শেখ হাসিনার নতুন রেসিপি: গোশতের বদলে কাঁঠাল

1
1612

বাংলাদেশের কথিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন সময় নানা ধরনের খাবার রেসিপি নিয়ে হাজির হচ্ছে দেশের মানুষের সামনে। এবার গোশতের পরিবর্তে কাঁঠাল ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়েছে সে। গাজীপুরে শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অনুষ্ঠানে কাঁঠালের বহুমুখী ব্যবহার নিয়ে কথা বলার সময় নতুন এই রেসিপি শেখায় শেখ হাসিনা!

হাসিনা বলেছে, “এই অঞ্চলে (গাজীপুরে) প্রচুর কাঁঠাল উৎপন্ন হয়। উন্নত বিশ্বে এখন মাংস খেতে চায় না। তারা মাংসের পরিবর্তে কাঁঠালের তৈরি কাবাব, বার্গার, রোল ইত্যাদি খাচ্ছে। কাঁঠালের তৈরি এসব খাবারের দামও কিন্তু অনেক বেশি। এসব খাবারের ব্যাপক চাহিদাও রয়েছে। আমাদের দেশের উচ্চবিত্তরা বার্গার, রোল জাতীয় খাবার খেতে পছন্দ করেন।”

তাই এসব খাবারে গোশতের পরিবর্তে কাঁঠাল ব্যবহারের পরামর্শ দেয় শেখ হাসিনা। সে আরও বলে, “আমাদের এখন অনেকেই ভেজিটেরিয়ান হয়ে গেছে। মাছ খায় কিন্তু মাংস খায় না। তাদের জন্য বিকল্প কাঁঠাল।”

মানুষ গোশত খায় না, নাকি খেতে পারে না? গোশত কেনার সামর্থ্য যে দেশের মানুষের নেই, সেটা দেখেও না দেখার ভান করে থাকে হাসিনা সরকার। বর্তমানে দেশে গরু-ছাগলের গোশতের দাম পূর্বের তুলনায় অনেক বেড়েছে। ২০১৪ সালে গরুর গোশতের দাম ছিল ৩০০ টাকা। কয়েক মাস আগেও দাম ছিল ৫০০ টাকার মধ্যে। এখন গরুর গোশত বিক্রি হচ্ছে ৭০০ টাকার আশেপাশে।

ভারত থেকে গরু আসা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর দেশে গরু-ছাগলের খামার বেশ বিস্তৃতি লাভ করেছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার ২০১৭ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গরু, ছাগল, মহিষ, ভেড়া — সব মিলিয়ে গবাদিপশু উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে ১২তম। তারপরও গোশতের দাম এভাবে বাড়ার কারণ কী?

গোশত ব্যবসায়ী সমিতি বলছে, হাট কর্তৃপক্ষ তাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ইজারা আদায় করছে। যেমন, গাবতলী গরুর হাটে ইজারা নেওয়ার শর্ত হলো, প্রতিটি গরুর সরকার নির্ধারিত খাজনা হবে ১০০ টাকা। কিন্তু এ শর্ত না মেনে ইজারাদাররা অবৈধভাবে গরুপ্রতি চার বা পাঁচ হাজার টাকাও আদায় করছে। এভাবে একটি গরু শহরের ভেতরে তিনটি হাটে স্থানান্তরিত হলেই গরুর দাম বেড়ে যায় প্রায় ১৫ হাজার টাকা। এর প্রভাব সরাসরি এসে পড়ে গোশতের দামের ওপর।

ইজাদারদের এমন জুলুমের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় প্রতিবাদ জানিয়ে উলটো আরও মারধরের শিকার হয়েছেন ব্যবসায়ীরা। প্রশাসনও নীরব ভূমিকা পালন করছে বলে অভিযোগ তাদের। কারণ, এসব ইজারাদাররা হলো ক্ষমতাসীনদের লোক। শেখ হাসিনা সরকারের ছত্রছায়াতেই এমন ইজারা-বাণিজ্য করে বেড়াচ্ছে তারা।

কিন্তু এদিকে দৃষ্টি না দিয়ে শেখ হাসিনা গোশতের পরিবর্তে কাঁঠাল ব্যবহার করে খাবার তৈরির রেসিপি শেখাচ্ছে মানুষকে। শেখ হাসিনা এমন অদ্ভুত খাবার রেসিপির কথা পূর্বেও দেশের মানুষকে শুনিয়েছে।

দেশে যখন পেঁয়াজের দাম আকাশচুম্বী, তখন পেঁয়াজের মূল্য কমানোর পরিবর্তে দেশের মানুষকে শুনিয়েছে নিজের পেঁয়াজহীন রান্নার কথা। সে নাকি পেঁয়াজ ছাড়াই রান্না করে! এরপর শুনিয়েছে মিষ্টি কুমড়া দিয়ে বেগুনি বানানোর কথা। সংসদে দাঁড়িয়ে সে বলেছে, “মিষ্টি কুমড়া দিয়েও খুব ভালো বেগুনি বানানো যায়। সেভাবেই আমরা করি, সেভাবে করা যায়।”

এছাড়া, প্রেসার কুকার ব্যবহার করে মাছের কাটা নরম করার পদ্ধতিও বলেছে হাসিনা। কিন্তু প্রেসার কুকারে রান্না করার সামর্থ্য বাংলাদেশের সব মানুষের আছে কিনা সেই খবর নেই তার।

শেখ হাসিনার এসব খাবার রেসিপি জনগণের মাঝে হাস্যরসের সৃষ্টি করেছে। সেই সাথে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন না করে, মানুষকে রান্নার এসব ‘হাস্যকর’ রেসিপি শেখানোর চেষ্টায় সমালোচিত হয়েছে।

তবে এটা শুধু হাস্যরসের বিষয় নয়। বরং, দেশের জনগণের সাথে চরম পর্যায়ের তাচ্ছিল্য ও উপহাস। একদিকে তার সরকারের ব্যর্থতার কারণে দেশের সিংহভাগ মানুষ পর্যাপ্ত সুষম খাবার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অন্যদিকে হাসিনা গোশতের পরিবর্তে কাঁঠাল খেতে বলে উপহাস করছে।

অবশ্য কেবল শেখ হাসিনাই নয়, তার মন্ত্রী পরিষদের অনেকেই ধারাবাহিকভাবে এ ধরনের অদ্ভুত ও বিতর্কিত মন্তব্য করে দেশের জনগণকে হেয় করছে। এর আগে পরিকল্পনামন্ত্রী এম. এ মান্নান সবাইকে কচুরিপানা খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিল। তার কথা হলো, “গরু কচুরিপানা খেতে পারলে আমরা কেন খেতে পারব না?”

এভাবে দেশে যখনই কোনো সংকটাপন্ন অবস্থা তৈরি হয়, তখনই কুফুরি গণতন্ত্রের ঠিকাদাররা সংকট সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ না নিয়ে জনগণকে তাচ্ছিল্য করে এসব হাস্যকর বিভিন্ন সমাধান নিয়ে হাজির হয়। একদিকে জনগণের সম্পদ লুটপাট করে নিজেরা সম্পদের পাহাড় গড়েছে, অন্যদিকে দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা দেশের মানুষের সামনে নির্লজ্জের মতো এসব আবোলতাবোল সমাধান দিয়ে যাচ্ছে।

লেখক: সাইফুল ইসলাম

১টি মন্তব্য

  1. ভাইজান। এটা সুদুর প্রসারী গোপন ষড়যন্ত্র। কারণ ভারতের মতোও আমাদের দেশে গরুর গোশত নিষিদ্ধ করার গভীর ও সুদুর প্রসারী চক্রান্ত। একটু ভেবে দেখুন। যখন ভারতে গরুর গোশত নিষিদ্ধ হয়। এর পূর্বে ভারতের সন্ত্রাসী সরকার কি ধরনে চাল চেলেছেন? একটু ঘেটে দেখলেই বুঝা যাবে যে, আমাদেরকে ভারতের মতো করতে চায়।

Leave a Reply to ইমরান প্রতিউত্তর বাতিল করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধআসামে বড় ধরনের উচ্ছেদ অভিযান, বসতি হারাবে ১০০০ পরিবার
পরবর্তী নিবন্ধতালিবানের প্রযুক্তিগত সক্ষমতা: আধুনিক সামরিক যান ও হেলিকপ্টার মেরামত