মনিপুরে জাতিগত সংঘাতে বাড়ছে অজ্ঞাত লাশ: গোটা অঞ্চলই হুমকিতে

- মুহাম্মাদ আব্দুর রউফ

0
368

উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্য মনিপুরে মে মাস থেকেই চলছে হিন্দুপ্রধান মেইতেইদের সাথে খ্রিস্টানপ্রধান কুকি-চিনদের জাতিগত সংঘাত। এরই মাঝে সংঘাত সশস্ত্র রূপ ধারণ করেছে, গ্রামে গ্রামে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়েছে। ঘটছে আইইডি বিস্ফোরণের মতো ঘটনাও। উভয় পক্ষে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে লাশের সংখ্যা।

সংঘাত শুরুর কয়েক মাসে নিহত হয়েছে শত শত মানুষ। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ীই মনিপুরে জাতিগত সহিংসতায় এখন পর্যন্ত ১৭৫ জন নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছে হাজারের উপর এবং অনেকে এখনো নিখোঁজ রয়েছে।
কুকিদের মধ্যেই অন্তত ৪১ হাজার জন আশ্রয় নিয়েছে অস্থায়ী শিবিরে।
দাঙ্গা শুরুর পর থেকে মনিপুরের তিনটি বড় হাসপাতালের মর্গে ৯৬টি লাশ পড়ে আছে। এই লাশগুলো নিতে কেউ এখনো যোগাযোগ করেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে।

এই ঘটনাগুলোই সংঘাতের তীব্রতা ও পরিস্থিতির ভয়াবহতা স্পষ্ট করে দেয়।

বিবাদমান মেইতেই ও কুকিচিন গোষ্ঠী দুটি রাজ্যের দুটি ভিন্ন ভৌগোলিক অঞ্চলে বসবাস করে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, বর্তমানে পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে এক জাতিগোষ্ঠীর মানুষ অন্য জাতির ভূখণ্ডে যেতে পারে না। সমগ্র মনিপুর রাজ্য জাতিগত ভিত্তিতে ভাগ হয়ে গেছে। আর নিহতের আত্মীয়স্বজনেরা মূলত এই ভয়েই হাসপাতাল থেকে স্বজনদের লাশ নিতে যাচ্ছে না।

মনিপুরের রাজধানী ইম্ফলের সিনিয়র সাংবাদিক ওয়াহেংবাম টেকেন্দর সিং বিবিসিকে বলেন, জাতিগত সহিংসতায় নিহত ৯৬ জনের লাশ ইম্ফলের দুটি হাসপাতালে রাখা হয়েছে- রিজিওনাল ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সেস, জওহরলাল নেহেরু ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সেস; আরও কিছু লাশ রয়েছে চুড়াচাঁদপুরের রিজিওনাল মেডিকেল কলেজে।

ইম্ফল উপত্যকায় মেইতেই গোষ্ঠীর আধিপত্য রয়েছে এবং এখানকার দুটি হাসপাতালে রাখা লাশগুলো কুকি নৃগোষ্ঠীর অন্তর্গত। অপরদিকে, চুড়াচাঁদপুরের জেলা মেডিক্যাল হাসপাতালে যে লাশগুলো রাখা হয়েছে তার মধ্যে কুকি এবং মেইতেই উভয় গোষ্ঠীরই দেহ রয়েছে, যদিও তাদের মধ্যে কুকিদের লাশের সংখ্যা বেশি।

মেইতেই ও কুকিচিন উভয় জাতির লোকেদের মধ্যে নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে গিয়ে আবার উভয় পক্ষেরই রোষানলে পরার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে মনিপুরের পাঙ্গাল মুসলিমদের জন্য। এর মধ্যে উভয় পক্ষ বা কোন এক পক্ষ যদি মুসলিমদের সাথে সংঘাতে জড়ায়, তাহলে মনিপুরে শুরু হবে ত্রিমুখী সংঘর্ষ।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামে খ্রিস্টান কুকিচিন জাতির সশস্ত্র মিলিশিয়া গোষ্ঠী কেএনএফ ইতিমধ্যে স্বাধীন রাষ্ট্রের দাবিতে যুদ্ধ শুরু করেছে। আবার হিন্দুপ্রধান জেএসএস ও জেএসডি এই দুই দলের সাথেও চাঁদা তোলা সহ অন্যান্য ইস্যুতে তাদের সংঘাত হচ্ছে নিয়মিতই।

সুতরাং, এই গোটা অঞ্চলই যে সংঘাতের স্পষ্ট হুমকিতে রয়েছে, সেটা বললে অত্যুক্তি হবে না।



তথ্যসূত্র:

১। মনিপুরের মর্গে পড়ে থাকা বেওয়ারিশ লাশ শনাক্ত করছে না কেউ কিন্তু কেন?
https://tinyurl.com/4pnuz2my
২। মনিপুরের মর্গে ৯৬ লাশ
https://tinyurl.com/bpah6kzd
৩। Manipur Violance: 175 Dead, 1100 Injured, 96 Unclaimed Bodies in Hospitals
https://tinyurl.com/p6ajr9yx

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধফটো-রিপোর্ট || মধ্য সোমালিয়ায় শাবাবের অভিযান, হতাহত কমপক্ষে ১৬৮
পরবর্তী নিবন্ধআফগানিস্তানে শক্তিশালী ভূমিকম্পে নিহত ২৪৪৫