দখলকৃত কাশ্মীরের আরও একজন কাশ্মিরী যুবকের সাথে সাক্ষাতের জন্য আমি কোনোভাবেই প্রস্তুত ছিলাম না।
১৯৯১ সালের ১লা জানুয়ারী আব্দুল গনি মীরের ২১ বছর বয়সী ছেলে মুহাম্মাদ রফিক মীর বারামুল্লা’র শুতলুর খোমহ এলাকা থেকে স্বাধীনতার স্বপ্ন নিয়ে আজাদ কাশ্মীরের উদ্দেশ্যে যাচ্ছিলেন। তাঁর সাথে ছিলেন আরও ১১ জন কাশ্মীরি। কিন্তু ‘অবৈধ’ভাবে যাবার কারণে তাদেরকে গ্রেপ্তার করে ধরে নিয়ে যায় নিরাপত্তা বাহিনী।
গল্পের বাকি অংশটুকু আমি তারই সই করা একটি নথি থেকে তার নিজের ভাষায়ই উল্লেখ করছি-
আমাদের হাসপাতালের মতো দেখতে একটি জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়। কারণ সেখানে অনেকে সবুজ ইউনিফর্মে ছিলো ও তাদের মুখে মাস্ক ছিলো। আর বাকীরা ছিল মিলিটারি ইউনিফর্মে। আমাকে একটি টেবিলে রাখা হয় এবং আমার হাত থেকে রক্ত নেওয়া হয়। আমার কুঁচকিতে একটি তার স্থাপন করা হয় এবং স্ক্রিনে কিছু একটা দেখা যায়। এসময় আমি আমার শরীরে বেশ তাপ অনুভব করি। এরপর শুধু আমার মনে আছে যে, আমি প্রচন্ড ব্যথা অনুভব করেছি। একজন ডাক্তার আমাকে জানায় যে আমার বাম কিডনিটি সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
পরদিন সেই যুবককে তাঁর সঙ্গীদের সাথে নিয়ে যাওয়া হয়। তাদের ওপরও সেই একই সার্জারি করা হয়। তাদেরকে একটি আর্মি ট্রাকের পেছন থেকে রাস্তার পাশে ফেলে দেওয়া হয়। পরে তাঁকে একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় যেখানে তিনি তাঁর তীব্র ব্যাথার কথা ডাক্তারদের জানান। রফিক মীরের টেস্টামেন্টের নিচের অংশে পরীক্ষা করা হয়। বিভিন্ন পরীক্ষা ও এক্স-রে করার পর ডাক্তারগণ তাঁর ব্যপারে মতামত দেন যে –
আপাতদৃষ্টিতে ২০ বছর বয়সী মুহাম্মাদ রফিক মীর তাঁর শরীরের বাম দিকের কিডনির নিচের দাগ নিয়ে সুস্থ আছেন। প্রায় আট ইঞ্চি দৈর্ঘ্যের দাগটি ভালোভাবে নিরাময় যোগ্য। গোপালী রঙের দাগটি ইঙ্গিত দেয় যে, তা অল্প কিছুদিন আগেরই।
প্রশ্নোত্তরে তিনি তাঁর ইউরিনারী সিস্টেমের কোন উল্লেখযোগ্য সমস্যার কথা জানাননি। তাঁর কখনও হেমাটুরিয়া, ডিসুরিয়া, বিস্মৃতি, বা মূত্রনালী কোলিকের কোনও সমস্যা ছিল না। দাগের জায়গায় তার কোনও ব্যথা ছিল না। তাঁর কিডনির সমস্যার ব্যপারে কোন ডাক্তার কখনও তাঁকে কিছু বলেননি।
পরীক্ষার পরে, তিনি তাঁর বাম কিডনির নিচের দাগ ব্যতীত কোনও ক্লিনিকাল সমস্যার কথা উল্লেখ করেন নি। অন্যান্য পরীক্ষা দ্বারা এই বিষয়টি প্রতীয়মান হয় যে, তাঁর শরীরে বাম কিডনিটি অনুপস্থিত। সেই সাথে এও প্রতীয়মান হয় যে একটি সুস্থ-সক্রিয় কিডনি ও মূত্রনালী তাঁর শরীর থেকে “সার্জারির মাধ্যমে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে”। অপারেশনের অবস্থাদৃষ্টে এ বিষয়টিও স্পষ্ট যে কিডনিটি তাঁর “ইচ্ছার বিরুদ্ধে” প্রতিস্থাপনের উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়েছে।
কাশ্মীর উপত্যকায় থাকাকালীন এমন আরও অনেক ঘটনা আমি অবগত হই। তাদের বেশিরভাগেরই এমন অপারেশনের সময় মৃত্যু ঘটে। তবে তাদের মৃতদেহ গুলি খুঁজে পাওয়া গেলেও তাদের শরীরের কিডনি, লিভার এবং অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলি আর খুঁজে পাওয়া যায় না।
গান্দেরবাল জেলায় থাকাকালীন আমি সেখানের এক বাসিন্দা ইউনিস খানের সাক্ষ্য গ্রহণ করি। তিনি বলেন যে, বিএসএফের সদস্যরা তাঁর ২৯ বছর বয়সী ভাই বশির খান সহ আরও ১২ জন কাশ্মীরিকে একটি বাসে তুলে নিয়ে যায়। একমাস পর তাঁর ভাইয়ের দেহ পাওয়া যায়। ইন্সটিটিউট অফ মেডিক্যাল সাইন্স নামক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর ডাক্তাররা তাঁর ভাইকে মৃত ঘোষণা করেন। ডাক্তারি রিপোর্ট অনুযায়ী তাঁর ভাই প্রচন্ড শারীরিক নির্যাতনের কারণে মারা যান এবং তাঁর শরীরে একটি কিডনিও ‘মিসিং’ থাকে।
যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে আসার পর টেলিভিশনে এ বিষয়ে আমি বেশ কয়েকটি ডকুমেন্টারি দেখি। বিশেষ করে ১৯৯৩ সালের ১১ই ডিসেম্বর ডিসকভারি চ্যানেলে প্রচারিত ভারতের ‘হিউম্যান অরগ্যান’ এর বিশাল কালো বাজার নিয়ে নির্মিত একটি ডকুমেন্টারি আমি আমার দেখা হয়। কিন্তু বাস্তব চিত্র ছিলো ডকুমেন্টারিতে দেখানো সেই চিত্র থেকে আরও ‘ভয়াবহ’।
[“অঙ্গ অপসারণ এবং কালো বাজার”, উইলিয়াম ডব্লিউ বেকার এর “কাশ্মীর হ্যাপী ভ্যালী, ভ্যালী অফ ডেথ” থেকে গৃহীত।]
অনুবাদক ও সংকলক : আবু উবায়দা
কি বলব ভাষা হারিয়ে ফেলছি
ইনশাআল্লাহ এই কষ্ট ও কোরবানি বৃথা যাবে না।
ইসলামী ভবিষ্যত এই ত্যাগ-তিতিক্ষার উপরেই গর্বের সাথে শির উঁচু করে দাঁড়াবে।