নবীজিকে (ﷺ) নিয়ে আপত্তিকর পোস্ট ও ‘দ্য কেরালা স্টোরির’ কুপ্রভাব

উসামা মাহমুদ

0
178
মহারাষ্ট্র পুলিশের প্রতিনিধি চিত্র। ছবি: পিটিআই

মহারাষ্ট্রের আকোলায় নবী (ﷺ) ও মুসলিমদের নিয়ে ইনস্টাগ্রামে একটি আপত্তিকর পোস্ট করে ‘ছত্রপতি সেনা’ নামক উগ্র হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীর নেতা করণ সাহু। আপত্তিকর ইনস্টাগ্রাম পোস্টের প্রতিবাদ করায় মুসলিম সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে সহিংসতা চালিয়েছে উগ্র হিন্দুরা। বিভিন্ন মিডিয়া রিপোর্টে ঘটনাটিকে সম্প্রতি মুক্তিপ্রাপ্ত প্রোপাগান্ডামূলক চলচ্চিত্র দ্য কেরালা স্টোরিকে দায়ী করা হয়েছে। এ ছবিটিতে কেরালা নিয়ে মুসলমানদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার চালানো হয়েছে।

১৩ মে, শনিবার গভীর রাতে কয়েক ঘণ্টা ধরে চলা এই সহিংসতায় এক পথচারীর মৃত্যু হয় এবং আরও অনেকে আহত হয়। এরপর থেকে পুলিশ ২৮ জনেরও বেশি যুবককে গ্রেপ্তার করেছে, যাদের বেশিরভাগই মুসলিম সম্প্রদায়ের।

জেলা প্রশাসন ফৌজদারি কার্যবিধির (CrPC)-এর ১৪৪ ধারা জারি করেছে – যা একটি এলাকায় চার বা তার বেশি লোকের সমাবেশ নিষিদ্ধ করে। রবিবার (১৪ মে) সকাল থেকে ইন্টারনেট পরিষেবাও ৪৮ ঘণ্টার জন্য বিচ্ছিন্ন করে দেয়।

সহিংসতার সূত্রপাত হয় আকোলা ‘ছত্রপতি সেনা’ নামক উগ্র হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীটির নেতা করণ সাহুর একটি ইনস্টাগ্রাম পোস্টের মাধ্যমে। সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে সাহুর ব্যাপক ফলোয়ার রয়েছে। মুসলিম সম্প্রদায় এবং নবীকে নিয়ে বিতর্কিত পোস্টটি ইনস্টাগ্রামে আপলোডের কিছুক্ষণের মধ্যেই হাজার হাজার লাইক, কমেন্ট পড়ে। এবং তার অনুসারীরা তাদের হ্যান্ডেলগুলিতেও এটি শেয়ার করা শুরু করে। রাতের দিকে ইনস্টাগ্রাম পোস্টটি মুসলিম সম্প্রদায়ের অনেকের কাছে পৌঁছেছিল এবং মুসলিম নেতারা কাছাকাছি রামদাসপেঠ থানায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।

“ইশার নামাজে শেষ করে অনেক মুসলিম পোস্টটি নিয়ে কথা বলে, এবং থানায় রওয়ানা দেয়। রওয়ানাকারীদের মাঝে একজন স্থানীয় মুসলিম জানান, ‘ইনস্টাগ্রাম পোস্টে আমাদের নবীকে অবমাননা করা হয়েছে, সাথে মুসলমানদের টার্গেট করার কথা জানানো হয়েছে। পুরো পোস্টটি উস্কানিমূলক ছিল এবং আমাদের অনুভূতিতে আঘাত করার অভিপ্রায়ে পোস্ট করা হয়েছে।’

অনেক আশা নিয়ে মুসলিমরা থানায় যাওয়ার পর পুলিশ তাদের অভিযোগ আমলে নিতে অস্বীকার করে। ফলে পরিস্থিতি কিছুটা ঘোলাটে হতে থাকে।

“কিছুক্ষণের মধ্যেই হিন্দু কুচক্রীমহল মুসলিমদের থানায় যাওয়া ঘটনাকে বিকৃত করে গুজব রটায়। যে মুসলিমরা হামলা চালানোর জন্য মন্দিরে প্রবেশ করেছে। জেলা পরিষদের সদস্য দ্বীনেশ্বর সুলতান বলেন, এ ধরনের কোনো ঘটনা না ঘটলেও, এটি হিন্দুদের মধ্যে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। এবং পার্শ্ববর্তী গলিতে একমাত্র মসজিদে প্রবেশ করে হামলা চালায়।

পথচারীর মৃত্যুর কারণ

হিন্দুদের হামলায় বিলাস গায়কওয়াড় নামে ৪০ বছর বয়সী এক ব্যক্তি নিহত হয়েছে। তাকে মুসলিম সন্দেহে খুন করা হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে, দলিত সম্প্রদায়ের অন্তর্গত গায়কওয়াড় একটি অটোরিকশা চালাচ্ছিল। যখন হিন্দু জনতা তাকে আক্রমণ করে, তখন “তিনি বারবার জনতাকে বলতে থাকেন যে তিনি মুসলিম সম্প্রদায়ের নন। কিন্তু কোন কিছুই বিক্ষুব্ধ হিন্দু জনতাকে থামাতে পারেননি। অন্য একজন বলেছেন যে, হিন্দুরা তার পরিচয় ভুল করার কারণ হল তার অটোরিকশাটিতে “কেজিএন” লেখা ছিল। কেজিএন মানে খাজা গরীব নওয়াজ ওরফে খাজা মঈনুদ্দিন চিস্তি, যিনি একজন সম্মানিত মুসলিম বুযূর্গ ছিলেন। যাকে মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে অনেকেই শ্রদ্ধা করে।



 

তথ্যসূত্র:
1. One Dead, Several Injured in Communal Violence in Maharashtra’s Akola Over Instagram Post (The Wire)
https://tinyurl.com/4psf7hfb

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধ‘থুক জিহাদের’ অভিযোগে দিল্লিতে জুসের দোকানে বজরং দলের হানা
পরবর্তী নিবন্ধমোল্লা আখতার মোহাম্মদ মানসুর (রহ.) : ইমারাতে ইসলামিয়ার দুঃসময়ের কাণ্ডারি