বেসরকারি খাতের সাউথইস্ট ব্যাংকের ১২০ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে ভারতে পালিয়েছে বাংলাদেশি আগারওয়ালা নামের এক দম্পতি। এরা হল গোপাল আগরওয়ালা ও তার স্ত্রী দীপা আগরওয়ালা। উভয়ই সাউথইস্ট ব্যাংকের নওগাঁ শাখার গ্রাহক। জেএন ইন্ডাস্ট্রিজ এবং শুভ ফিড প্রসেসিং নামে তাদের নামসর্বস্ব দুটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ২০১৯ সালের ৭ জুলাই চিরতরে ভারতে চলে গেছে। বর্তমানে তারা পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়ি সেবক রোডে বসবাস করে। এ দম্পতির ছেলে রাজেন আগরওয়ালা এবং মেয়ে উমা আগরওয়ালাকে আগেই ভারতে স্থায়ীভাবে বসবাস জন্য পাঠিয়েছিল।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেছে, ব্যাংক খাতে এ ধরনের ঘটনার কারণ হলো সুশাসনের অভাব। সুশাসন না থাকায় ব্যাংকের ভেতরের লোকজনের সঙ্গে যোগসাজশে এসব ঋণ দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে যে যোগ্য নয়, সেও ঋণ পায়, আবার যে পরিমাণ পাওয়ার যোগ্য তার চেয়ে বহুগুণ দেওয়া হয়। শেষ পর্যন্ত বিদেশে টাকা পাচার, পালিয়ে যাওয়া বা টাকা মেরে দেওয়া হয়। তিনি বলেন, ব্যাংকের টাকা খেয়ে ফেললেও বর্তমানে কোনো শাস্তি নেই। উলটো পুরস্কার দেওয়া হয়।
গোপাল আগারওয়ালা বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলার জগন্নাথ নগরে জেএন ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড নামে অটোরাইস মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। স্ত্রী দীপা আগারওয়ালা একই স্থানে ‘মেসার্স শুভ ফিড প্রসেসিং’ নামের একটি নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের মালিক। ২০১৬ সালের ৫ সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৯ সালের ১৮ মার্চ পর্যন্ত নিজ নামে সাউথ ইস্ট ব্যাংকের নওগাঁ শাখা থেকে ৩ কিস্তিতে ৭৫ কোটি টাকা এবং দীপা আগারওয়ালা ২ কিস্তিতে ২৫ কোটি টাকা ঋণ নেয়। গোপালের নিজ নামে নেওয়া ৭৫ কোটি টাকার মধ্যে ওডি (ওভার ড্রাফট) ঋণ ৫০ কোটি, মেয়াদি ঋণ ১০ কোটি এবং টাইম লোন ১৫ কোটি টাকা। আবার স্ত্রীর নামে নেওয়া ২৫ কোটি টাকার মধ্যে ওডি ২০ কোটি এবং টাইম লোন ৫ কোটি টাকা। ঋণ নেওয়ার সময় বগুড়ায় ৪৩৪ শতক ও দিনাজপুরে ৪০১ দশমিক ৫০ শতক জমি বন্ধক দিয়েছেন। বর্তমানে সুদসহ তা ১২০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে।
জানা গেছে, নওগাঁ শহরের লিটন ব্রিজ এলাকায় আগরওয়ালের ৪ তলা একটি বাড়ি রয়েছে। ভারতে যাওয়ার আগে বাড়িটি ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর কৃষ্ণ কনসাসনেস বা ইসকনকে দিয়ে গেছে।
গোপাল আগরওয়ালার ছোট দুই ভাই রাজকুমার আগরওয়ালা ও সুরেশ আগরওয়ালা বগুড়ার দুপচাঁচিয়ায় ব্যবসা করে। তারা বসবাস করে নওগাঁ শহরে। গোপাল আগরওয়ালার তিন শ্যালক সুভাস পোদ্দার, দিলীপ পোদ্দার এবং প্রদীপ পোদ্দার বগুড়ার তালোরায় থাকছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, শ্যালকদের সঙ্গে এ দম্পতির ভালো সম্পর্ক ছিল। এছাড়া ব্যাংক কর্মকর্তাদের সঙ্গেও শ্যালকদের চলাফেরা ছিল।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, এ দম্পতি নওগাঁর বড় কোনো ব্যবসায়ী নয়। এরপর সাউথ ইস্ট ব্যাংক কর্তৃপক্ষ অযৌক্তিকভাবে স্থাবর সম্পদের চেয়ে বহুগুণ বেশি অর্থ ঋণ দিয়েছে। আর এ ঋণের টাকা ভারতে পাচার করা হয়েছে। তারা নিজেরাও এখন ভারতে।
জানতে চাইলে ব্যাংকটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও বর্তমান পরিচালক এমএ কাশেম যুগান্তরকে বলেনকে, শুধু নওগাঁ নয়, আরও কয়েকটি ব্রাঞ্চে এরকম ঘটনা রয়েছে। এর মধ্যে পাবনা এবং চট্টগ্রাম অন্যতম। তিনি বলেন, ঘটনা আমরাও কিছুটা জানি। তিনি আরও বলেন, ব্যাংক যে ঋণ দেয়, তা উদ্যোক্তাদের টাকা নয়। এগুলো গ্রাহকের আমানতের টাকা।