ইসলামের তারকাগণ || তৃতীয় পর্বঃ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর ইবনে আওয়াম রাদিয়াল্লাহু আনহু

0
2680
ইসলামের তারকাগণ || তৃতীয় পর্বঃ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর ইবনে আওয়াম রাদিয়াল্লাহু আনহু

আপনি কি ইতিহাসের এমন কোন মুসলিম বীর সম্পর্কে জানেন, যিনি ১ লক্ষ ২০ হাজার মুশরিক সৈন্যের এক বিশাল বাহিনীর ভিতরে ডুকে তাদের রাজাকে হত্যা করেছিলেন? পরে তার মাথা বর্শার আগায় গেঁথে নিয়েছিলেন ?!!

সেই সাহসী বীর মুজাহিদ হলেন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর ইবনে আওয়াম রাদিয়াল্লাহু আনহু, আসমা বিনতে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহার পুত্র।

তাঁর মা হিজরত করে মদীনার কোবা পল্লীতে পৌঁছলে তাঁর জন্ম হয়।

হিজরতের পর মুহাজির দম্পতির ঔরসে জন্ম নেয়া প্রথম সন্তান তিনিই। তাঁর জন্মগ্রহণে মুসলিমগণ অত্যন্ত আনন্দিত হয়েছিলেন। সাহাবায়ে কেরাম খুশি হয়ে এমন তাকবীর দিয়েছিলেন যার ফলে মদিনা কেঁপে উঠেছিল । কেননা, ইয়াহুদীরা বলত-  আমরা মুহাজিরদের উপর যাদু করেছি,  তাঁদের কোন পুত্র সন্তান হবে না!

জন্মের পর  তাঁর মা তাঁকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে নিয়ে  আসলেন । আল্লাহর রাসূল আদর করে তাঁকে কোলে তুলে নিলেন। একটি খেজুর চিবিয়ে শিশু আবদুল্লাহর মুখে তুলে দিলেন। এভাবে ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের মোবারক থুথু মিশ্রিত খেজুর দিয়ে তাঁর খাবার গ্রহণ শুরু হয়। পরে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর জন্য বরকতের দোয়া করেন এবং তাঁর দাদার নামানুসারে তাঁর নাম রাখেন আব্দুল্লাহ ।

আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু  ছিলেন অসম সাহসী। অশ্বারোহণে তাঁর ছিল অসামান্য দক্ষতা। জিহাদের জন্য সব সময় উদগ্ৰীব হয়ে থাকতেন। তিনি তাঁর পিতার সাথে ঘোড়ায় চড়ে লড়াই করা ও সম্মুখ সমরে যুদ্ধের কলাকৌশল শিখতেন। এই প্রশিক্ষণের চূড়ান্ত সাক্ষর রেখেছিলেন  ইয়ারমুকসহ আরো বিভিন্ন ময়দানে।

আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু একজন বীর মুজাহিদ হওয়ার পাশাপাশি একজন খাঁটি আবেদ, ক্বারী,  রাত্রে কিয়ামকারী এবং দিনে সিয়াম  সাধকও ছিলেন।

আমর ইবনে দিনার বলতেন: মাকামে ইব্রাহিমের পেছনে আমি ইবনে যুবাইর থেকে অধিক সুন্দর করে আর কাউকে নামায পড়তে দেখিনি।

আর সাবেত বুনানী বলতেন:  ইবনে যুবাইর মাকামে ইব্রাহিমের পেছনে নামাজ পড়ছিলেন। আমি সেখান দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলাম। তিনি এতটা একাগ্ৰতার সাথে নামাজ পড়ছিলেন যে, তাঁকে দেখে মনে হলো যেন একটি  কাষ্ঠখণ্ড মাটিতে গেড়ে রাখা হয়েছে,যা কোন নড়াচড়া করে না। তিনি ছিলেন সেসকল ভাগ্যবানদের একজন, হযরত উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু যাদেরকে কুরআন লিপিবদ্ধ করার দায়িত্ব দিয়েছিলেন।

আব্দুল্লাহ  রাদিয়াল্লাহু আনহু ছিলেন  ইসলামী সাম্রাজ্য বিজয়ের অগ্রনায়ক। তিনি আফ্রিকা,  আন্দালুস এবং কুস্তুনতুনিয়া বিজয়ে অন্যতম ভূমিকা  রেখেছেন।

সুবাইতিলার যুদ্ধে মাত্র  ২০ হাজার মুসলিম,   ১লক্ষ ২০ হাজার কাফেরের মোকাবেলায় লড়াই করে আফ্রিকা জয় করেছিলেন।

আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর রাদিয়াল্লাহু আনহু কাফের বাহিনীকে ভালভাবে পর্যবেক্ষণ করে দেখলেন যে,  বর্বর রাজা কাফের বাহিনীর  মূল চালিকা শক্তি। সে সৈন্য বাহিনীকে জীবন বিলিয়ে দিতে উৎসাহিত করছে।

তাই তিনি বুঝতে পারলেন, এই উদ্ধত  কাফেরটাকে  হত্যা করা খুবই জরুরী।  তাকে হত্যা করতে পারলেই যুদ্ধের মোড় ঘুরে যাবে।

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর রাদিয়াল্লাহু আনহু  বলেন, তাই আমি কাফের বাহিনীর পিছন থেকে বাদশা জারজীরের অবস্থান ভালভাবে দেখলাম। সে তখন একটি তুর্কি ঘোড়ার উপর ছিল।

দুইজন বাঁদি তাকে ময়ূরের পাখা দ্বারা ছায়া দিচ্ছিল। আমি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে সাআদ ইবনে আবী সারাহ এর কাছে এসে বললাম, আমি সরাসরি রাজার উপর আক্রমণ করতে চাই।  আমার সাথে এমন কিছু লোক পাঠান যারা পিছন থেকে আমার উপর শত্রুর হামলা প্রতিহত করবে।

তিনি আমার সাখে একদল সাহসী যোদ্ধা পাঠালেন।

তখন আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর  নিক্ষিপ্ত তীরের মত শত্রুদের কাতার ডিঙ্গিয়ে সামনে যেতে লাগলেন।  রাজা জারজীরের দেহরক্ষী তাঁকে মনে করে  পত্রবাহক। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর বললেন: আমাকে  কাছাকাছি দেখে রাজা বিপদ আঁচ করতে পারে। সে পালিয়ে যাবার চেষ্টা করে। আমি তাকে ধাওয়া করলাম। বর্শা দ্বারা আঘাত করে তাকে হত্যা করলাম এবং তার মাথা কেটে বর্শার ফলায় গেথেঁ উর্ধ্বে উত্তোলন করলাম এবং তাকবীর দিলাম।

 

যখন মুসলিমগণ নিজেদের পতাকার পাশে মুশরিক রাজার মাথা দেখলেন তখন তাঁরা বুঝতে পারলেন আল্লাহর নুসরত এসে গেছে। তখন মুসলিম বাহিনী সম্মিলিতভাবে হামলা চালান এবং মুসলিমদের বিজয়ের মধ্য দিয়ে যুদ্ধ শেষ হয় ।

আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর রাদিয়াল্লাহু আনহু এই বিজয়ের সুসংবাদ নিয়ে খলিফা উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুর নিকট মদিনায় আসেন।

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর রাদিয়াল্লাহু আনহু ৭৩ হিজরীতে জালেম হাজ্জাজ বিন ইউছুফের হাতে শাহাদাতবরণ করেন।

 

***

তথ্যসূত্রঃ

আল বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ (৭) -ইবনে কাছীর

আল কামেল ফিত তারীখ- ইবনুল আছীর

কিচ্ছাতুল ইসলাম-রাগেব সিরজানী

 

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধআফগানিস্তানে শহীদ হওয়া বাংলাদেশী মুজাহিদের গজল প্রকাশ করেছে আল-কায়েদা!
পরবর্তী নিবন্ধফটো রিপোর্ট || ৩০শে শাওয়াল, ১৪৪০ হিজরী || তানযিম হুররাস আদ-দ্বীনের ‘আবু মু’য়তাসীম আদ-দারী’ কমান্ডো অভিযান!