১৯৯০ সালের ৭ই অক্টোবর। লাদাখ সফর শেষে লরা জেন ল্যাম্বি শ্রীনগরে এসেছিলো নিজের তিন বান্ধবীর সাথে। তারা অবস্থান করছিলেন ডাল লেকের একটি তীরে রাখা হাউজবোটে। কিন্তু তখনও তিনি জানতেন না যে সামনে তার ভাগ্যে কি ঘটতে যাচ্ছে।
১৯৬৬ সালে জন্ম নেওয়া ২৪ বছর বয়সী মিস লরা জেন ল্যাম্বি ছিল একজন কানাডিয়ান। সে ছিল কৃষি বিজ্ঞানের একজন ছাত্রী। ১১ই অক্টোবর শ্রীনগরের বুলেভার্ডে বেড়াতে আসে সে। কিন্তু ততক্ষণে সন্ধ্যা নেমে যায়। সেন্টুর হোটেলের কাছে তিনজন স্থানীয় কাশ্মীরি যুবকের সাথে কথা বলছিলো লরা। কাশ্মীরে কি ঘটছে না ঘটছে সেই সম্পর্কে যুবকদের জিজ্ঞাসা করছিলো সে। ঠিক তখনই একটি সাদা মারুতি গাড়ি আসে তার সামনে। সেই গাড়িতে আরোহন করছিলো ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল সিকিউরিটি গার্ডের (এমএসজি) নিরাপত্তা কর্মীরা। অটোমেটিক রাইফেল (স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র) দ্বারা সজ্জিত ছিলো তারা এবং সেই সাথে তারা বহন করছিলো ওয়াকিটকিও। আরোহনকারীদের একজন লম্বা-পাতলা নিরাপত্তা কর্মী লরাকে স্থানীয় মুসলিম যুবকদের সাথে কথা বলতে নিষেধ করে। সেই সাথে লরাকে বলে- “এরা সবাই (মুসলিমরা) খুবই ভয়ানক সন্ত্রাসী। এরা (মুসলিমরা) নির্জন কোন স্থানে নিয়ে আপনার শ্লীলতাহানিও করতে পারে।”
নিরাপত্তা কর্মীরা লরার পরিচয় জিজ্ঞাসা করলে লরা জানায় যে সে একজন ‘কানাডিয়ান’। এ কথা শুনে নিরাপত্তা কর্মীরা তাকে বলে “আপনাকে আমাদের সাথে থানায় যেতে হবে” এবং এই বলে তারা লরাকে গাড়ীতে তুলে নেয়। কিন্তু থানায় যাবার বদলে তাকে তারা নিয়ে যায় ওবেরয় প্যালেস হোটেলে নামক একটি হোটেলে। হোটেলের বার বন্ধ থাকায় তারা সেখানে নিজেদের বোতলে থাকা মদ খেতে থাকে। নিরাপত্তা কর্মীরা লরাকে মদ খাবার আমন্ত্রণ জানালে সে তা নাকচ করে দেয়। লরাকে তখন তার হাউজবোটে ফিরে যাবার নির্দেশ দেয় তারা। আর সেই সাথে ‘কাশ্মীরি জঙ্গিরা তাকে যে কোন জায়গায় হত্যা করতে পারে’ বলে ভয় দেখায় তারা।
তখন তারা লরার পার্সটি তারা ছিনিয়ে নেয়। এরপর তাকে চশমা শাহির কাছের একটি বাগানে নিয়ে যাওয়া হয়। তখন ছিলো ১২ই অক্টোবর রাত ১টা।
নিরাপত্তা কর্মীদের একজন লরাকে তার পোশাক খুলে ফেলার নির্দেশ দেয়। কিন্তু লরা সে নির্দেশ অমান্য করে। এরপর লরার পোশাক ছিঁড়ে ফেলা হয় এবং তাকে মাটিতে ফেলে গণধর্ষণ করা হয়। খোলা আকাশের নিচে অসহায় লরার আর্তনাদ শোনার মতো কেউ ছিলো না। তবে ঘটনাস্থল থেকে মাত্র কয়েকশো গজ দূরেই রাজভবনে অবস্থান করছিলো স্টেট গভর্নর গিরিশ সাক্সেনা, যে তখন ঘুমিয়ে ছিলো। যার কারণে নিরাপত্তা কর্মীরা লরাকে পাশের আরেকটি বাগানে নিয়ে যায়, যেখানে অসহায় লরার ওপর পাঁচজন নিরাপত্তা কর্মী নির্মম গণধর্ষণ চালাতে থাকে। অবশেষে লরা তার জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।
আধো-চেতন লরাকে এরপর রাস্তার একটি ধারে ফেলে দেওয়া হয়। ঠিক সেই জায়গা থেকে কিছুটা দূরে তাকে ফেলা হয়, যেখান থেকে আগের দিন সন্ধ্যায় তাকে তুলে নেওয়া হয়েছিলো। স্থানীয়রা তাকে দেখার পর নেহেরু পার্কের একটি থানায় নিয়ে যায়। সেখানে ‘রণবীর দণ্ডবিধির’ ৩৬৬ ও ৩৭৬ ধারায় প্রথম তথ্য প্রতিবেদন নং ৯০/৪০ এর অধীনে অপহরণ ও ধর্ষণের অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করা হয়। পুলিশ কর্মকর্তারা লরাকে ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য যেতে বললে তাকে শ্রীনগরের ‘লাল ডেড মহিলা হাসপাতালে’ নেওয়া হয়। একজন পুরুষ ডাক্তার লরার পরীক্ষা করতে আসলে লরা চেঁচিয়ে উঠে এবং বলে- “তোমরা সমস্ত ভারতীয় পুরুষরা হলে খচ্চর। আমাকে পরীক্ষা করার অনুমতি আমি তোমাকে দেবো না। এরপর দুইজন মহিলা ডাক্তার তার পরীক্ষা করে। পরীক্ষা করার পর তার জরায়ুতে কিছু মৃত শুক্রাণু পাওয়া যায়। সেই সাথে তার উরুতে, বাহুতে এবং স্তনে আঁচড়ের দাগ ছিলো, যা এই কথা প্রমাণিত করে যে তাকে ধর্ষণ করা হয়েছে।
সাক্ষাৎকারে সাংবাদিকদের লরা জেন ল্যাম্বি সেই রাতের ঘটনার বিবরণ দেয় এবং বলে যে তাকে কতটা নিষ্ঠুরভাবে ধর্ষণ করা হয়েছিলো। বিষয়টি এরপর রাজ্যের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আনা হয়। সেই সাথে নয়াদিল্লীতে অবস্থিত কানাডিয়ান হাই কমিশন দ্বারা বিষয়টি ভারতের তৎকালীন সরকারের কাছেও তুলে ধরা হয়। রাজ্য পুলিশ এরপর সেই নিরাপত্তা রক্ষীদের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করে। এরপর চৌষট্টি জন নিরাপত্তা রক্ষীর একটি ব্যাচ লরার সামনে প্যারেড করে এবং সেখান থেকে দুইজনকে লরা সনাক্ত করে যারা ঘটনার পর নিজেদের দাড়ি কেটে ফেলে। রাজ্য কর্তৃপক্ষ লরাকে তাদের হেফাযতে রাখে এবং ১৩ই অক্টোবর তাকে রাজ্যের গভর্নরের সাথে দেখা করার অনুমতি দেওয়া হয়। সেখানে তাকে আশ্বাস দেওয়া হয় অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবার। কানাডিয়ান সরকারের চাপে পড়ে রাজ্য কর্তৃপক্ষ তখন এতটাই দ্রুততার সাথে অপরাধীদের পাকড়াও এবং শাস্তি দেওয়ার কাজটি সম্পাদন করে যে, এটি এখনও একটি রেকর্ড হয়ে আছে।
মূলত কানাডিয়ান নারী লরার গণধর্ষণের ঘটনাটি হয়ে উঠে কাশ্মীরের ধর্ষিতা মুসলিম নারীদের অসহায়ত্ব পরিমাপের একটি স্কেল। এই ঘটনা থেকে এটা প্রমাণ করে দেয় যে, দখলদার ভারতীয় নরপশুগুলো যদি একজন কানাডিয়ান নারীর সাথে এমন আচরণ করতে পারে নির্দ্বিধায়, তাহলে একজন মুসলিম নারীর ক্ষেত্রে তারা কতোটা হিংস্র হতে পারে!
এখানেই পার্থক্য একজন বিদেশী নারীর এবং একজন কাশ্মীরি মুসলিম নারীর ধর্ষণের ঘটনায়। মুসলিম নারীদের ধর্ষণের ঘটনাকে অভিহিত করা হয় শুধুমাত্র একটি ‘অভিযোগ’ হিসেবে।
সময়ের স্রোতে তাই অদেখা রয়ে যায় কাশ্মীরের অসহায় মুসলিম নারীদের সেই অশ্রুগুলি।
অনুবাদক : আবু উবায়দা
মূল সূত্র :
https://tinyurl.com/2zxvv5dm
আল্লাহর কসম,যতোদিন ওই মালাউন রা নিচচিন্ন না হচ্ছে আমরা ক্ষন্ত হবো না,, ইনশাআল্লাহ