নাগরিকত্বের সাম্প্রদায়িক বিল: ভারতীয় মালাউন শাসকরা ভারতকে কোন দিকে নিয়ে যাচ্ছে?

1
972
নাগরিকত্বের সাম্প্রদায়িক বিল: ভারতীয় মালাউন শাসকরা ভারতকে কোন দিকে নিয়ে যাচ্ছে?

সম্প্রতি ভারতের নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল নামে একটি আইন লোকসভায় পাশ হওয়ার পর থেকে ভারতজুড়ে বিক্ষোভ-আন্দোলন চলছে। এ আইনে বলা হয়েছে, ভারতের প্রতিবেশি দেশ- বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে যেসব শরণার্থী ভারতে আশ্রয় নেবে তারা যদি হিন্দু, জৈন, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী হয় তবে তাদের ভারতের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। তবে মুসলিম শরণার্থীদের সে ‘সুযোগ’ দেওয়া হবে না।

ধর্মনিরপেক্ষতার দাবিদার ভারতের এই আইনটিকে সাম্প্রদায়িক ও বৈষম্যপূর্ণ আইন হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়েছে পশ্চিমা বিভিন্ন দেশের পক্ষ থেকে। ভারতের ভেতরে কট্টর হিন্দুত্ববাদী সাম্প্রদায়িক ক্ষমতাসীন দল বিজেপি ছাড়া কংগ্রেসসহ অন্য সব দল এ আইনের বিরুদ্ধে কথা বলছে। কোনো কোনো দল আন্দোলনেরও ঘোষণা দিয়েছে। তারা বলছে, আইনটি শুধু মুসলিমবিরোধী বা সাম্প্রদায়িক বৈষম্যের দোষেই দুষ্ট নয়, এটি ভারতের সংবিধানেরও পরিপন্থি। সংক্ষেপে এই আইনটিকে বলা হচ্ছে ক্যাব।

অনেকেই মনে করছে, বিতর্কিত নাগরিকত্ব বিলটি আনা হয়েছে সম্প্রতি আসামসহ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে চালু করা এনআরসি বা নাগরিকপুঞ্জি নামক নতুন একটি পদক্ষেপের সম্পূরক হিসেবে। কারণ ওই আইনে যেসব হিন্দু ধর্মাবলম্বী নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত হবে-এই ক্যাব-এর জোরে তারা ভারতের নাগরিক হয়ে যেতে পারবে। পক্ষান্তরে এনআরসিতে যেসব মুসলমানকে  নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত করা হবে, তারা আর কোনোভাবেই ভারতে অবস্থানের বৈধ অধিকার পাবে না। চলতি ডিসেম্বর মাসের শুরু থেকে বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে শত শত ভারতীয় মুসলিম নর নারীকে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টার খবর গণমাধ্যমে এসেছে।

অপরদিকে এই বিলটি পাশ করানোর সময় ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সন্ত্রাসী অমিত শাহ তার বক্তব্যে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে হিন্দু নির্যাতনের অভিযোগ করে তাদের (হিন্দুদের) ভারতে আশ্রয় নেওয়ার ‘যৌক্তিকতা’ তুলে ধরেছে। এই বক্তব্য ও এই সাম্প্রদায়িক নাগরিকত্বের আইনটি নিয়ে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এ আইনের মাধ্যমে বাংলাদেশসহ অপরাপর মুসলিম দেশগুলোতে বসবাসরত হিন্দুদের নাগরিকত্বের একটি পা ভারত নিজের দিকে টেনে নিয়ে গেছে। এ সব দেশের হিন্দুদের জন্য দ্বৈত নাগরিকত্ব এবং ভারতের প্রতি হিন্দুদের নির্ভরতা ও আনুগত্যের নতুন একটি পোস্ট বসানো হয়েছে। এতে করে গোটা উপমহাদেশেই একটি ধর্মকেন্দ্রিক অস্থিরতা ও বিদ্বেষ তৈরির পথ খুলে দেওয়া হয়েছে।

এ আইনের ফলে লাখো লাখো শুধু নয়, কয়েক কোটি ভারতীয় মুসলিম নাগরিককে এনআরসির মাধ্যমে প্রথমে নাগরিকত্ব বঞ্চিত করতে পারলে পরের ধাপে আশপাশের মুসলিম দেশগুলোতে তাদের ঠেলে দেওয়ার নষ্ট খেলায় নামতে পারে ভারত। সে আলামত ও আশংকা ভারতজুড়েই এখন চলমান। এ জন্য আসাম, পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, মেঘালয়সহ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে তুমুল বিক্ষোভ চলছে। দিল্লিতেও এ বিক্ষোভের আগুন ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিবেশি দেশগুলোর মধ্যে ভারতের এই আইনের কঠোর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে পাকিস্তান। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী একবার প্রতিবাদী একটি বক্তব্য দিলেও আনুষ্ঠানিকভাবে বলা হচ্ছে, এটি ভারতের অভ্যন্তরীন বিষয়। বাংলাদেশ হিন্দুঘেষা সরকার চায় না ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের কোনো টানাপোড়েন সৃষ্টি হোক।

কোন দিকে যাচ্ছে ভারত? ভারতের মুসলমানদের জীবনের সামনে কী আছে? এ আইনের ফলে বাংলাদেশে কী কী সংকট তৈরি হতে পারে-এসব প্রশ্ন নিয়ে গভীর উদ্বেগে আছে দেশের প্রায় সব চিন্তা ও পক্ষের নাগরিকরা। দেশে সরকারের মন্ত্রীরা ‘স্বস্তি মেশানো’ কথা যাই বলুক, ভেতরের কথা হলো, সরকারের ভেতরেও ভারতের এ জাতীয় সাম্প্রদায়িক পদক্ষেপ নিয়ে নানামাত্রিক ভাবনা-চিন্তা চলছে। সম্প্রতি দু’জন মন্ত্রীর ভারত সফর স্থগিত করা আবার সে সফর হবে বলে ঘোষণার মধ্যে অনেকেই সেই ভাবনা-চিন্তার আলামত খুঁজে পাচ্ছেন। বাস্তবে ভারতের এ জাতীয় সাম্প্রদায়িক আইনি পদক্ষেপের অপ-ফসল থেকে বাংলাদেশ যে কোনো ভাবেই মুক্ত থাকবে না- এটা বুঝতে কারোরই বেগ পেতে হচ্ছে না।

সূত্র: ইসলাম টাইমস/ শরীফ মুহাম্মদ

১টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধভারতের মুসলিমবিরোধী নাগরিকত্ব আইন ঘৃণাব্যঞ্জক ও বৈষম্যমূলক:- আল্লামা কাসেমী
পরবর্তী নিবন্ধঘৌর প্রদেশে তালেবান মুজাহিদদের হামলায় ২০ মুরতাদ সদস্য নিহত, আহত ১২