দিল্লি গণহত্যা ‘ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়’ : হিন্দুত্ববাদের দালাল সরকারের পরিচয়

0
1978
দিল্লি গণহত্যা ‘ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়’ : হিন্দুত্ববাদের দালাল সরকারের পরিচয়

সম্প্রতি ভারতের দিল্লিতে হিন্দুদের চালানো গণহত্যার পর এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের তাগুত সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে সাংবাদিকরা দিল্লীর গণহত্যা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে সে উত্তর দেয়: আজ দিল্লীতে যা ঘটছে, সেটা ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়, এ নিয়ে আমরা কেন অযথা নাক গলাতে যাবো??
মুসলিমদের বিরুদ্ধে এমন গণহত্যা চালানোর সময়ই ভারতের মুসলিম হত্যার কসাইকে বাংলাদেশে আমন্ত্রণের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে এই মন্ত্রী বলে:
ভারতকে আমন্ত্রণ জানানোর মূল কারণ-তারা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময় সহযোগিতা করেছে। আমাদের শরণার্থীদের সাহায্য করেছে। ভারতই আমাদের অস্ত্র ও ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করেছে। সর্বোপরি মিত্রবাহিনী ও মুক্তিবাহিনীর যৌথ কমান্ডে মুক্তিযুদ্ধের শেষ অংশে আমরা বিজয় ছিনিয়ে এনে ছিলাম। এখানে আমাদের রক্তের সঙ্গে ভারতের রক্ত মিশে আছে। কাজেই ভারতকে এই মুজিববর্ষের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ না জানানো তো অকৃতজ্ঞতার পরিচয়। পাশাপাশি অসম্পূর্ণ একটা বিষয় হিসেবে থেকে যায়।
হে আমাদের মুসলিম ভাই!
আর কখন আপনাদের সম্বিত ফিরবে? কখন বুঝবেন যে, এই হাসিনা সরকার মুসলিমদের শত্রু ও হিন্দুত্ববাদীদের দালাল?
মুসলিমদের বিরুদ্ধে এমন গণহত্যার সময় মুসলিমদের প্রতি সামান্যও সহমর্মিতা প্রকাশ করল না। অপরদিকে গণহত্যার নায়ক ও মুসলিম হত্যার কসাই নরেন্দ মোদিকে আওয়ামীলীগের অনুষ্ঠানে এনে সম্মানিত করবে!!!
এটা স্পষ্টভাবেই হিন্দুত্ববাদের দালালির বার্তা দেয়।
আজ মুসলিমদের পক্ষে অবস্থান গ্রহণের কথা উঠলে বলে, এটা ভারতের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। কিন্তু যে সময় হিন্দুত্ববাদী ভারত কাশ্মীরের ৩৭০ ধারা বাতিল করে সেখানে অবরোধ আরোপ করে এবং সেখানে মারাত্মক মানবতা বিরোধী অপরাধ সংঘটিত করার ফলে প্রতিবেশি রাষ্ট্রের সাথে যুদ্ধের সম্ভাবনা দেখা দেয়, তখন এই ইসলাম বিদ্বেষী সরকার এটা বলেনি যে, এটা ভারতের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। বরং তখন এই তাগুত সরকার নির্লজ্জভাবে প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েছে: কাশ্মীর ইস্যুতে যুদ্ধ বাধলে বাংলাদেশ ভারতের পক্ষে থাকবে। যা আওয়ামীলীগের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান বলেছে এবং প্রায় সকল পত্রিকা প্রকাশ করেছে।
শুধু তাই নয়, সে সময় বাংলাদেশের তাওহিদী জনতা কাশ্মীরের মুসলমানদের পক্ষে এবং বর্বর ভারতের বিরুদ্ধে মিছিল সমাবেশ করা শুরু করলে এই হিন্দুত্ববাদী সরকার ভারতের বিরুদ্ধে যেকোন মিছিল করা নিষিদ্ধ করে দেয়। ডিমপির প্রধান কমিশনার কুখ্যাত সন্ত্রাসী বেনজীর আহমেদ হুমকি দেয়: “ভারতের বিরুদ্ধে যেকোন মিছিল সমাবেশ করলে তা কঠিনভাবে দমন করা হবে।”
হে আমাদের মুসলিম ভাইয়েরা!
একটু চিন্তা করে দেখুন, যেখানে আজ সমস্ত বিশ্ববাসীর নিকট এটা স্পষ্ট যে, মোদির নেতৃত্বে হিন্দুত্ববাদী ভারত চাচ্ছে, কাশ্মীর ও ভারত থেকে মুসলিমদেরকে নিঃশেষ করে দিয়ে সেখানে অখণ্ড রামরাজত্ব কায়েম করতে, সেখানে এই মালউন হিন্দুত্ববাদী হাসিনা সরকার সেই যুদ্ধে হিন্দুত্ববাদী ভারতের পক্ষে থাকার স্পষ্ট ঘোষণা দিলে তা কী ইঙ্গিত বহন করে??
দিল্লীর চলমান গণহত্যায় মুসলিমদের প্রতি সামান্য সহানুভূতি প্রকাশ না করে ঠিক সে সময় সেই মুসলিম হত্যার কসাইকে বাংলাদেশ এনে সম্মানিত করা কীসের ইঙ্গিত বহন করে??
যে সময় সীমান্তে একের পর এক ভারতের বি এস এফের হাতে বাংলাদেশী মুসলিমদেরকে বিনা বিচারে প্রাণ দিতে হচ্ছে, সে সময় ভারতের সরকার নামধারী মূর্খ সন্ত্রাসীকে বাংলাদেশে এনে বন্ধুত্বের উপহার দেয়া কিসের প্রমাণ বহন করে???
হে আমাদের মুসলিম ভাইয়েরা!
আরো একটু চিন্তা করুন, যারা কাশ্মীর গণহত্যায় হিন্দুত্ববাদীদের পক্ষে থাকে, তারা দিল্লী গণহত্যায় কাদের পক্ষে??
যারা ভোলায় রাসূলকে অবমাননাকারী হিন্দুকে রক্ষা করার জন্য নিজেরা মিথ্যা নাটক বানিয়ে দেয় আর প্রতিবাদকারী মুসলিম জনতাকে হত্যা ও নির্যাতন করে, তারা দিল্লীর গণহত্যায় কাদের পক্ষে??
যারা বাংলাদেশে ইসলামের বিরুদ্ধে হিন্দুদের প্রতিটি অপরাধে হিন্দুদের পক্ষ নিয়ে মুসলমানদেরকে নির্যাতন করেছে, তারা দিল্লী গণহত্যায় কাদের পক্ষে???
হে আমাদের মুসলিম ভাইয়েরা!
আপনাদের নিকট যতই আশ্চর্যজনক মনে হয়, যতই অবিশ্বাস্য মনে হয়, কিন্তু বাস্তবতাকে মেনে নিতে পারলেই আপনারা সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারবেন।
এ সকল ঘটনাগুলোর মাধ্যমে মুখোশের আড়ালে হাসিনা সরকারের বীভৎস চেহারা প্রকাশিত হয়ে পড়ে। এই হাসিনা সরকার ইসলাম ও মুসলিমদের প্রতি চরম বিদ্বেষী, ইসলাম ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে ভয়ংকর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। ওরা আসলে অসাম্প্রদায়িক বা ধর্মনিরপেক্ষ নয়। ওরা অসাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মনিরপেক্ষতার আড়ালে চরম মুসলিম বিদ্বেষী সাম্প্রদায়িক এবং কট্টর হিন্দুত্ববাদী। ওদের রক্তের সাথে হিন্দুত্ববাদের রক্ত মিশে আছে, যেমনটা মুনাফিক ওইবায়দুল কাদের নিজেই বলেছে।
তাই ওরা বাংলাদেশে একটির পর একটি আইন করে বাংলাদেশে আবহমানকাল ধরে চলে আসা ইসলামী রীতি-নীতি, সভ্যতা ও লজ্জা-শরম সব উঠিয়ে দিতে চায়। আর পহেলা বৈশাখসহ নানা হিন্দুয়ানী উৎসবকে উৎসব সবার বলে প্রচার করে।

হে আমাদের মুসলিম ভাইয়েরা!

আপনারা লক্ষ্য করে দেখুন- ওরা একদিকে ৯০% মুসলিম জনগণের জাতীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদের বিদ্যুৎ বিল একটুও মাফ করে না, অপরদিকে ১০% হিন্দুদের জাতীয় প্রতিষ্ঠান মন্দিরের পূজা উপলক্ষে ফ্রি বিদ্যুৎ সরবরাহ করে।
একদিকে রাস্তা সংস্কার ও পার্কের সৌন্দর্য বর্ধনের নামে ও সরকারী জায়গা বলে অসংখ্য মসজিদকে শহীদ করে দেয়, অপর দিকে মন্দিরের জন্য রাস্তা ঘুরিয়ে নেয়, মন্দিরের জমির জন্য অর্থ বরাদ্দ দেয়।
একদিকে ৯০% মুসলিমের দেশে একুশে বইমেলায় ইসলামী বই স্টল উঠা নিষিদ্ধ করেছে, অপরদিকে কট্টর হিন্দুত্ববাদী ইসকনের ইসলাম বিদ্বেষী বইস্টলের অনুমোদন দিয়েছে।

ওরা বাংলাদেশের মুসলিম জনগণেরও চরম শত্রু। তাই ভারত পেয়াজ রফতানী বন্ধ করে দিয়ে বাংলাদেশের মুসলিম জনগণকে ৩০০ টাকা কেজি পেয়াজ খেতে বাধ্য করলেও সেই হিন্দুত্বাবাদী ভারতীয় সরকারকে আমন্ত্রণ জানিয়ে সম্মানিত করে।
বাংলাদেশী মুসলমানদের জন্য নির্দিষ্ট সময়ে ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ করলেও একই সময়ে ভারতীয় হিন্দু জেলেদের জন্য অবাধে মাছ শিকার করার অঘোষিত সুযোগ করে দেয়।
একদিকে প্রতিদিন সীমান্তে হিন্দুত্ববাদী বিএসএফের হাতে বাংলাদেশী মুসলিমের প্রাণ ঝরছে, অপরদিকে সে সময়ই হিন্দুত্ববাদী সরকারকে নিজ দেশে আমন্ত্রণ জানিয়ে সম্মানিত করছে।
একদিক হিন্দুত্ববাদী ভারত বর্ষাকালে বাধ ছেড়ে দিয়ে ও শীতকালে আটকে দিয়ে বাংলাদেশী মুসলিম জনগণের কৃষিজ উৎপাদন শেষ করে দিচ্ছে, অপরদিকে এই হিন্দুত্ববাদী হাসিনা সরকার ওদেরকে বাংলাদেশের ফেনী নদীর পানি দিয়ে দিচ্ছে।
আর এগুলোতে হিন্দুরা কিছুটা আক্রান্ত হলেও তাদেরকে সর্বত্র চাকরি সুবিধা ও আরো বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার মাধ্যমে পুষিয়ে দিচ্ছে।
অতএব, হে আমাদের ভারত ও বাংলাদেশের ইসলামের যুবকগণ!! আপনারা আর কতকাল ধোঁকায় পড়ে থাকবেন??? আর কতকাল চরম সাম্প্রদায়িকদের মুখে অসাম্প্রদায়িকতার মুনাফেকী বুলি শুনতে থাকবেন? এবার আপনারাও জেগে উঠুন!
আপনারা কি আপনাদের মুসলিম ভাই-বোনদের রক্ষা করবেন না?? আপনারা কি আপনাদের নবীর সম্মান রক্ষা করবেন না??? তাহলে আর কার অপেক্ষায় বসে আছেন?? মনে রাখবেন, আপনার আমার মত একনিষ্ঠ মুসলিমগণ ব্যতীত কেউ এতে এগিয়ে আসবে না। কোন মুনাফিক শাসক দ্বারাই বাস্তব কোন কাজ হবে না।
তাই আপনারা জেগে উঠুন!! জেগে উঠুন মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবীগণের মত। জেগে উঠুন তালেবানদের ন্যায় অস্ত্রহাতে। ঝাঁপিয়ে পড়ুন জিহাদের ময়দানে। বিজয় আপনাদেরই পদচুম্বন করবে বিইযনিল্লাহ।


লেখক: সালাহউদ্দীন আহমাদ, ইসলামী চিন্তাবিদ।

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধদিল্লি গণহত্যা নিয়ে মিডিয়ার রিপোর্টে ভারতীয় মালাউন পুলিশের গোঁসা!
পরবর্তী নিবন্ধকরাচিতে ৫ তলা ভবন ধসে নিহত ১১ আহত ৩০