বসনিয়া গণহত্যা | সাম্প্রতিক পূর্ব ইউরোপে বৃহত্তম মুসলিম গণহত্যা

মুহাম্মাদ ইব্রাহীম

0
1164

আজ থেকে ২৭ বছর আগে ১৯৯৫ সালের ১১ জুলাই জাতিসংঘের শান্তিরক্ষীদের সামনে হত্যা করা হয় ৮ হাজারেরও বেশি বসনিয় মুসলিমকে। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর এটাই ইউরোপে সংঘটিত সবচেয়ে বড় গণহত্যা ও জাতিগত নির্মূল অভিযান। ডাচ শান্তিরক্ষীদের নিস্ক্রিয়তার মুখে ও গ্রীক সেচ্ছাসেবী বাহিনীর সহায়তায় খ্রিস্টান সার্বরা এই গণহত্যা চালায়। ।

তারা ত্রিশ হাজার বসনিয়ান মুসলিমকে তাদের ঘরবাড়ি থেকেও বিতাড়িত করে সার্বরা। কন কোন জায়গায় ক্রোয়াট বাহিনী কর্তৃক মুসলিমদের উপর হত্যাকাণ্ড চালানোর প্রমাণও পাওয়া গেছে।

সার্বরা ১৯৯৫ সালের জুন মাসে সেব্রেনিৎসা ও জেপা শহরটি দখল করে নেয়; তবে সেখানে উপস্থিত জাতিসংঘের কথিত শান্তিরক্ষীদের কোনো বাধা দিতে বা কোন প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করতেই দেখা যায়নি।

জাতিসংঘের ৮১৯ নম্বর প্রস্তাবে অনুযায়ী সেব্রেনিৎসা শহরটি নিরাপদ অঞ্চল বলে ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু সার্বরা শহরটি দখল করে সেখানকার হাজার হাজার বেসামরিক মুসলিমকে হত্যা করে ও হাজার হাজার নারীকে ধর্ষণ করে। গর্ভবতী মুসলিম নারীদের পেট চিড়ে বাচ্চাকে বের করে নিয়ে আসে বর্বর সার্বরা। নিহতের সংখ্যা ৮ হাজার ছাড়িয়ে যায়। তাদের বেশিরভাগই ছিল বৃদ্ধ ও যুবক। রাতকো ম্লাদিচের নেতৃত্বাধীন সার্ব বাহিনী এই গণহত্যা চালায়।

২০০৪ সালে যুদ্ধ-অপরাধ আদালতের তথাকথিত রিপোর্টে বলা হয়, ২৫ থেকে ত্রিশ হাজার বসনীয় মুসলিম নারী ও শিশুকে জোর করে অন্য অঞ্চলে নিয়ে যাওয়া হয় এবং স্থানান্তরের সময় তাদের এক বিপুল অংশ ধর্ষণ ও গণহত্যার শিকার হয়। গণহত্যা ও নারী-শিশুদের ধর্ষণের সংখ্যা আরও অনেক বেশি বলে অন্যান্য রিপোর্টে বলা হয়েছে।

নানা সাক্ষ্য-প্রমাণে দেখা গেছে, এইসব হত্যাকাণ্ড ছিল সুপরিকল্পিত ও সংঘবদ্ধ অভিযানের ফসল। বসনিয়ার যুদ্ধ চলাকালে সার্ব সেনা ও আধাসামরিক বাহিনীর সদস্যরা কখনও কখনও কোনো একটি অঞ্চলে হামলা চালানোর পর সেখানকার সমস্ত পুরুষকে হত্যা করতো অথবা অপহরণ করতো এবং সেখানকার নারীদের ধর্ষণের পর তাদের হত্যা করতো। তারা বহুবার গর্ভবতী নারীর পেট ছুরি দিয়ে কেটে শিশু সন্তান বের করে ওই শিশুকে গলা কেটে হত্যা করেছে মায়ের চোখের সামনে এবং কখনওবা আরো অনেকের চোখের সামনেই।

আরো মর্মান্তিক ব্যাপার হল এ ধরনের হত্যাকাণ্ড ও নৃশংস পাশবিকতার বহু ঘটনা ঘটানো হয়েছে হল্যান্ডের শান্তিরক্ষীদের চোখের সামনেই। এমনকি মাত্র ৫ ছয় মিটার দূরে যখন সার্ব সেনারা এইসব পাশবিকতা চালাতো তখনও হল্যান্ডের শান্তিরক্ষীরা কেবল বোবা দর্শকের মতই নীরব থাকতো ও হেঁটে বেড়াতো। তারা গণহত্যা থামাবে তো দূরে থাক, একটি গুলিও ছুড়েনি সার্ব বাহিনীর বিরুদ্ধে।

এই গণহত্যা চলার সময় কথিত জাতিসংঘ নীরবতা পালন করলেও পরে একে ‘জাতিগত শুদ্ধি অভিযান’ বলে স্বীকৃতি দেয়। তবে, তথাকথিত আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত ও জাতিসংঘ আজও বসনিয়ার গণহত্যার নায়কদের যথাযথ বিচার করতে সক্ষম হয়নি।

মানবাধিকারের সমর্থক হওয়ার দাবিদার মার্কিন সরকার ও ব্রিটেনও বসনিয়ায় গণহত্যা ঠেকানোর কোনো চেষ্টাই করেনি। বরং ব্রিটেনের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জন মেজর বলেছিলেন, ইউরোপে একটি নতুন মুসলিম দেশের আবির্ভাবকে সহ্য করবে না লন্ডন।

গণহত্যায় নিহত বসনিয়রা মুসলিম ছিল বলেই তাদের ওপর হত্যাযজ্ঞের যথাযথ বিচার হয়নি বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন। তাঁরা বলেছেন, এই বসিনায়র গণহত্যা কথিত সভ্য ইউরপের প্রকৃত অসভ্য রুপ্তাই প্রকাশ করে দিয়েছিল।



প্রতিবেদক :  মুহাম্মাদ ইব্রাহীম




তথ্যসূত্র:

———
1. Bosnia’s Srebrenica massacre
https://tinyurl.com/yc6e4y3h

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধফটো রিপোর্ট | ঈদের অনাবিল আনন্দে মুখরিত শাবাব নিয়ন্ত্রণ অঞ্চলের শিশুরা
পরবর্তী নিবন্ধকাশ্মীর | প্রতিরোধ যোদ্ধাদের হামলায় ভারতীয় ৩ দখলদার হতাহত