নিউজিল্যান্ডের মসজিদে হামলা করেছিলো এক উগ্র শ্বেতাঙ্গ খ্রিষ্টান ক্রুসেডার। হামলার পেছনে ছিল ধর্মীয় বিদ্বেষ এবং নিজেদের আধিপত্য কায়েম করা।
‘নিউজিল্যান্ড! সে তো অনেক দূর! আমার এত চিন্তা কীসে!?’- এরকম ভাবার কোন সুযোগ নেই। কেননা, আপনি নিরাপদ নন, নিরাপদ নয় আপনার মসজিদও! আগামী শুক্রবার যে আপনার মসজিদে এরকম হামলা হবে না, সে নিশ্চয়তা আপনি দিতে পারবেন না! কেন জানেন? নিউজিল্যান্ডের মসজিদে হামলাকারী উগ্র সন্ত্রাসী শ্বেতাঙ্গ খ্রিষ্টান যে চেতনার ধারকবাহক, একই চেতনাধারী এক শ্রেণি আপনার পাশেই বাস করে, আপনার প্রতিবেশী! তারা হলো উপমহাদেশে ‘রামরাজত্ব’ প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনাকারী উগ্র মুশরিক হিন্দুত্ববাদীরা!
হ্যাঁ, আমি আপনাকে ভয় দেখাচ্ছি, সতর্ক করছি। যেন আপনি সচেতন হোন, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। তবে, কেবল ধারণার উপর ভিত্তি করেই আমার এই সতর্ক করা নয়। বরং, এ এক বাস্তবতা এবং চরম সত্য। উপমহাদেশের হিন্দুত্ববাদীদের সাথে ঐ উগ্র শ্বেতাঙ্গদের গভীর সম্পর্ক রয়েছে। এই সম্বন্ধে সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরাতে ২০১৮ সালের ১৩ই ডিসেম্বর একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। [১] সেখানে বলা হয়, শ্বেতাঙ্গবাদী, নব্য নাৎসি এবং হিন্দুত্ববাদীরা মিলে এমন একটি মতবাদকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাচ্ছে যা বর্ণবাদ, বিদেশী বিদ্বেষ, বিভেদসৃষ্টিকরণের জন্ম দিবে!
নতুন এই জোড়াতালি দেওয়া দলটিকে সাধারণত “অল্টারনেটিভ-রাইট বা অল্টার-রাইট” বলে সম্বোধন করা হয়। এই দলটি তাদের মতবাদকে ভারতের সমাজব্যবস্থায় বাস্তবায়নের আশা ব্যক্ত করেছে। তাদের সকলের মনোযোগ এখন ভারতের উপর! এরই লক্ষ্যে উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা ভারতে কাজ করে যাচ্ছে!
এছাড়াও, আল-জাজিরার ঐ রিপোর্টটিতে হিন্দুত্ববাদীদের সাথে বহির্বিশ্বের অন্যান্য ইসলামবিদ্বেষী, বর্ণবাদী শ্বেতাঙ্গ দলগুলোর সখ্যতার বিষয়ে আরো অনেক প্রমাণ উল্লেখ করা হয়েছে। তাদের মূল লক্ষ্য হলো, ট্রাম্প বা শ্বেতাঙ্গরা যেরূপ সারাবিশ্বে নিজেদের আধিপত্য কায়েম করতে চায়, ঠিক সেভাবেই হিন্দুত্ববাদীরাও উপমহাদেশে নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করতে চায়! ভারতকে প্রতিষ্ঠা করতে চায় একটি হিন্দু রাষ্ট্র হিসেবে, যেখানে থাকবে না কোন মুসলিমের নাম-গন্ধ! [আল–জাজিরার রিপোর্টটির উপর ভিত্তি করে বাংলায় রচিত ‘শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই’ সিরিজ পড়ুন এই লিংকে– https://telegra.ph/War-Of-Superiority-Series-07-16 ]
আজ এটা কেবল খাতা-কলম আর তাদের পরিকল্পনাই নয়, বরং বাস্তবে প্রমাণ করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে হিন্দুত্ববাদীরা। উগ্র শ্বেতাঙ্গ খ্রিষ্টান ক্রুসেডার যখন নিউজিল্যান্ডের মসজিদে হামলা করে অর্ধশত মুসলিমকে নির্মমভাবে হত্যা করে, তখন উপমহাদেশের হিন্দুত্ববাদীদের আনন্দ-উল্লাস ছিল চোখে পড়ার মত! এমনকি তাদের কতক তখন হিন্দুদের প্রতি এই আহ্বান জানিয়েছিল যে, ভারতেও যেন মুসলিমদের মসজিদে এরূপ হামলা করা হয়।
ভারতে মুসলিমদের উপর চলমান বর্বরতম আগ্রাসন সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের শুরুর ধাপ। গত ১৭ই জুন ২০১৯ ঈসায়ী, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের একটি মসজিদে সালাত আদায়রত মুসল্লিদের উপর বোমা হামলার ঘটনা তাদের উক্ত নিকৃষ্ট পরিকল্পনা ও চেতনারই অংশ। [২] মুসলিমদেরকে জয়শ্রীরাম বলতে বাধ্য করা, গো-রক্ষার নামে মুসলিমদেরকে হত্যা করা, মুসলিমদের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে উগ্র ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তোলা, মুসলিম নারীদেরকে গণধর্ষণ করার হুমকি দেওয়া এবং বাংলাদেশ দখল করার হুমকি দেওয়াসহ ইসলামবিদ্বেষী নানা কার্যক্রম উপমহাদেশে তাদের রামরাজত্ব প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনারই অংশ।
কিন্তু, ভারতে ইসলামবিদ্বেষী এসকল কার্যক্রম মুসলিমদের গভীর নিদ্রায় ব্যাঘাত ঘটায়নি, সেক্যুলারিজমের ফাঁদে আটকা পড়া এ জাতি নিজ ধর্ম-ভূমি প্রতিরক্ষার দায়িত্ব আদায়ের প্রতি মনোযোগী হতে পারেনি। সে সুযোগে হিন্দুত্ববাদী জাতি একের পর এক আঘাত হেনে চলেছে, প্রকাশ্যে লিপ্ত হয়েছে ইসলামবিদ্বেষী কর্মকাণ্ডে। উপমহাদেশে রামরাজত্ব প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে অতি সম্প্রতি বাংলাদেশের চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্কুলে অবুঝ শিশুদের মাঝে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে প্রসাদ বিতরণ করেছে হিন্দুরা। এর মধ্যে, ‘ইসকন প্রবর্তক শ্রীকৃষ্ণ মন্দির’ নামে একটি ফেসবুক পেজে প্রকাশিত গত ৭/৮ই জুলাই (ভিডিওটি তাদের পেজ থেকে সরিয়ে দেওয়ায়, সঠিক তারিখটা দিতে পারছি না) এক ‘লাইভ’ ভিডিওতে দেখা যায়, চট্টগ্রামের বাকলিয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের অবুঝ বাচ্চাদের মাঝে খাদ্যবিতরণের সময় তাদেরকে ‘হরে রাম, হরে কৃষ্ণ’ বলাচ্ছে হিন্দুরা![৩]
চট্টগ্রামে এর আগেও হিন্দুত্ববাদীদের সন্ত্রাসী কার্যক্রম লক্ষ্য করা গিয়েছে। ২০১৬ সালে কুরবানীর ঈদে চট্টগ্রামের হালিশহরে উগ্র হিন্দুরা গরু কোরবানিতে বাধা দেয় এবং গরু জবাই করলে মুসলিমদের গর্দান ফেলে দেয়ার হুমকি দিয়েছিলো সেখানকার উগ্র হিন্দুরা।[৪] এছাড়া, বাংলাদেশে সন্ত্রাসবাদী মুশরিক ‘হিন্দু সেনা’দের কার্যক্রম সম্পর্কেও রয়েছে বিভিন্ন তথ্য।
এসব কিছুই উপমহাদেশে ‘রামরাজত্ব’ প্রতিষ্ঠা কার্যক্রমের অংশ। কিন্তু উগ্র হিন্দুদের এসকল কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে মুসলিমদের নিরবতা বড়ই দুঃখজনক। আরো আফসোসের বিষয় হলো হিন্দুস্তানের যুদ্ধের ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দেওয়া সুস্পষ্ট ভবিষ্যদ্বাণীর ব্যাপারে সন্দেহ-সংশয় সৃষ্টি করার অপচেষ্টায় লিপ্ত হওয়া। এ শ্রেণির লোকদের জেনে রাখা উচিত, ‘গাজওয়াতুল হিন্দ’ সম্পর্কে কোন ভবিষ্যদ্বাণী হাদিসে যদি নাও থাকতো, তবুও বর্তমান পরিস্থিতিই আমাদেরকে এক বিশাল যুদ্ধের ইঙ্গিত দিচ্ছে!
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালা আমাদেরকে ইসলামী শরীয়ার আলোকে বাস্তব পরিস্থিতির প্রতি লক্ষ্য রেখে করণীয় নির্ধারণ করার এবং এর উপর আমল করার তৌফিক দান করুন।
তথ্যসূত্র:
[১] https://www.aljazeera.com/indepth/opinion/white-supremacists-hindu-nationalists-alike-181212144618283.html
[২] https://www.youtube.com/watch?v=xFOzd_V2RiQ
[৩] https://archive.org/details/video_20190717
[৪] https://youtu.be/xxTlESj4dOU
লেখক: খালিদ মুন্তাসির, সম্পাদক, আল-ফিরদাউস নিউজ ।
স্কুল শিশুদের ‘হরে কৃষ্ণ, হরে রাম’ বলানোর ভিডিও দেখুন-
বাংলাদেশের আলেম সমাজ যতদিন তাদের খানকা, মাদ্রাসা, দরবার, পীর, মুরিদ, চাকরী নিয়ে থেকে কুরআনুল কারিমের সঠিক ব্যাখ্যা জনগনকে না জানাবে, যতদিন পর্যন্ত তারা তাগুতের ভয়ে তাগুতের গোলামী করে যাবে, যতদিন পর্যন্ত মুজাহিদীন দের জযবাদী- বেয়াদব ইত্যাদি বলে কটাক্ষ করে জিহাদ বিমুখ থাকবে ততদিন এ দেশে আলেমদের সম্মান দিন দিন কমতে থাকবে, জনগন তাদের প্রতি বিদ্বেষী হয়ে উঠবে, একসময় তাদের এই দ্বীন পরিবর্তনের কারনে আল্লাহ সুবাহানুতায়ালা তাদের উপর জালেম হিন্দুদের আধিপত্য দিয়ে দিবে, হিন্দুদের দিয়ে তখন আলেম সমাজকে আল্লাহ সুবাহানুতায়ালা সায়েস্তা করবেন, ততদিন পর্যন্ত তাদের উপর নির্যাতনের স্টিম রোলার চলবে যতদিন না তারা আল্লাহর দ্বীনের পথে জিহাদের পথে ফিরে না আসবে৷