূক্তি করাকে তারা কথিত বাক স্বাধীনতা বলে চালানোর চেষ্টা করে। অথচ যখন ফরাসি প্রেসিডেন্ট বা খ্রিস্টান পোপকে নিয়ে কেউ ব্যঙ্গচিত্র আঁকে, তখন তাকে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করা হয় এবং চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়। – এই হলো তাদের কথিত বাক-স্বাধীনতার বাস্তবতা, ডাবল ষ্ট্যাণ্ডার্ড।

শার্লি হেবদোতে নবীপ্রেমী মুজাহিদ যুবকদের ঐ হামলা এটা প্রমাণ করে দিয়েছে যে, ইসলাম ও মুসলিমের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীরা কোন ভাষা বুঝে, এবং তাদেরকে কোন ভাষায় জবাব দেওয়াটা একমাত্র কার্যকরী উপায়।

4 মন্তব্যসমূহ

Leave a Reply to Giash uddin প্রতিউত্তর বাতিল করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধশুধুমাত্র কুরআন পাঠ করায় বয়োজ্যেষ্ঠ মুসলিমদেরও আটক করে বর্বর চীনা প্রশাসন
পরবর্তী নিবন্ধবেনিনে সামরিক কনভয়ে আল-কায়েদার হামলায় গাড়ি ধ্বংস, নিহত একাধিক