আফগানিস্তানের অর্থনীতি পুনর্গঠনে ইসলামি ইমারতের কৌশলী কার্যক্রম

সাইফুল ইসলাম

0
1461

দীর্ঘ ২০ বছর সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সশস্ত্র লড়াইয়ের পর ২০২১ সালের আগস্টে পুনরায় ক্ষমতায় আসে আফগানিস্তান ইসলামি ইমারত। একদিকে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ, পূর্ববর্তী দালাল সরকারের লুটপাট-দুর্নীতির কারণে ভঙ্গুর অর্থনীতি, অন্যদিকে চলমান দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র; এমন অবস্থাতেও দৃঢ়তার সাথে শাসনকার্য পরিচালনা করে যাচ্ছেন ইসলামি ইমারতের নেতৃবৃন্দ। ক্ষমতায় এসেই গরিব-দুঃখী মানুষের কষ্ট লাঘবে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছেন তাঁরা।

যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানের অর্থনীতি পুনর্গঠন ও গরিবদের সহায়তার লক্ষ্যে ইসলামি ইমারত বহু পদক্ষেপ নিচ্ছেন। তাঁদের কার্যক্রমের মধ্যে দুটি বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হচ্ছে—
এক. তাৎক্ষণিক সহায়তার মাধ্যমে অভাব দূরীকরণ
দুই. দীর্ঘমেয়াদে স্বাবলম্বী করে তোলার লক্ষ্যে সহায়তা কার্যক্রম

আফগানিস্তান ইসলামি ইমারতের সাম্প্রতিক কিছু সহায়তা কার্যক্রমের আলোকে এই বাস্তবতা উপলব্ধি করা যায়। ইসলামি ইমারতের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, আফগানিস্তানের ময়দান ওয়ার্দাক প্রদেশের বেহসুদ জেলায় গত ১৬ই ডিসেম্বর ১১৭২ নিঃস্ব পরিবারের মাঝে ৩৪ মিলিয়ন (৩ কোটি ৪০ লাখ আফগানি মুদ্রা) আফগানি নগদ অর্থ সহায়তা প্রদান করা হয়; বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ৪ কোটি ৪ লাখ ৪৯ হাজার ৮০০ টাকা।

প্রদেশটির স্থানীয় সরকারের তথ্যমতে, প্রত্যেকটি পরিবার পায় ২৯,০০০ আফগানি মুদ্রা। ডিআরসি নামে একটি সংগঠনের সরবরাহকৃত এই অর্থ অভাবীদের মাঝে ইসলামি ইমারতের স্থানীয় সরকারের সহায়তায় বিতরণ করা হয়।

এভাবে লোগার প্রদেশের দুটি জেলাতেও ৩,৪০০ অভাবী পরিবারের মাঝে খাদ্য সহায়তা বিতরণ করা হয়। প্রদেশটির পল্লী পুনর্বাসন ও উন্নয়ন বিভাগের স্থানীয় সরকারের বরাতে এ সংবাদ জানানো হয় ইসলামি ইমারতের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে।

সিবগাতুল্লাহ নাইব খেল বখতার নিউজ এজেন্সিকে জানান, বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (WFP)-এর সরবরাহকৃত খাবার ইসলামি ইমারতের পল্লী পুনর্বাসন ও উন্নয়ন বিভাগের সহায়তায় ৩৪০০ অভাবী পরিবারের মাঝে পৌঁছে দেওয়া হয়।

অন্যদিকে, বলখ প্রদেশের স্থানীয় কর্মকর্তাদের তথ্যমতে, প্রদেশটির কালদার জেলায় রাসায়নিক সার এবং ১০৬ টন খাবার বিতরণ করা হয়েছে।

ইন্টারন্যাশনাল অরগানাইজেশন ফর রিফিউজিস-এর আর্থিক সহায়তা নিয়ে জাবুল প্রদেশের ‍দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের মাঝে নগদ অর্থ এবং শীত-উপকরণ বিতরণ করেছেন। প্রদেশটির দশটি জেলা এবং রাজধানীর ৭৯৭টি পরিবারের মাঝে এই সহায়তা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রাকৃতিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রধান মোল্লা রেজা মুহাম্মাদ খালিদ।

সহায়তাকারী সংগঠনটির কর্মকর্তারা বলেছেন, প্রতিটি পরিবারকে এক জোড়া মোজা, শিশুদের জন্য চার জোড়া হাতমোজা, শিশুদের চার জোড়া টুপি, ৩ জোড়া কম্বল, একটি ব্যাগ, নগদ ২০০ মার্কিন ডলার এবং ভাড়াবাবদ ১৩০০ আফগানি মুদ্রা দেওয়া হয়েছে।

এগুলো ইসলামি ইমারতের তাৎক্ষণিক সহায়তা কার্যক্রম। এর মাধ্যমে নিঃস্ব পরিবারগুলো কিছুদিনের জন্য নিজেদের অভাব পূরণের সহায়তা পায়। একইভাবে দীর্ঘমেয়াদে যেন গরিব মানুষেরা স্বাবলম্বী হতে পারে, সেজন্যও সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনা করছেন ইসলামি ইমারত কর্তৃপক্ষ।

জাওযান প্রদেশের কৃষি, সেচ ও প্রাণিসম্পদ বিভাগের স্থানীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তাঁরা ফাইজ আবাদ জেলার আলি আবাদ গ্রামে ৮৩৫ মিটার দীর্ঘ একটি কৃষি সেচ খাল তৈরি করেছেন। এই খালটির মাধ্যমে ৮০০ হেক্টরের অধিক কৃষিজমিতে সেচ দেওয়া যাবে। এই সেচ খালটি তৈরি করতে ১২ মিলিয়ন আফগানি অর্থ খরচ হয়েছে।

পাকতিয়া প্রদেশের সায়েদ কারাম জেলায় ইপিডি ইন্সটিটিউটের সরবরাহকৃত সেলাই মেশিন ও সহায়ক উপকরণ শতাধিক নারীর মাঝে বিতরণ করা হয়েছে।

ইপিডি-এর প্রধান আসাদুল্লাহ নাজারি গণমাধ্যমকে বলেছেন, প্রত্যেক পরিবারকে ১৪,০০০ আফগানি অর্থমূল্যের সমপরিমাণ একটি প্যাকেজ সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। এই প্যাকেজে আছে একটি সেলাই মেশিন, একটি টেবিল, একটি চেয়ার, এক জোড়া কাঁচি, একটি ইলেক্ট্রিক ইস্ত্রি, একটি গ্যাসের চুলা এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপকরণ।

এর আগে সেলাই মেশিনসহ এই সহায়তা প্যাকেজটি পাকতিয়া প্রদেশের অন্য আরেকটি জেলার ১০০ নারীর মাঝেও বিতরণ করা হয়েছিল। এমন সহায়তায় খুশি প্রকাশ করেছেন নারীরা। তাঁরা মনে করেন, এটি গ্রামীণ অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে ভূমিকা রাখবে।

এভাবেই তাৎক্ষণিক অভাব দূরীকরণে সহায়তার পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদে যেন গরিব মানুষ স্বাবলম্বী হতে পারেন, সেজন্যও আফগানিস্তান ইসলামি ইমারত কার্যকরী পদক্ষেপ নিচ্ছেন। বিভিন্ন সেবা সংগঠনের সরবরাহকৃত সাহায্যগুলো পৌঁছে দিচ্ছেন মানুষের কাছে।

এছাড়া, আফগানিস্তানজুড়ে রাস্তাঘাট, ব্রিজ ইত্যাদি নির্মাণের মাধ্যমে অবকাঠামোগত উন্নয়নে ইসলামি ইমারত সচেষ্ট রয়েছেন। এটিও দেশের অর্থনীতির চাকাকে দীর্ঘমেয়াদে সচল রাখতে ভূমিকা রাখবে।

উল্লেখ্য, যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানের মুদ্রার মান কথিত স্বাধীনতার অর্ধশতাধিক বছর পার হওয়া বাংলাদেশের তুলনায় ভালো। এক্সচেঞ্জ রেটের তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে ১ আফগানি মুদ্রা সমান বাংলাদেশের ১.১৯ টাকা।



 লেখক : সাইফুল ইসলাম 

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধভারতে ১২ বছরের পুরানো মামলায় ৩৪ মুসলিমকে কারাদণ্ড
পরবর্তী নিবন্ধসোমালিয়ায় শাবাবের হামলায় ১৪ ইথিওপীয় সৈন্য নিহত, একটি শহর পুনরুদ্ধার