অফিসের নির্ধারিত সময় তখনও শুরু হয়নি। কিন্তু এরই মধ্যে সব সরকারি কর্মকর্তা একসঙ্গে হাজির! ব্যাপারটা অবাক করার মতো। আরো অবাক করার বিষয় হলো তারা একসঙ্গে ছিলেন অফিস সময়ের আরো কয়েক ঘণ্টা পরও। তবে তারা অফিস করেননি। অফিসে তালা ঝুলিয়ে আমোদ করেছেন। ফুটবল খেলেছেন, গান শুনেছেন। ভুড়িভোজ তো ছিলোই। বাদ পড়েনি ফটোসেশনও। তবে মাঝে ‘বিষাদ’ হয়ে দাঁড়ায় এমন বিষয়ে কালের কণ্ঠে রিপোর্ট করার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে জেনে।
রিপোর্ট করার বিষয়টি নিয়ে কানাঘুষা শুরু হয় আয়োজনের সময়ই। এরপর থেকে অনেকেই মোবাইল ফোন রিসিভ করা বন্ধ করে দেন। একেবারে ঘনিষ্টজন ছাড়া কারো ফোন ধরেননি। কালের কণ্ঠের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে জানতে চেয়ে এসএমএস পাঠালে একজন সরকারি কর্মকর্তা শুধু ‘সরি ভাই’ লিখে পাঠিয়েছেন। একজন পদস্থ কর্মকর্তা রিপোর্ট করা নিয়ে আরেক কর্মকর্তার সঙ্গে মোবাইল ফোনে উচ্চবাচ্যও করেছেন বলেও উপস্থিত সূত্র নিশ্চিত হয়েছে।
অফিসার্স ক্লাবের উদ্যোগে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরের সরকারি কর্মকর্তারা রবিবার ছুটে গেছেন হবিগঞ্জের চড়ে। সকাল নয়টার দিকে নবীনগর লঞ্চঘাট থেকে যাওয়ার সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ মাসুম জানিয়েছেন, একটি প্রজেক্টের কাজ দেখতে তারা কাছে কোথাও যাচ্ছেন। ঘণ্টা খানেকের মধ্যেই ফিরে আসবেন।
এদিকে কর্মকর্তারা আমোদ ভ্রমণে চলে যাওয়ায় দিনভর নবীনগরের সরকারি অফিসগুলো তালা ছিল। কর্মকর্তাদের সঙ্গে কর্মচারীরাও যোগ দিয়েছেন ওই ভ্রমণে। উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, ইউএনও, এসিল্যান্ড, পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত), প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা থেকে শুরু করে অন্তত একশ’ জন এতে অংশ নিয়েছেন। লঞ্চে করে নবীনগর থেকে হবিগঞ্জের একটি চড়ে গিয়ে সেখানেই রান্না করে খাওয়া দাওয়া করেন তারা। এ ছাড়া সারাদিন গান ও খেলাধুলার আয়োজন ছিল।
কালের কণ্ঠের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে সেখানে উপস্থিত অনেকের সঙ্গেই যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তারা ফোন ধরেননি। অনেকে ফোন বন্ধ করে রেখেছেন। বেশ কয়েকবার চেষ্টার পর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. মনিরুজ্জামান ফোন ধরলেও পরে কথা বলবেন বলে জানান। এ বিষয়ে জানতে চাইলে পাল্টা এসএমএস করে এক সরকারি কর্মকর্তা সরি লিখেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সরকারি কর্মচারি জানান, চড়েই খাওয়া-দাওয়াসহ আনন্দ আয়োজন করা হয়। গানের জন্য মোট সাতজনকে নেওয়া হয়েছে। সব পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তারাই সেখানে আছেন। ফিরতে অনেক রাত হবে।
কথা হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ শামছুজ্জামানের সঙ্গে। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি আমি অবগত নই।’ কর্মদিবসে অফিসে তালা ঝুলিয়ে এমন ভ্রমণ করা যায় কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আগে আমি বিষয়টি জেনে নেই।’
রবিবার বিকেলে মোবাইল ফোনে কথা হলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ (নবীনগর) আসনের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ এবাদুল করিম বুলবুল সরকারি কর্মকর্তাদের ভ্রমণে যাওয়ার বিষয়টি অবগত হয়েছেন বলে জানান। তবে এ বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য তিনি করেননি।
সূত্রঃ কালের কন্ঠ