
ভারতের উত্তর প্রদেশের সম্ভাল জেলার চান্দৌসি আদালত ঐতিহাসিক শাহী জামে মসজিদ নিয়ে বিতর্কিত একটি আবেদন গ্রহণ করেছে, যার শুনানির তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে ২১ জুলাই। আবেদনটি করেছে সিমরান গুপ্তা নামের এক হিন্দুত্ববাদী, সে দাবি করেছেন ১৭ শতকে নির্মিত এই মসজিদটি আসলে একসময় ‘হরিহর মন্দির’ নামে একটি হিন্দু মন্দির ছিল। তাই সেখানে মুসলিমদের নামাজ আদায় নিষিদ্ধ করা উচিত। আদালতের এই সিদ্ধান্তে এলাকাজুড়ে মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে চরম উৎকণ্ঠা ছড়িয়ে পড়েছে। বহু মুসলিম এই পদক্ষেপকে ধর্মীয় অধিকার ও ইতিহাস মুছে ফেলার নতুন এক ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছেন।
গত ৪ জুলাই ভারতের মানবাধিকারবিষয়ক সংবাদমাধ্যম ক্লারিওন ইন্ডিয়া–এর এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, শাহী জামা মসজিদকে ঘিরে ‘মন্দির থাকার’ দাবির পর মসজিদ কমিটি আদালতে সরকার অনুমোদিত নথিপত্র ও প্রামাণ্য দলিল উপস্থাপন করেছিল। তবে আদালত সেসব প্রমাণ উপেক্ষা করে হিন্দুত্ববাদী আবেদনকারীদের দাবিকে অধিক গুরুত্ব দেয়। এর ফলে মসজিদে নামাজ নিষিদ্ধ করা ও পুনরায় জরিপ চালানোর মতো পদক্ষেপ আরও বিতর্কিত হয়ে উঠেছে। প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, এর আগে ২০২৪ সালের নভেম্বরে আদালতের নির্দেশে মসজিদের নীচে মন্দিরের খোঁজে পরিচালিত এক জরিপের সময় ভয়াবহ সহিংসতায় রূপ নেয়। তখন শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদে অংশ নেওয়া মুসলিমদের ওপর হিন্দুদের একটি দল অতর্কিতভাবে হামলা চালায়। ওই হামলায় অন্তত পাঁচজন মুসলিম নিহত হন, বহু মানুষ আহত হন এবং গোটা এলাকা সহিংসতা ও আতঙ্কে ছেয়ে যায়।
সহিংসতার পর পুলিশ একতরফাভাবে অভিযান চালিয়ে শতাধিক মুসলিম যুবককে গ্রেপ্তার করে এবং আরও ২,৭৫০ জন অজ্ঞাত মুসলিমদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, পুলিশ গভীর রাতে ঘরে ঘরে হানা দিয়ে ছেলেদের তুলে নিয়ে যায় কোন ওয়ারেন্ট ছাড়াই। বহু পরিবার আর্থিক সংকটে ভুগছে, ফলে আইনজীবী নিয়োগের সামর্থ্যও নেই। যারা আইনি সহায়তা দিতে এগিয়ে এসেছেন, তারাও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। লখনৌয়ের এক এনজিও কর্মী জানিয়েছেন, স্থানীয় প্রশাসন তাদের স্পষ্টভাবে সতর্ক করেছে যে, ‘মুসলিমদের পক্ষে দাঁড়াবে না।’
ঘটনার তদন্তে গঠিত বিশেষ তদন্ত দল সম্প্রতি ১,১০০ পৃষ্ঠার একটি চার্জশিট জমা দিয়েছে, যেখানে সমাজবাদী পার্টির এমপি জিয়াউর রহমান বারকসহ ২২ জন মুসলিমকে সহিংসতার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়েছে। তবে মুসলিম সম্প্রদায়ের অভিযোগ, এই তদন্ত রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং একতরফা। তারা বলছেন, চার্জশিটে এক প্রভাবশালী হিন্দু নেতার নাম ইচ্ছাকৃতভাবে বাদ দেওয়া হয়েছে, যদিও তার বিরুদ্ধে একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী অভিযোগ করেছে।
ভারতের ইতিহাসবিদ ও বিশ্লেষকরা মনে করেন, এটি কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। বারাণসীর জ্ঞানবাপি মসজিদ ও মথুরার ঈদগাহ মসজিদসহ বহু মসজিদ হিন্দু ডানপন্থী সংগঠনগুলোর টার্গেটে পরিণত হয়েছে। এসব জায়গায় কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ ছাড়াই দাবি করা হচ্ছে যে সেগুলো আসলে মন্দির ছিল। এতে করে ভারতের ধর্মীয় সংখ্যালঘু মুসলিমরা ক্রমাগতভাবে নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন।
তথ্যসূত্র:
1. UP: Court to Hear Plea to Ban Namaz at Sambhal’s Shahi Jama Masjid on July 21
– https://tinyurl.com/3zz9psxr