জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের বিশেষ অধিবেশন থেকে ফিলিস্তিনি প্রতিনিধিকে বহিষ্কার

1
757
জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের বিশেষ অধিবেশন থেকে ফিলিস্তিনি প্রতিনিধিকে বহিষ্কার

কুফ্ফার জাতিসংঘে দখলদার ইসরাইলি রাষ্ট্রদূতের মিথ্যাচারের সমালোচনা করায় এক ফিলিস্তিনি সাংবাদিককে জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের বিশেষ অধিবেশন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

পূর্ব জেরুজালেমের শাইখ জাররাহ থেকে সাংবাদিক ও এক্টিভিস্ট মুনা আল কুর্দ মজলুম ফিলিস্তিনিদের পক্ষে জাতিসংঘের সে অধিবেশনে অংশ নিয়েছিলেন।

উল্লেখ্য, পূর্ব জেরুজালেমের মুসলিম অধ্যুষিত শাইখ জাররাহ এমন এলাকা, যেখানের ফিলিস্তিনি মুসলিম পরিবারগুলো দখলদার ইসরাইল কর্তৃক নিজ বসতি থেকে উচ্ছেদের শংকায় দিনযাপন করছেন।

জানা যায়, গত ২৭ মে বৃহস্পতিবার, পাকিস্তানের আহবানে ইসলামিক সহযোগী সংস্থা এবং ওআইসি ফিলিস্তিনের সমর্থনে জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদে একটি বিশেষ অধিবেশন আয়োজন করে।

সে অধিবেশনে মুনা জাতিসংঘকে শাইখ জাররাহ ও অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনে অভিশপ্ত ইসরাইলিদের জাতিগত নির্মূল বন্ধের আহবান জানান।

তিনি বলেন,”আমরা কেবল জাতিসংঘের উদ্বেগ শুনতে চাই না, আমরা চাই জাতিসংঘ শাইখ জাররাহ ও ফিলিস্তিনে জাতিগত নির্মূল চিরতরে বন্ধ করুক।”

ফিলিস্তিনি প্রতিনিধি মুনা শাইখ জাররাহসহ অন্যান্য ফিলিস্তিনি ভূখন্ডে মুসলিম বসতি উচ্ছেদের লোমহর্ষক বর্ণনা দিতে গিয়ে জানান, আল কুর্দে মুনার বসত বাড়ি ইসরাইল ২০০৯ সালে জোরপূর্বক দখল করে নিয়েছে।

তিনি উল্লেখ করেন,” অবৈধ ইসরাইলি সরকার ও দখলদার সংস্থাগুলোর নিয়মতান্ত্রিক জোটবদ্ধতার কারণেই এটি সম্ভবপর হয়েছে।”

জানা যায় যে, জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার মিচেল বাচলেট অধিবেশনটির উদ্বোধন করেছিল; যেখানে সে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরাইলের সাম্প্রতিক আগ্রাসনে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছিল, “ইহুদিরা যুদ্ধাপরাধ করতে পারে কিন্তু নিরপরাধ মুসলিমদের আবাসস্থল লক্ষ্য করে ইসরাইলের বোমাবর্ষণের কোন প্রমাণ নেই।”

জেনেভায় জাতিসংঘের ইসরাইলি রাষ্ট্রদূত মিরা আইলন শাহারও উক্ত সমাবেশে ইসরাইলের পক্ষে বক্তব্য রাখে।

ফিলিস্তিন প্রতিনিধি মুনা বলেন, ‘তিনি জানতেন না যে, কোনো ইসরাইলি রাষ্ট্রদূত উক্ত সমাবেশে উপস্থিত থাকবে। যদি তিনি জানতেন, তবে এই অধিবেশনে উপস্থিত হওয়া ও কথা বলা থেকে বিরত থাকতেন। অধিবেশনে ইসরাইলি রাষ্ট্রদূত ইসরাইল ও ফিলিস্তিনি রাজনৈতিক দল হামাসের মধ্যকার নৈতিক মূল্যবোধ নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে বিভিন্ন রাষ্ট্রকে দোষারোপ করেন।

ইসরাইল রাষ্ট্রদূত বলে,”জাতিসংঘ ইসরাইলের প্রতি সর্বদা পক্ষপাতদুষ্ট ছিল।” সে আরো বলে,”জাতিসংঘ তার সূচনা থেকে সব বিশেষ অধিবেশনে ৩০% সময় ইসরাইলকেই লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছে।”

“জাতিসংঘ নৈতিক কন্ঠস্বর হওয়ার পরিবর্তে দ্ব্যর্থহীনভাবে বলছে যে, ইসরাইলের নিজের প্রতিরক্ষার অধিকার আছে আর সন্ত্রাসী কার্যকলাপের জন্য হামাসকে শুধু নিন্দা জানিয়েছে।” “আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রত্যক্ষ করেছি, সত্য ও বাস্তবতা বিবেচনা না করে ইসরাইলকেই একাকীভাবে টার্গেট করা হচ্ছে।”

ফিলিস্তিন প্রতিনিধি মুনা তখন ইসরাইলি রাষ্ট্রদূতের মিথ্যাচারের জবাব দিতে চেয়েছিলেন।
মুনা বলেন,”যদি আমি ইসরাইলি রাষ্ট্রদূত যেসব মিথ্যা দাবি করছে তার জবাব দেই, তবে তারা আমাকে অধিবেশন থেকে সরাসরি বহিষ্কার করবে।”

তাই মুনা প্রকাশ্য জবাব দেয়ার পরিবর্তে অনলাইনে একটি মন্তব্য করেন,”আমি ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীকে বলতে চাই যে, তোমরা সন্ত্রাসী। তোমরাই তারা, যারা নিরাপরাধ নাগরিক ও তাদের ঘরবাড়িতে বোমা মেরে আক্রমণ করো, তোমরা আমাদের ভূমি শাইখ জাররাহ ও সিলওয়ানে আক্রমণ করেছ, তোমরা আমাদের ভূমি চুরি করেছ। দখলদারিত্বের এই খেলা বন্ধ করো। সারা বিশ্ব তোমাদের কুৎসিত বাস্তবতা জানে। তোমাদের নিজেদের ইজ্জত সংবরণ করে, আমাদের ভূমি থেকে চলে যাও।”

মন্তব্য করার পর, জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদ সচিবালয়ের দায়িত্বে থাকা এরিক টিস্তোনেট মুনাকে একটি বার্তা পাঠিয়ে বলে,”পরিষদের আলাপচারিতা কক্ষে কাউকে নেতিবাচক মন্তব্য করার অনুমতি জাতিসংঘ দেয় না। এখানে কূটনীতিক ও পদ্ধতিগত মন্তব্য করাই কাম্য। যদি পারেন তবে দয়া করে মন্তব্যটি ডিলিট করুন। যদি না করেন, তবে অধিক মন্তব্য করা থেকে বিরত হোন। ”

ফিলিস্তিনি প্রতিনিধি মুনা বলেন, দখলদার ইসরাইলি বিরোধী মন্তব্যটি ডিলিট না করায়, দুই মিনিট পর জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদ তাকে উক্ত বিশেষ অধিবেশন থেকে বহিষ্কার করে।

উল্লেখ্য, ফিলিস্তিন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় মতে, অবরুদ্ধ গাজায় জয়োনিস্ট ইসরাইলের ন্যাক্যারজনক বিমান হামলায় ৩৯ জন নারী, ৬৬ শিশু সহ কমপক্ষে ২৫৪ জন নিরপরাধ মুসলিম নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন প্রায় দুই হাজার ফিলিস্তিনি।

১টি মন্তব্য

  1. আমাদের মুসলিমদের কবে সঠিক বোধোদয় হবে!?

    আমাদের কিছু মুসলিম ভাই এখনও এই ধারণা করে বসে আছেন যে, জাতিসংঘ এই সমস্যার সমাধান করবে। কিন্তু এটা কখনোই বাস্তবায়িত হবে না। আমাদের অধিকার আমাদেরকেই আদায় করে নিতে হবে।

    কোনো কাফের কখনোই মুসলিমদের কল্যাণ চাইবে না। এই কথাটা আমাদেরকে সব সময় মাথায় রাখা উচিত। আর জাতিসংঘের সব হর্তাকর্তারা হলো কাফির, মুশরিক ও মুরতাদ।

    আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা মজলুম মুসলিমদের সাহায্য করুন ও মুজাহিদীনদের বিজয়কে ত্বরান্বিত করুন, আমীন ইয়া রব্বাল আলামীন।

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধসোমালিয়া | কুফ্ফার বাহিনীর উপর শাবাব মুজাহিদিনের ১২টি সফল অভিযান
পরবর্তী নিবন্ধবকেয়া বেতন পরিশোধের দাবিতে শ্রমিকদের সড়ক অবরোধ