আলোচনার টেবিলে সরকার শর্ত মানল, আল-শাবাব অবরোধ তুলে নিল

ত্বহা আলী আদনান

2
1622

পূর্ব আফ্রিকা ভিত্তিক জনপ্রিয় ইসলামি প্রতিরোধ বাহিনী হারাকাতুশ শাবাব টানা ১১দিন যাবৎ সোমালিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রাদেশিক রাজধানী বাইদোয়া শহর অবরোধ করে রেখেছিল।

স্থানীয় সূত্রমতে, টানা ১১ দিন যাবৎ চলমান অবরোধের মধ্যে শহরের সরকারি ও সামরিক অবস্থানগুলিতে খাবার, বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ বন্ধ করে রাখেন শাবাব মুজাহিদিন। সেই সাথে শহরে প্রবেশ ও শহর থেকে বের হওয়ার পথে সমস্ত যানবাহন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। অবরোধকালে জনসাধারণের জন্য জরুরি প্রয়োজনে ছাড় থাকলেও, জীবন দূর্বিষহ হয়ে পড়েছিল শহরে আটকা পড়া সামরিক বাহিনীর সদস্য ও সরকারি কর্মকর্তাদের। কেননা তাদের বিরুদ্ধে শাবাবের নিষেধাজ্ঞা ছিলো অত্যন্ত কঠোর।

এমন পরিস্থিতিতে মোগাদিশু সরকার অবরোধ ভাঙতে দফায় দফায় সামরিক অভিযান পরিচালনা করে, যাতে আকাশ পথে সর্বাত্মক সহায়তা করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তুরস্কের ড্রোনগুলি। কিন্তু এতেও তারা অবরোধ ভাঙতে ব্যর্থ হয়।

অবরোধের কারণ:

স্থানীয় সূত্রমতে, মোগাদিশু সরকার এই অঞ্চলের জনসাধারণের উপর কিছুদিন পূর্বে বেশ কয়েকটি বিধি-নিষেধ আরোপ করেছিল। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো –
– আশ-শাবাবের শরিয়াহ্ আদালতে বিচার চাইতে না যাওয়া
– শহরের বাসগুলো শাবাবের এলাকায় না যাওয়া
– কোনো খাদ্য সামগ্রী শাবাব নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে পরিবহন না করা
– শাবাব প্রশাসনের পরিচালিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা না করা
– শাবাব প্রশাসনের সাথে আর্থিক ও রাজনৈতিক সম্পর্ক না রাখা এবং
– শাবাবের কোনো পরামর্শ সভায় অংশগ্রহণ না করা।

পশ্চিমা সমর্থিত সরকারের এধরণের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করার কারণে অনেক শিক্ষক, স্কুল পরিচালক, ছাত্র, ব্যবসায়ী, চালক ও শরিয়াহ্ আদালতে বিচরপার্থীকে গ্রেপ্তার করা হয়। আর জনসাধারণের উপর সরকারের এমন নিপীড়ন ও জুলুমের প্রতিক্রিয়া জানাতেই আল-শাবাব প্রশাসন প্রদেশিক রাজধানীতে সরকারি কর্মকর্তা ও সরকারের সাথে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে নতুন করে নিষেধাজ্ঞা ও অবরোধ আরোপ করেন।

শাবাব প্রশাসনের সাথে আলোচনার টেবিলে সরকার:

এমন পরিস্থিতিতে বাধ্য হয়ে শাবাবের সাথে আলোচনায় বসার সিদ্ধান্ত নেয় মোগাদিশু সরকার। আর এই লক্ষ্য তারা উপজাতি ও স্থানীয় নেতাদের মাধ্যমে শাবাবের সাথে আলোচনা শুরু করে, যা টানা দুদিন ধরে চলে। আর এই আলোচনার মাধ্যমে আল-শাবাবের সমস্ত শর্ত মেনে নিতে বাধ্য হয় সরকার। ফলে আল-শাবাবও শহর থেকে তাদের অবরোধ ও নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নেয়।

সোমালি প্রশাসনকে দেওয়া শাবাবের শর্তসমূহের মধ্যে রয়েছে-

১। হারাকাতুশ শাবাবের নিযুক্ত বে রাজ্যের গভর্নর বাইদোয়াতে তাঁর কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবে কোনো সমস্যা ছাড়াই পরিচালনা করতে পারবে।
২। জনসাধারণ যথারীতি ইসলামি শরিয়াহ্ আদালতে বিচার চাইতে পারবে।
৩। সমাজের বিভিন্ন শ্রেনীর মানুষ তাদের প্রয়োজনে নির্বিঘ্নে শাবাব নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে আসা যাওয়া করবে।
৪। জনসাধারণকে ব্যবসা ও শিক্ষার মতো গুরত্বপূর্ণ বিষয়গুলো স্বাধীনতার সাথে করতে দিতে হবে।
৫। বাইদোয়াতে সরকারের নিষেধাজ্ঞার আওতায় যাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাদের সবাইকে মুক্তি দিতে হবে। (যাদের সংখ্যা ৬৫০ জন)

মোগাদিশু সরকার শাবাবের এসব শর্ত পূর্ণ করার পর, গত ২২ জুলাই শহরটি থেকে অবরোধ তোলে নিয়েছেন শাবাব প্রতিরোধ যোদ্ধারা।

উল্লেখ্য যে, হারাকাতুশ শাবাবের এই চুক্তির মাধ্যমে আরও একবার স্পষ্ট হয়েছে যে, বাস্তবিক অর্থে বর্তমানে সোমালিয়া শাসন করছেন মুজাহিদগণ। কোনো এলাকা যদি পরিপূর্ণভাবে তাদের নিয়ন্ত্রণে নাও থেকে থাকে, তথাপি এসব এলাকাও যে তাঁরাই নিয়ন্ত্রণ করছেন- সেটিও স্পষ্ট হলো। সেই সাথে এটাও স্পষ্ট যে, সোমালিয়ার জনগণ মানবরচিত আইনের পরিবর্তে শরিয়াহ্ আইনকেই প্রাধান্য দিচ্ছেন। পাশাপাশি এটাও প্রমাণিত হয়েছে যে, পশ্চিমা সমর্থিত সরকারের চাইতে আল-শাবাবই হচ্ছে জনগণের প্রিয়ভাজন, আস্থার প্রতীক।

2 মন্তব্যসমূহ

  1. সালাম। প্রিয় ভাইয়েরা! আমেরিকা নির্বাচন অংশগ্রহণ মুলক অজুহাতে, জাতীয় সংঘ শান্তি মিশনের নাম দিয়ে আমাদের প্রিয় এই মাতৃভূমিতে ঢুকতে চাচ্ছে।আর আমাদের জনতা এর ভয়াবহতা এখনিই বুঝতে পারবে না হয়তো। অতএব আমাদের উচিত এ ব্যাপারে এখনি সচেতনতা তৈরী করা।
    এখানে এই কমেন্ট টি প্রসঙ্গিক না হলেও লিখেছি এবং এ ব্যাপারে কোন রিপোর্ট কামনা করছি।

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধআফগানিস্তানে মূল্যস্ফীতির হার কমে শূন্যের নিচে
পরবর্তী নিবন্ধমালিতে ওয়াগনার ঘাঁটিতে ধ্বস নামাচ্ছে আল-কায়েদার অ্যাম্বুশ ও শহীদি অভিযান