ঢাকার বাতাস খুবই অস্বাস্থ্যকর

0
869
ঢাকার বাতাস খুবই অস্বাস্থ্যকর

বায়ুর মানদণ্ডে সারা বিশ্বের মধ্যে ঢাকা খুব বাজে অবস্থানে আছে। বৈশ্বিক র‌্যাঙ্কিংয়ে কখনো প্রথম, কখনো দ্বিতীয় অবস্থানে থাকছে ঢাকা। র‌্যাঙ্কিংয়ে পাল্লা দিচ্ছে পাকিস্তানের সঙ্গে। বায়ুর দূষিত অবস্থা সহনীয় মাত্রার চেয়ে কখনো কখনো সাড়ে ছয় গুণ ছাড়িয়ে যায়।
বিশ্বের বায়ুদূষণ পর্যবেক্ষণকারী যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা এয়ার ভিজ্যুয়ালের পর্যবেক্ষণ (এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স) অনুযায়ী, আজ শনিবার দুপুর আড়াইটার দিকে রাজধানীর বায়ুর মান ছিল ২৩৫, যাকে বায়ুমান সূচকে অস্বাস্থ্যকর বলা হয়। বায়ুদূষণের দিক থেকে এখন বিশ্বে দ্বিতীয় অবস্থানে বাংলাদেশ। দিনভর প্রথম অবস্থানে আছে পাকিস্তানের লাহোর, তৃতীয় অবস্থানে ভারতের দিল্লি। চতুর্থ ও পঞ্চম অবস্থানে ছিল ভিয়েতনামের হেনয় শহর।

গবেষকেরা বলছেন, ঢাকার এমন বায়ু স্বাস্থ্যের ওপর নানাভাবে প্রভাব ফেলছে। ফুসফুসের নানা রোগ, নিউমোনিয়া, অ্যাজমা, শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন জটিলতায় পড়ছে ঢাকাবাসী।

এয়ার ভিজ্যুয়ালের বায়ুদূষণ পর্যবেক্ষণ যন্ত্র দিয়ে বায়ুর মান মাপা হয়। মূলত বাতাসে অতি সূক্ষ্ণ বস্তুকণা পিএম-২.৫–এর পরিমাণ পরিমাপ করে বায়ুর মান নির্ধারণ করা হয়। এয়ার ভিজ্যুয়ালের হিসাবে, বায়ুর মান ০ থেকে ৫০ থাকলে ওই স্থানের বায়ু ভালো। আর মান ২০০ থেকে ৩০০–এর মধ্যে থাকা মানে খুবই অস্বাস্থ্যকর। বায়ুর মান ৩০০–এর বেশি থাকা মানে ওই স্থানের বায়ু ‘বিপজ্জনক’। এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সের হিসাবে, ঢাকার বায়ুর মান শুক্রবার রাত নয়টার দিকে ৩৩২ উঠেছিল।

বায়ুদূষণ নিয়ে কাজ করা গবেষক ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, ঢাকার বায়ুদূষণের অন্যতম উৎস হচ্ছে ধুলাবালি। এসব ধূলিকণা মুখে গেলে মানুষ যত্রতত্র থুতু ও কফ ফেলে। তা আবার ধুলার সঙ্গে মিশে নানা মাধ্যমে মানুষের শরীরে ঢুকতে পারে। আরেকটি উৎস হচ্ছে কয়লা ও জৈব জ্বালানি পোড়ানোর পাশাপাশি শহুরে যান্ত্রিকসহ নানা উৎস থেকে সৃষ্ট ধোঁয়া ও ধুলা। এসব বাতাসে ক্ষুদ্র কণা ছড়ায়, যা মানবস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।

ঢাকার ধুলা-দূষণ নিয়ে স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) একটি গবেষণা আছে। তাতে দেখা গেছে, ঢাকা শহরের গাছপালায় প্রতিদিন ৪৩৬ মেট্রিক টন ধূলিকণা জমে। সেই হিসাবে প্রতি মাসে ১৩ হাজার মেট্রিক টন ধুলা জমার হিসাব পেয়েছেন গবেষকেরা। এই জমে থাকা ধুলা দিনের বেলা বাতাসের সঙ্গে মিশে যেমন দূষণ বাড়ায়, তেমনই রাতে গাড়ির অতিরিক্ত গতির সঙ্গে বাতাসে উড়তে থাকে। ফলে দিনের বেলার চেয়ে রাতের বেলায় বায়ুদূষণের মাত্রা বেড়ে যায়। ঢাকার চারটি পার্ক ও উদ্যানে বিভিন্ন প্রজাতির ৭৭টি গাছের পাতা সংগ্রহের পর বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে এই গবেষণা পরিচালনা করে ক্যাপসের গবেষক দল।

ক্যাপসের গবেষকেরা বলছেন, ঢাকার বায়ুর মান ডিসেম্বর মাসজুড়েই খারাপ অবস্থায় ছিল। আর জানুয়ারিতে এটি আরও খারাপ হয়েছে। ২০১৬ থেকে ২০২১ সালের জানুয়ারি, এই পাঁচ বছরের জানুয়ারি মাসের তুলনামূলক চিত্রে এ বছরই ঢাকার বায়ুর মান সর্বনিম্নে। চলতি বছরের প্রথম ২২ দিনের মধ্যে ১৬ দিনই ঢাকার বায়ুর মান বিপজ্জনক ছিল। এমন অবস্থা চলতে থাকলে বায়ুদূষণ নিয়ে যেসব দেশ চিন্তিত, তারা জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে।

ক্যাপসের পরিচালক আহ্‌মদ কামরুজ্জামান মজুমদার আজ দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, দুই কারণে ঢাকার বায়ু বেশি দূষিত। প্রথমটি হচ্ছে বাতাসের দূষিত উপাদান বাতাসেই রয়ে যাচ্ছে। শহরে বড় প্রকল্পের কাজ, নির্মাণাধীন ভবনের কাজ, যানবাহনের ধোঁয়ায় ঢাকার বায়ুর চাপ বেশি। এই দূষিত অংশ বায়ুর নিম্নস্তরে ২০০–৩০০ ফুট ওপরে অবস্থান করছে। ফলে বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে এখনই জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রথম আলো

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধকরোনার টিকা না নিতে পালিয়ে বেড়াচ্ছে ভারতের স্বাস্থ্যকর্মীরা
পরবর্তী নিবন্ধএবার গ্যাস–সংকটে চুলা বন্ধ