করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য ২৪ তারিখ থেকেই দেশে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। পুলিশকেও দেওয়া হয়েছে করোনার বিস্তার রোধে জনসমাগম বানচাল করে দেওয়ার দায়িত্ব।
দেশের বিভিন্ন স্থানে মাস্ক না পরা বা বাইরে বের হওয়ার জন্য পুলিশের লাঠিপেটা,কান ধরে থাকার দৃশ্য স্থানীয় গণমাধ্যমে দেখা যাচ্ছে। খবর: বিবিসি বাংলা
সাধারণ মানুষের সাথে পুলিশের এ’ধরণের আচরণ নিয়ে বিভিন্ন মহলে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।
কক্সবাজারের টেকনাফের একজন মুদি দোকানদার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, গতকাল তিনি পুলিশের মার খেয়েছেন।
“আমি সকালে বাসা থেকে বের হয়ে দোকানের দিকে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ করে টহলরত পুলিশ আমার দিকে তেড়ে আসে আমাকে বলে বাইরে বের হয়েছিস কেন? এই বলে আমাকে মারতে থাকে। তারা আমার উত্তরের অপেক্ষা না করেই মারে,” তিনি বলেন।
“আমি দোকানে যাচ্ছি, দোকান খোলার জন্য সেটা তো অন্যায় না। এখন আমার কাছে জানতে চেয়ে উত্তর তাদের মন মত না হলে ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু কিছু না শুনেই মারা শুরু করে। এ কেমন কথা,” তিনি বলেন।
ফেরদৌস জাহান (ছদ্ম নাম) নামে একজন নারী একটি ব্যাংকে চাকরি করেন।
সব সরকারি বেসরকারি অফিস বন্ধের ঘোষণা হলেও ব্যাংকগুলোকে সীমিত আকারে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যেতে বলেছে।
এখন ফেরদৌস জাহান বলছেন, তাকে অফিস করতে হচ্ছে। কিন্তু তিনি ভয় পাচ্ছেন রাস্তায় যেভাবে পুলিশ পেটাচ্ছে তাতে করে তিনি বের হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দ্বারা যদি হেনস্থার শিকার হন।
” যারা অফিস করতে বাধ্য, যেমন আমার মত তারা রাস্তাঘাটে পুলিশ পেটোয়া বাহিনী দিয়ে হেনস্থা হইলে তার দায়ভার নিবে কে?” তিনি প্রশ্ন করেন।
তিনি খুব ক্ষোভের সঙ্গে বলছিলেন “আর এই পেটুয়া বাহিনীর হাত থেকে নিস্তার পেতে কোন নম্বরে কল দিতে হবে সেটাও জানতে চাই”।
ভিড়, জটলা বানচাল করতে কোথাও কোথাও পুলিশকে বেশ আগ্রাসী দেখা গেছে। সামাজিকমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে পুলিশ এবং সেনাদের কিছু অমানবিক আচরণ। সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া বিভিন্ন ছবি এবং ভিডিওতে দেখা গেছে, মাস্ক না পরার কারণে মানুষকে পেটানো হচ্ছে। জীবিকার প্রয়োজনে রাস্তায় বের হওয়া শ্রমজীবী মানুষও রেহাই পায়নি পুলিশের তাণ্ডব হতে। পুলিশ-সেনার এই আগ্রাসী ভূমিকার জন্য দেশজুড়ে তাদের নিন্দাও হচ্ছে বেশ।
মানুষ পেটানোকে দেশে শুদ্ধ রাজনীতি এবং আইনের শাসনের অনুপস্থিতির খণ্ডচিত্র আখ্যা দিয়ে ইসলামি চিন্তাবিদ ড. আহমদ আবদুল কাদের বলেন, এটা চরম অমানবিক এবং বর্বর আচরণ। পুলিশ এবং সেনা মোতায়েন করা হয়েছে সঠিক পন্থায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য। কিন্তু দেখা যাচ্ছে অন্যায় কঠোরতা প্রয়োগ করে তারা পরিস্থিতি আরও উত্তেজিত করে তুলছেন।
করোনা ছড়িয়ে পড়ার তিনমাসেও দেশের মানুষের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি না হওয়ার দায় সরকারের মন্তব্য করে তিনি বলেন, সরকার যথেষ্ট সময় পাওয়ার পরও করোনা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি। এখন দেশব্যাপী করোনা ছড়িয়ে পড়ার পর পুলিশ-সেনা উগ্র আচরণ করছে। শ্রমজীবী মানুষ যারা নিতান্তই জীবীকার জন্য রাস্তায় বেরিয়েছিল তাদের পিটিয়ে কলঙ্কজনক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
এদিকে এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে অপর ইসলামি চিন্তাবিদ মারকাযুদ্দাওয়া আল ইসলামিয়া ঢাকার শিক্ষক মাওলানা যাকারিয়া আবদুল্লাহ বলেন, পুলিশ-সেনার উচিত ছিল কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া। কিন্তু তারা সীমা অতিক্রম করে জনগণকে লাঠিপেটা করেছে। এটা চরম হতাশাজনক ঘটনা।
শ্রমজীবী মানুষকে ঘরে অবস্থানের আহ্বান জানানোর আগে তাদের জীবীকা নিশ্চিত করতে হবে মন্তব্য করে মাওলানা যাকিরায়া আবদুল্লাহ বলেন, এ ব্যাপারে সরকারি উদ্যোগ প্রয়োজন। যেমন ভারতের বিভিন্ন রাজ্য, পাকিস্তান এবং কানাডা সহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে দেখা গেছে। বাংলাদেশ সরকারের এরকম জরুরী পদক্ষেপ গ্রহণ প্রয়োজন। তবে পাশাপাশি মানবিক এই সঙ্কটের মুহূূর্তে যেন দুর্নীতি না হয় সে ব্যাপারেও প্রশাসনের নজরদারি করা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করে তিনি। খবর: ইসলাম টাইমস
মাওলানা যাকারিয়া আবদুল্লাহ বলেন, সরকারের পাশাপাশি আল্লাহ আমাদের যাদের সামর্থ দিয়েছেন তাদেরও উচিত এই সঙ্কটময় মুহূর্তে দরিদ্র প্রতিবেশীর সাহায্যে এগিয়ে যাওয়া। তবে অবশ্যই সমাগম এড়িয়ে সচেতনভাবে এ কার্যক্রম পরিচালনা করা উচিত বলে মনে করেন তিনি
আমাদেরদে দেশে ডাক্তার দরকার নেই, কারন পুলিশই হল all in all.