ভারতের অন্যান্য রাজ্যের মত পশ্চিমবঙ্গেও মুসলিমদের পিটিয়ে হত্যা শুরু করেছে উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা। পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুর শহরে ৩২ বছর বয়সী মুসলিম রাজমিস্ত্রি শেখ পল্টুকে একদল উগ্র হিন্দু পিটিয়ে খুন করেছে।
খুনের ঘটনার প্রায় অর্ধমাস অতিবাহিত হয়ে গেছে। ঘটনার পর থেকেই শহরের মুসলিমরা এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছ। কিন্তু হিন্দুত্ববাদী হলুদ মিডিয়াগুলো এ ঘটনা নিয়ে রিপোর্ট করেনি। এমনকি অর্ধমাস পার হলেও এড়িয়ে যাচ্ছে হিন্দুত্ববাদী প্রশাসন।
শেখ পল্টুর পরিবারের সদস্য ও প্রতিবেশীরা জানায়, ১৫ মার্চ বেলা ১টার দিকে সাইকেলে করে বাড়ি ফেরার পথে তাকে বেধড়ক মারধর করা হয়। কয়েক ঘণ্টা পর, হিন্দু অধ্যুষিত এলাকায় রাস্তার পাশে পড়ে থাকা অবস্থায় তার লাশ উদ্ধার করা হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মুসলিম সম্প্রদায়ের এক নেতা বলেছেন যে তিনি পল্টুর দেহ “মাথা থেকে পায়ের আঙ্গুল পর্যন্ত ক্ষত-বিক্ষত” দেখতে পেয়েছেন। পুলিশের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ করে তিনি বলেন, “পুলিশ মামলাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে বলে মনে হচ্ছে। ময়নাতদন্তের পর শেখ পল্টুর লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করার সময় পুলিশ কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তাকে দাফন করতে বলে, তাও শুধুমাত্র পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে।
শেষ নিঃশ্বাস নেওয়ার আগে শেখ পল্টু তার বন্ধু রাজেশকে ফোন করেছিল। তিনি রাজেশকে বলেছিলেন যে তাকে লাঞ্ছিত করা হচ্ছে।
শেখ পল্টু রাজেশকে ফোনে বলেছিল, “দয়া করে এসে আমার জীবন বাঁচাও। তারা আমাকে বাজেভাবে মারধর করছে।” রাজেশ নিশ্চিত করেছেন যে পল্টুর আয়ের একমাত্র উৎস রাজমিস্ত্রির কাজ।
রাজেশ এটাও নিশ্চিত করেছে জে, “তিনি মোটেও চোর ছিলেন না।” অথচ এই মিথ্যা অভিযোগ তুলেই হিন্দুত্ববাদীরা তাকে খুন করেছে।
স্বামীর হত্যাকাণ্ডকে অযৌক্তিক ও অন্যায্য আখ্যা দিয়ে শেখ পল্টুর স্ত্রী আফসানা বেগম বলেছেন, “যারা তাকে কাছ থেকে চিনত তাদের কেউ বলতে পারবে না যে সে চোর ছিল। যারা হাসপাতালে তার লাশ দেখেছে তারা বলেছে তার মুখ বালিতে ভরা ছিল।” হিন্দুত্ববাদীরা অত্যন্ত কষ্ট দিয়ে শেখ পল্টুকে খুন করেছে।
এদিকে খুনি সন্ত্রাসী হিন্দুত্ববাদীদের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে মেদিনীপুরের মুসলিমরা। শুধু মুসলিম হওয়ায় তারা কখনোই বিচার পাবে না বলে মনে করছেন সচেসতন মহল। কেননা ইতিপূর্বেও এমন বহু হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা। তাদের এখনো কোন বিচার করেনি হিন্দুত্ববাদী প্রশাসন।
শেখ পল্টুর ১২ বছরের মেয়ে ও ছয় বছরের ছেলেসহ স্ত্রী আছে। তাদের আয় উপার্জনের একমাত্র মাধ্যম ছিলেন তিনি। তাকে হারিয়ে মুসলিম পরিবারটি এখন খুবই দুর্বিষহ সময় কাটাচ্ছেন।
হিন্দুত্ববাদীরা ভারতে বসবাসকারী মুসলিমদের জীবন এমনভাবেই দুর্বিষহ করে তুলেছে; হিন্দুত্ববাদের বিষবৃক্ষ উপড়ে ফেলা ব্যতীত যার থেকে মুসলিমদের মুক্তি মিলবে না বলে মনে করেন ইসলামি চিন্তাবীদগণ।
তথ্যসূত্র:
——–
1. 13 Days on, Midnapur Police Evasive on Breakthrough in Muslim Man’s Lynching
– https://tinyurl.com/4aa5nce2