বিজেপি শাসিত ভারতের উত্তরাখণ্ড রাজ্যে বিতর্কিত অভিন্ন দেওয়ানি বিধি কার্যকর করা হয়েছে। এই আইন ধর্মভিত্তিক পারিবারিক বিধান বাতিল করে বিবাহ, তালাক, উত্তরাধিকার, ভরণপোষণ, দত্তক নেওয়ার মতো বিষয়গুলোতে অভিন্ন নিয়ম প্রয়োগ করবে। অর্থাৎ, সব ধর্মীয় সম্প্রদায়ের জন্য যে পৃথক পার্সোনাল ল (ব্যক্তিগত আইন) প্রচলিত ছিল, তা কার্যত বাতিল করা হয়েছে। তবে তফসিলি উপজাতিদের এই আইনের আওতা থেকে বাদ রাখা হয়েছে, যা বিজেপির দ্বৈত নীতির আরেকটি উদাহরণ।
অন্যদিকে, এ আইনের অধীনে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের (লিভ-ইন টুগেদার) বৈধতা দেওয়া হয়েছে, তবে এ ধরনের সম্পর্কের নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
গত ২৭ জানুয়ারি এক সংবাদ সম্মেলনে উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামি দাবি করেছে, নতুন আইন সমাজে ‘সমতা’ আনবে এবং এ আইন কোনো ধর্মের বিরুদ্ধে নয়। তবে বাস্তবতা হলো, এই আইন বিশেষভাবে মুসলিমদের ব্যক্তিগত বিধানের ওপর আঘাত হানবে এবং তাদের ধর্মীয় স্বাধীনতা সংকুচিত করবে।
এর আগে গত বছর (২০২৪ সালে) উত্তরাখণ্ড বিধানসভায় আইনটি পাস করা হয়, যেখানে মুসলিমদের বিবাহ, তালাক ও উত্তরাধিকার সংক্রান্ত স্বতন্ত্র পারিবারিক আইন বাতিল করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। এটি কার্যকর হওয়ার পর থেকেই ভারতের মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে।
ভারতের বৃহত্তম মুসলিম সংগঠন জমিয়ত উলামা-ই-হিন্দ এই আইনকে ‘নাগরিকদের ধর্মীয় স্বাধীনতার ওপর সরাসরি আঘাত’ বলে আখ্যায়িত করেছে। এক বিবৃতিতে তারা বলেছে, এই আইন পুরোপুরি বৈষম্যমূলক ও পক্ষপাতদুষ্ট। সংগঠনটি জানিয়েছে, তারা এই আইনকে উত্তরাখণ্ড হাইকোর্ট ও ভারতের সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জ করবে।
অল ইন্ডিয়া মুসলিম ওমেন অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আসমা জেহরা এই আইনকে ‘মুসলিম নারীদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘এই পদক্ষেপ মুসলিম নারীদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে, কারণ এটি রাজ্যের আইন ও তাদের ধর্মীয় বিশ্বাসের মধ্যে সংঘর্ষ ঘটাবে।’
সিনিয়র আইনজীবী গীতা লুথরা বলেছেন, এই আইন নাগরিকদের ব্যক্তিগত স্বাধীনতা ও গোপনীয়তার অধিকারের পরিপন্থী। তিনি আরও বলেন, রাষ্ট্রের উচিত নয় মানুষের ব্যক্তিগত সম্পর্কের ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ করা।
ভারতে বিজেপি সরকার যেভাবে মুসলিমদের ধর্মীয় আইন, সংস্কৃতি ও জীবনধারার ওপর একের পর এক আঘাত হানছে, তা কার্যত হিন্দুত্ববাদী আধিপত্য প্রতিষ্ঠার প্রকল্পে পরিণত হয়েছে। এই আইন মুসলিমদের ঐতিহ্য মুছে ফেলার একটি ষড়যন্ত্র, যা ভারতের তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষতারও পরিপন্থী।
তথ্যসূত্র:
1. India’s BJP-ruled Uttarakhand implements ‘totally biased’ common civil code
– https://tinyurl.com/tnp4vv7u
