পরপর দুটি বড় যুদ্ধে পরাজিত সোমালি বাহিনী শাবাবকে এক মাসে নির্মূলের ঘোষণা দিয়েছে!

4
650

পশ্চিমা সমর্থিত মোগাদিশু সরকারি বাহিনীর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নাম ডেপুটি চিফ অফ জেনারেল স্টাফ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাদে নূর শেখ। গত মে মাসে সে দাবি করেছে যে, সেনাবাহিনী জুনের শেষ নাগাদ প্রতিরোধ বাহিনী হারাকাতুশ শাবাবকে পরাজিত করবে। এর জন্য সেনাবাহিনীর “প্রস্তুতির স্তরটি চিত্তাকর্ষক এবং উচ্চ স্তরের।”

আশ-শাবাবের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত আক্রমণের জন্য সেনাবাহিনী প্রস্তুত রয়েছে উল্লেখ করে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাদে নূর বলেছে, “আমরা জুন মাসে আশ-শাবাবকে পরাজিত করব। আমাদের সমস্ত সৈন্য যুদ্ধের জন্য ফ্রন্টে প্রস্তুত, যুদ্ধ শুরুর জন্য তারা একটি সবুজ সংকেতের অপেক্ষায় আছে।”

এদিকে ২০২২ সালের মে মাসে মোগাদিশু প্রশাসনের নেতা নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় এসে হাসান শেখ মাহমুদ। ক্ষমতায় এসেই সে ঘোষণা করে শাবাবকে এক বছরের মধ্যে নির্মূল করার। এসময় মোগাদিশু বাহিনীকে সহায়তা করতে দেশটিতে নতুন করে সেনা পাঠায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। একই সাথে তুরষ্ক, আরব আমিরাত ও উগান্ডায় প্রশিক্ষণ শেষে দেশে ফিরে আরও কয়েক হাজার নতুন প্রশিক্ষিত সোমালি সৈন্য। বিদেশি দেশগুলো থেকেও প্রচুর সামরিক সহায়তা পায় মোগাদিশু বাহিনী। শুরু হয় দেশটির কেন্দ্রীয় অঞ্চল হিরান ও জালাজদুদে আশ-শাবাবের বিরুদ্ধে একটি ব্যাপক আক্রমণ। ফলে যুদ্ধের শুরু পার্যায়ে কিছু এলাকা কৌশলগত কারণে ছেড়ে যায় আশ-শাবাব। আর মোগাদিশু বাহিনী ও বিদেশি সেনারা যখন এসব এলাকায় বিজয় উল্লাসে মেতে উঠে এবং ঘাঁটি স্থাপন করে, ঠিক তখনই শুরু হয় আশ-শাবাবের পাল্টা আক্রমণ। জানা যায়, আশ-শাবাব ঐবছর মোগাদিশু বাহিনী ও দখলদার বাহিনীর ঘাঁটিগুলো লক্ষ্য করে একে একে ৩২টি ইস্তেশহাদী অপারেশন পরিচালনা করেন। সেই সাথে চলে ভোর রাতের অ্যাম্বুশ ও আতর্কিত সব আক্রমণ। এসকল অপারেশনের কোনো কোনোটিতে ২০০-৩০০ এরও বেশি বিদেশি সৈন্য হতাহত হয়েছে।

স্থানীয় সূত্র অনুযায়ী, শাবাবের এসকল দুঃসাহসি আক্রমণে শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তুরস্কের প্রশিক্ষিত সোমালি দু’টি স্পেশাল ফোর্সেরই আড়াই হাজারের বেশি সৈন্য নিহত হয়। অন্যান্য সামরিক ইউনিটগুলোতেও আরও কয়েক হাজার সৈন্য হতাহত হয়। ফলে যুদ্ধের শুরুতেই চরম হেরে যায় মোগাদিশু বাহিনী।

এরপর মোগাদিশু প্রশাসনের প্রেসিডেন্ট হাসান শেখ মাহমুদ ২০২৩ সালের জানুয়ারির শুরুতে ফের নতুন করে ঘোষণা করে আশ-শাবাবকে এক বছরের মধ্যে পরাজিত করার। এই লক্ষ্যে হাসান শেখ সোমালিয়ার বিভিন্ন মিলিশিয়া গ্রুপগুলোকে প্রচুর পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে শাবাবের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে একত্রিত করতে শুরু করে। এসব মিলিশিয়া গ্রুপগুলোর হাতে তুলে দেওয়া হয় বিপুল সংখ্যক অস্ত্র, যার কোনোটি এই মিলিশিয়া দলগুলো চালাতেও ছিলো অক্ষম। শাবাবের বিরুদ্ধে তোড়জোড় যুদ্ধের এই প্রস্তুতি শেষে মার্চ মাসে হাসান শেখ শাবাবের বিরুদ্ধে যুদ্ধের দ্বিতীয় পর্ব ঘোষণা করে। সে ঘোষণা করে, মোগাদিশু বাহিনী ২০২৩ সালের আগস্টে অর্থাৎ ৫ মাসের মধ্যে আশ-শাবাবকে নির্মূল করবে।

কিন্তু হাসান শেখ যুদ্ধের প্রথম পর্ব থেকে শিক্ষা না নিয়ে আরও বড় মৃত্যু ফাঁদে পা দেয়। ফলে যা হাবার তাই হলো। মিলিশিয়া বাহিনীগুলো শাবাব যোদ্ধাদের আগমনের সংবাদ পেয়েই অনেক এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়। আর যারা যুদ্ধের ইচ্ছা পোষণ করেছিল, তারা নিজ নেতাদের নিয়ে সমূলে ধ্বংস হয়ে গেছে। ফলে যুদ্ধের দ্বিতীয় পর্বে আরও বড়ধরণের ক্ষতির সম্মুখীন হয় মোগাদিশু বাহিনী। এই বছর শুধু মোগাদিশু বাহিনীতেই অন্তত ১০ হাজার সৈন্য নিহত হয়। এছাড়াও স্থানীয় মিলিশিয়া বাহিনীগুলো সহ কেনিয়া, ইথিওপিয়া ও উগান্ডার আরও হাজার হাজার সৈন্য হতাহত হয়।

বিপরীতে আশ-শাবাব এই যুদ্ধকে কেন্দ্র করে সোমালি গ্রুত্রগুলোকে একত্রিত করতে এবং নিজেদের পক্ষে আনতে সক্ষম হয়। মোগাদিশু সরকার হাসান শেখের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ঐবছর বিভিন্ন ঘটনাকে কেন্দ্র করে আশ-শাবাব তাদের সামরিক বাহিনীতে নতুন করে ৭ হাজার যুবককে যুক্ত করতে সক্ষম হয়েছিল। আর আশ-শাবাবের তথ্য অনুযায়ী, তাঁরা ঐ বছরের যুদ্ধে এতো বিপুল পরিমাণ অস্ত্রশস্ত্র ও সামরিক যান গনিমত পেয়েছেন যে, তা ২০০৬ সালের পর থেকে যা পেয়েছেন তার চাইতেও বেশি ছিলো।

হাসান সরকারের ঘোষিত যুদ্ধ ২ বছর ধরে চলমান। এই যুদ্ধে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ছাড়া মোগাদিশু প্রশাসন নিজেদের ঝুলিতে কোনও গুরুতর অর্জন লাভ করতে পারেনি। বরং ২ বছর পর শাবাবের বিরুদ্ধে আক্রমণ এখন অনেকটাই নিস্তেজ হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে গত বছরের গ্রীষ্মে শাবাবের আক্রমণে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির পর মোগাদিশু প্রশাসন তাদের আক্রমণ কমিয়ে আনতে বাধ্য হয়েছে।

অপরদিকে আশ-শাবাব মুজাহিদিন এখনও সোমালিয়ার কেন্দ্রীয় ও দক্ষিণাঞ্চলের অধিকাংশ এলাকার নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছেন।

এমন পরিস্থিতিতে মোগাদিশু বাহিনীর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাদে নুরের নতুন করে শাবাবের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করছে। এমনকি দাবি করছে যে, এক মাসের মধ্যে শাবাবকে নির্মূল করবে। যেখানে আশ-শাবাব ২০০৬ সাল থেকেই আন্তর্জাতিক জোট ও আফ্রিকান জোট বাহিনী সহ স্থানীয় বাহিনীর সাথে যুদ্ধ করে নিজেদের অবস্থানে ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে। আর দিনকে দিন তাঁরা আরও শক্তিশালী ও বৃহৎ অঞ্চলের উপর প্রভাব বিস্তারকারী হয়ে উঠছেন। হয়তো চলতি মাস থেকে এই অঞ্চলের তীব্র সংঘাত আবারও প্রতক্ষ্য করবে বিশ্ব।

4 মন্তব্যসমূহ

  1. ওহহ আচ্ছা, আমরাও দেখবো এই এক মাসের মধ্যে কে নির্মূল হয়? আনসারুল্লাহ্ নাকি আনসারুশ শয়তান?! আল্লাহ্ তায়ালা প্রিয় ভাইদেরকে অটল অবিচল থেকে বিজয়ী হওয়ার তাওফিক দিন।

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধআবারো শরণার্থী শিবিরে ইসরাইলি হামলা, নিহত ১৫ ফিলিস্তিনি
পরবর্তী নিবন্ধফিলিস্তিনের জিহাদ || আপডেট – ৫ জুন, ২০২৪