ভারতের গুজরাটের শেরা গ্রামে ৩৫ বছর বয়সী বাসিন্দা মোহাম্মদ আতাউল্লাহ। গত (২২/০২/২২) মঙ্গলবার কাজ শেষে বাড়ি ফেরার সময় উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা “সন্ত্রাসী” আখ্যা দিয়ে বেদম মারধর করেছে।
মুহাম্মদ আতাউল্লাহ, যিনি একটি মোটরসাইকেল মেরামতের দোকান চালান। তিনি যখন কাজ শেষে বাড়ি ফিরছিলেন, তখন হিন্দুত্ববাদী হামলাকারীরা তাঁর গাড়ি থামিয়ে দেয়। তার মধ্য থেকে ৩-৪ জন লোক বেরিয়ে এসে তাকে মারধর শুরু করে।
অন্তত নয়জন হিন্দুত্ববাদী লোকের একটি উগ্র দল গোদরার সেতুতে আতাউল্লাহর গাড়িতে পাথর ছুঁড়ে মারধর করে এবং তাকে জয় শ্রী রাম বলতে বাধ্য করে। পরে আবার হামলাকারীরা উল্টো আতাউল্লাহর বিরুদ্ধেই এফআইআর করে।
মুহাম্মদ আতাউল্লাহ মাকতুব মিডিয়াকে জানিয়েছেন, “আমি ভিকটিম এবং তারা এখন আমাকেই অপরাধী হিসেবে উপস্থাপন করছে। আমি আমার শরীরকে নড়াচড়া করতে পারছি না এবং এই অবস্থায় হিন্দুত্ববাদীরা আমাকে গ্রেপ্তার করতে এসেছে।”
মুহাম্মদ আতাউল্লাহ বলেছেন,মাথায় আঘাত ও মুখে ঘুষি মারা হয়। “তারা আমার দাড়ি টেনেছে। তারা আমাকে গালিগালাজ করেছে এবং আমাকে আতঙ্কবাদী [সন্ত্রাসী] বলেছে।”
আতাউল্লাহ আরও বলেন, তাকে জয় শ্রী-রাম বলতে বাধ্য করা হয়। “আমি প্রত্যাখ্যান করলে, তাদের মধ্যে একজন গাড়িতে যায়, একটি রিভলভার পায় এবং রিভলভারের বাট দিয়ে আমাকে আঘাত করে। তারপর সে আমার মাথায় রিভলভার ঠেকিয়ে আমাকে হুমকি দেয়- আমি যদি “জয় শ্রী রাম” না বলি, তাহলে সে আমাকে মেরে ফেলবে। সে চিৎকার করে বলেছিল যে, আমার এখানে [ভারতে] থাকার অধিকার নেই এবং আমি এখানে খাই এবং এখানে বাস করি এবং জয় শ্রী রাম জপ করি না।
“আমি এখন তিন দিন ধরে হাসপাতালে শুয়ে আছি। মাথায় এবং ডান পায়ে বেশি আঘাত রয়েছে যাতে ব্যান্ডেজ করা হয়েছে।
তারা মামলা ফিরিয়ে নিতে চাপ দেয়। আমরা না করাায়, এখন তারা আমার বিরুদ্ধে পাল্টা এফআইআর দায়ের করেছে।
আতাউল্লাহর চাচাতো ভাই মোহাম্মদ ইলিয়াস (৪০) জানান, এ ঘটনায় লোক দেখানোর জন্য পুলিশ এ পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে। “আমি ভীত যে তারা শীঘ্রই তাদের ছেড়ে দিবে। তিনজনের মধ্যে একজন স্থানীয় হিন্দুত্ববাদী বিজেপি নেতার ভাগ্নে”।
মিডিয়ার পক্ষ থেকে বিজেপি নেতা ও হামলাকারীদের নাম জানতে চাইলে ইলিয়াস হামলাকারীদের ভয়ে ও পরিবারের ক্ষতির আশঙ্কায় উত্তর দিতে রাজি হননি।
আতাউল্লাহর বাবা আমির আলম(৬০) বলেন, “এটি একটি লিঞ্চিংয়ের মতো ছিল।” “তারা আমার ছেলেকে হঠাৎ রাস্তায় আক্রমণ করেছে। আমার ছেলে পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী সদস্য। সে যা করেনি তার জন্য তারা তাকে গ্রেফতার করা হতে পারে। আমি জানি না কীভাবে আমরা এর মধ্য দিয়ে বেঁচে থাকব।
আতাউল্লাহ তার পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী সদস্য যার মধ্যে তার স্ত্রী, চার সন্তান রয়েছে; এক মেয়ে এবং তিন ছেলে, সবার বয়স ২-১০ বছরের মধ্যে। আছেন বাবা এবং মা।
ভারতে মুসলিমদের এখন এমন অবস্থা দাঁড়িয়েছে যে, যেকোনো সময় যে কেউ উগ্র হিন্দুদের হামলায় আহত বা নিহত হতে পারে, সর্বময় ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ও হচ্ছে ইসলাম ও মুসলিমদের প্রতি ঘৃণা ও জিঘাংসার বিষবাষ্প। এর এই পরিস্থিতিকেই গণহত্যা শুরুর ঠিক আগের অবস্থা বলেছেন ডঃ স্ট্যান্টন ও নোয়াম চমস্কি’র মতো আরও কিছু নিরপেক্ষ বিশ্লেষকও। এই স্তর থেকেই যেকোনো মুহূর্তে শুরু হয়ে যেতে পারে মুসলিম গণহত্যা।
বিশেষজ্ঞরা তাই বলছেন, মুসলিমদের নিজেদের আত্মরক্ষার প্রস্তুতি নেওয়ার এখনি উপযুক্ত সময়।
তথ্যসূত্র:
1. Called “terrorist,” Muslim man beaten in Gujarat
https://tinyurl.com/rn34ndp5