গৃহকর কয়েক শত গুণ বাড়িয়েছে সিলেট সিটি করপোরেশন, বিপাকে নগরবাসী

0
101

সিলেট নগরের পাঠানপাড়া এলাকায় চারতলা ভবন রয়েছে শেখ আবদুল গফুর নামের এক ব্যক্তির। তিনি এখন প্রয়াত। ২০১৬ সালে নির্মিত এ ভবনে ১২টি ফ্ল্যাট আছে। গফুরের পরিবার নিজেদের বসবাসের জন্য একটি বাদে অপর ফ্ল্যাটগুলো বিক্রি করে দিয়েছেন। এ ভবনের জন্য আগে বছরে ৬০০ টাকা গৃহকর দেওয়া হতো। কিন্তু পঞ্চবার্ষিক কর পুনর্মূল্যায়নের পর তাদের বার্ষিক গৃহকর (হোল্ডিং ট্যাক্স) ১ লাখ ৫৬ হাজার ৬০০ টাকা নির্ধারণ করেছে সিটি করপোরেশন, যা আগের চেয়ে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৬১ গুণ।

নগরের প্রায় পৌনে এক লাখ ভবনমালিকের গৃহকর ৫ থেকে ৫০০ গুণ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে বলে অভিযোগ করছেন ভুক্তভোগীরা। একাধিক ভবনমালিক জানান, গত ৩০ এপ্রিল থেকে সিটি করপোরেশন নতুন নির্ধারিত গৃহকর অনুযায়ী ভবনমালিকদের গৃহকর পরিশোধের নোটিশ দেওয়া শুরু করে। একলাফে ‘অসহনীয়ভাবে’ গৃহকর বৃদ্ধিতে বিপাকে পড়েছেন ভবনমালিকেরা। এ নিয়ে তৈরি হয়েছে ক্ষোভ ও অসন্তোষ। নগরবাসী দ্রুত এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি তুলেছে।

সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী প্রথম আলোকে বলে, ২০১৯-২০ সালে ভবনগুলোর আয়তন ও ধরন অনুযায়ী নতুনভাবে গৃহকর নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে কারও আপত্তি থাকলে তারা তা আবেদন করে জানাতে পারবেন। আবেদন রিভিউ বোর্ডে শুনানির মাধ্যমে যৌক্তিকভাবে নিষ্পত্তি করা হবে।

করপোরেশনের রাজস্ব শাখা জানিয়েছে, নতুন গৃহকরে আবাসিক ভবনের প্রতি বর্গফুট পাঁচ টাকা ও বাণিজ্যিক ভবনের প্রতি বর্গফুটের জন্য আট টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর আগে সুর্নির্দিষ্ট কোনো নীতিমালার আলোকে গৃহকর আদায় করা হয়নি। তবে একটি সূত্র জানিয়েছে, আগে আবাসিক ভবনের প্রতি বর্গফুট তিন টাকা ও বাণিজ্যিক ভবনের প্রতি বর্গফুটের জন্য পাঁচ টাকা নির্ধারিত ছিল; যদিও মেয়রের কাছে আবেদন করে অনেকে এর চেয়ে কম গৃহকর দিতেন।

ভবনমালিকদের অভিযোগ, পুনর্মূল্যায়নের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন আছে। অনেক আবাসিক কাঁচা কিংবা আধা পাকা ভবনের ক্ষেত্রেও ১০ থেকে ৫০ গুণ পর্যন্ত গৃহকর অযৌক্তিকভাবে বাড়ানো হয়েছে।

সোমবার বেলা সাড়ে তিনটায় নগর ভবনে গিয়ে প্রথম আলোর প্রতিবেদক দেখেছেন, কয়েক শ মানুষ নতুন গৃহকরের নোটিশ হাতে অসন্তোষ জানাচ্ছেন। তারা করপোরেশনের অস্থায়ী বুথে আপত্তি জানিয়ে আবেদনপত্র দাখিল করছেন।

কুমারপাড়া এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ তৌফিক এলাহী চৌধুরী জানান, তার টিনশেডের বাসায় পরিবার নিয়ে তিনি থাকেন। আগে বছরে ৭০০ টাকা গৃহকর দিতেন। এখন তাকে ৪ হাজার ৩২০ টাকা দিতে বলা হয়েছে। অথচ তার বাসার ধরন কিংবা আয়তন—কোনোটাই বদলায়নি।

২৭ নম্বর ওয়ার্ডের বন্দরঘাট এলাকার পানের দোকানদার মো. আবদুর রহিমের একটি টিনশেড বাসা আছে। আগে তিনি বছরে ১২০ টাকা গৃহকর দিতেন। এখন তার গৃহকর নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ হাজার ৯২০ টাকা। রহিম জানান, তার আয়ের টাকায় সংসারই ঠিকমতো চলে না, এখন নতুন করে করের বোঝা তাকে ভাবাচ্ছে।

নতুন গৃহকরের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বিভিন্ন সংগঠন প্রতিবাদী কর্মসূচি পালন শুরু করেছে। অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও সমালোচনা করছেন।


তথ্যসূত্র:
১. গৃহকর বেড়েছে কয়েক শ গুণ, নগরবাসীর হাঁসফাঁস
https://tinyurl.com/zhsfaksr

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধস্বাস্থ্যসেবা খাতেও পিছিয়ে নেই ইমারতে ইসলামিয়া আফগানিস্তানের অগ্রগতি
পরবর্তী নিবন্ধগুজরাটে ৫০০ জনেরও বেশি মুসলিমকে উচ্ছেদ ও ভোটার তালিকা থেকে নাম বাতিল