গত ১০ই এপ্রিল, মধ্যপ্রদেশ, গুজরাট, ঝাড়খণ্ড, পশ্চিমবঙ্গ, গোয়া এবং মুম্বাইতে মুসলমানদের বিরুদ্ধে সহিংসতা চালায় উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা।
হিন্দু দলগুলি রাম নবমী উদযাপনের নামে মুসলিমদের উপর তান্ডব চালায়।
গুজরাটের হিম্মতনগর:
গত ১০ই এপ্রিল রবিবার, আনুমানিক ১:৩০টার দিকে প্রায় ৫০০-৬০০ লোকের একটি হিন্দু সমাবেশ উত্তর গুজরাটের হিম্মতনগরের মুসলিম অধ্যুষিত পাড়ায় প্রবেশ করে। স্থানীয়দের মতে এবং ভাইরাল হওয়া ভিডিওগুলি অনুসারে, সমাবেশের হিন্দুত্ববাদীরা আশরাফ নগরে মুসলিমদের ভয় দেখাতে তরবারি হাতে উস্কানিমূলক গান বাজাতে থাকে।
“যখন র্যালিটি আশেপাশে এসে পৌঁছায়, তারা মসজিদের সামনে থামে এবং উচ্চস্বরে উস্কানিমূলক সঙ্গীত বাজানো শুরু করে। তারা তাদের হাতে তলোয়ার নিয়ে নাচছিল – মুসলিম মহিলারা তাদের বারান্দায় ছিলেন। সমাবেশের হিন্দুত্ববাদীরা মুসলিম নারীদের গালিগালাজ শুরু করে। এক পর্যায়ে তারা মুসলিমদের উপর হামলা শুরু করে।”
একজন বাসিন্দাকে বলেছেন, “তারা জানত যে ১:৩০ টায় মুসলিম পুরুষরা মসজিদে নামাজ পড়বে, তারা ইচ্ছাকৃতভাবে মুসলিম বিরোধী গান বাজিয়েছে এবং স্লোগান দিয়েছে।”
“তাদের হাতে তলোয়ার ছিল, তারা গালিগালাজ করছিল, এমনকি তারা যে জীপে যাচ্ছিল সেই জিপে তাদের লাঠি ও তলোয়ার ছিল, পুলিশও ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল কিন্তু তারা কোন বাধা দেয় নি। সেই হিন্দুত্ববাদীরা তাদের জীপ থেকে নেমে মুসলমানদের উত্তেজিত করতে থাকে।
রাম নবমী মিছিলটি ছাপারিয়ার রামজি মন্দির থেকে আশরাফ নগরের দিকে আবার বিকেল ৪:০০ টার দিকে, তলোয়ার উঁচিয়ে এবং মুসলিম বিরোধী স্লোগান দিতে শুরু করে। এলাকার মুসলমানরা উসকানিতে আপত্তি জানায় এবং তাদের উসকানি বন্ধ করার জন্য অনুরোধ করে, কিন্তু হিন্দুত্ববাদীরা মুসলমানদের গালিগালাজ ও আক্রমণ শুরু করে। “এবারও পুলিশ সমাবেশের সাথে ছিল, তারা উস্কানি বন্ধ করেনি।
বিশ্ব হিন্দু পরিষদ এবং বজরং দলের হিন্দুত্ববাদীদের নেতৃত্বে হিন্দু জনতা মুসলমানদের দোকান এবং বাড়ি ও গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারিত ভিডিওগুলিতে হিন্দু জনতাকে জয় শ্রী রাম স্লোগান তুলতে এবং টিয়ার গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করতে দেখা যায়। নিরাপত্তার জন্য পুলিশ হিন্দুত্ববাদীদের ঘেরাও করে পাহারা দিতেও দেখা যায়।
আশরাফ নগরে অবস্থিত তাকিয়া মসজিদেও অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুর করা হয়। এই মসজিদটি হিম্মতনগরের বিজেপি বিধায়ক রাজেন্দ্রসিংহ চাভদার অফিস থেকে প্রায় পাঁচ মিটার দূরে অবস্থিত।
“ভয়ে দিন কাটাচ্ছে গুজরাটের মুসলিমরা” :
স্থানীয়দের একজন বলেছেন যে পুরো সহিংসতাটি পরিকল্পিত ছিল এবং পুলিশ এটি সম্পর্কে আগেই জানতো।
“যদি বিকাল ৪টায় সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয়, তাহলে কেন রাত দেড়টায় এই সমস্ত হিন্দুত্ববাদীরা তলোয়ার নিয়ে এসে মুসলিমবিরোধী উত্তেজক গান বাজিয়েছিল? কেন পুলিশ তাদের বাধা দেয়নি,” স্থানীয় একজন জিজ্ঞাসা করেন।
যে ভিডিওগুলি প্রচার হয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে যে, হিন্দু উগ্র জনতা তেলের ব্যারেল নিয়ে এসেছে এবং গুজরাটি ভাষায় “আগুন জ্বালিয়ে দাও” বলতে শোনা যায়।
স্থানীয়দের আরও দাবি, পুলিশ হিন্দু জনতার বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি, জনতা হাতে তলোয়ার নিয়ে নাচছিল এবং পুলিশ নীরব দর্শকের মতো দাঁড়িয়ে ছিল।
হিম্মতনগর থেকে ১৬৭ কিলোমিটার দূরে গুজরাটের খাম্বাত শহরেও এই ধরনের সহিংসতা চালানো হয়েছে।
স্থানীয় একজন বলেছেন “গুজরাটের মুসলমানরা নিরাপদ বোধ করেন না, আমরা কারো নাম প্রকাশ করতে চাই না- অন্যথায় আমাদের জন্য এখানে থাকা কঠিন হয়ে পড়বে। আমরা গুজরাট ছেড়ে অন্য কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই।”
অন্যান্য রাজ্যেও অনুরূপ ঘটনাগুলো ঘটেছে। ফলে সহজেই বলা যায়, সবগুলো সহিংসতা একই সূূত্রে গাথা।
একজন স্থানীয় বলেছেন, “আমরা সহিংসতার পূর্বাভাস দিয়েছিলাম, এটি হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের দ্বারা পরিকল্পিত ছিল, এটি অন্যান্য রাজ্যেও ঘটেছে, এটি এখানে ঘটতে বাধ্য, আমরা কিছুই করিনি, আমরা সমস্যায় আরো পড়তে চাই না – এখানকার পরিবেশ খুবই সংকটজনক, পুলিশ মুসলমানদের তুলে নিচ্ছে, আমরা এ ব্যাপারে কিছু করতেও পারছি না।”
ভারতে মুসলিম গণহত্যার বাস্তবায়ন এখন দন দিন স্পষ্ট রূপ নিচ্ছে। এমন ন্সজুক পরিস্থিতিতে মুসলিমদের জন্য তাই নববী মানহাজ অনুযায়ী নিজেদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করা ব্যতীত বিকল্প কোন পথ দেখছেন না ইসলামী চিন্তাবীদগণ।
তথ্যসূত্র:
1. Police watched Hindutva mob’s violence unfold: Muslims in Gujarat’s Himmatnagar
– https://tinyurl.com/r5swhder
– https://tinyurl.com/352ehnyr
2. Ramdhun played in front of mosque, then war started, police stopped speaker
– https://tinyurl.com/2p92m93f
3. In pictures: Victims of Islamophobic violence in Rajasthan
– https://tinyurl.com/2s76wfxe