মুসলিম-বিদ্বেষী ভারতকে মানবাধিকার রেকর্ড উন্নত করার ‘ঠুনকো’ আহ্বান

    উসামা মাহমুদ

    0
    637

    হিন্দুত্ববাদী ভারত মুসলিমদের উপর নির্মম অত্যাচার চালিয়ে যাচ্ছে। যা বর্তমানে চরম আকার ধারণ করেছে। অমুসলিম দেশ, সংস্থাগুলো মুসলমানদের পক্ষে কাজ না করলেও, বিশেষ স্বার্থে হলেও এখন বলতে বাধ্য হচ্ছে যে, হিন্দুত্ববাদীরা ভারতকে মুসলিম গণহত্যার দিকে নিয়ে যাচ্ছে।

    জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলি ভারতকে ধর্মীয় বৈষম্য এবং যৌন সহিংসতার বিষয়ে কঠোর অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। কারণ তারা জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল এ সার্বজনীন পর্যায়ক্রমিক পর্যালোচনা (UPR) এর সময় ভারতের মানবাধিকার রেকর্ড উত্থাপন করেছে। অবশ্য, এই কথিত বিশ্বসম্প্রদায় মাঝে মাঝে ফিলিস্তিনি মুসলিমদের উপর ইসরাইলের আগ্রাসন নিয়েও বক্তৃতা-বিবৃতি দিয়েছে। তবে সেগুলোকে অবজ্ঞা করে ইসরাইল নিজের দম্ভ প্রকাশের সুযোগ হিসেবে কাজে লাগিয়েছে মাত্র।

    যাইহোক, ভারতে সংখ্যালঘু অধিকার, বাকস্বাধীনতা এবং বিশেষত মহিলাদের বিরুদ্ধে সহিংসতার বিষয়ে অবনতিশীল অবস্থান সম্পর্কিত সমালোচনামূলক সমস্যাগুলিকে অনেক দেশই উত্থাপন করেছে। এটা অন্তত পরিস্থিতির নাজুকতা বুঝতে মুসলিমদেরকে সহায়তা করবে ইনশাআল্লাহ্‌।

    গত বৃহস্পতিবার, সদস্য দেশগুলি ভারতকে “সন্ত্রাস বিরোধী” আইনের ব্যাপক প্রয়োগ কমাতে বলেছে। যার মধ্যে কঠোর বেআইনী কার্যকলাপ (প্রতিরোধ) আইন (ইউএপিএ) রয়েছে।

    ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে হিন্দু জাতীয়তাবাদী সরকার UAPA এবং রাষ্ট্রদ্রোহের মতো কঠোর আইন ব্যবহার করছে, বিশেষ করে মুসলিমদের এবং মানবাধিকার কর্মীদের লক্ষ্য করে, তাদের ন্যায্য বিচারের সুযোগও দেওয়া হচ্ছে না।

    কথিত “সন্ত্রাসবাদ”এর ভিত্তিহীন অভিযোগে ভারতজুড়ে জেলে বন্দী আছেন শত শত মুসলিম যুবক ও মানবাধিকার কর্মী। ইতিমধ্যেই হিন্দুত্ববাদী প্রশাসনের জুলুমে জেলের মাঝেই অনেকের মৃত্যু হয়েছে।

    কাউন্সিলের মার্কিন রাষ্ট্রদূত মিশেল টেলর বলেছে, “আমরা সুপারিশ করছি যে ভারত বেআইনি কার্যকলাপ (প্রতিরোধ) আইনের ব্যাপক প্রয়োগ এবং মানবাধিকার কর্মী, সাংবাদিক এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে অনুরূপ আইনগুলি কমিয়ে আনুক।… প্রকৃতপক্ষে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের প্রয়োগ মানবাধিকার রক্ষক ও কর্মীদের দীর্ঘায়িত আটকের দিকে পরিচালিত করেছে।”

    কানাডা ভারতকে সমস্ত যৌন সহিংসতার তদন্ত করার এবং ধর্মীয় সহিংসতা “মুসলিমদের বিরুদ্ধে সহ” তদন্ত করে ধর্মের স্বাধীনতা রক্ষা করার আহ্বান জানিয়েছে।
    জার্মানি বলেছে যে তারা ভারতে “প্রান্তিক গোষ্ঠীর অধিকার নিয়ে উদ্বিগ্ন”।

    সুইজারল্যান্ড পরামর্শ দিয়েছে যে ভারতকে “সোশ্যাল নেটওয়ার্কগুলিতে উন্মুক্ত অ্যাক্সেস নিশ্চিত করা উচিত এবং এমন কোনও ব্যবস্থা চাপানো উচিত নয় যা ইন্টারনেট সংযোগকে ধীর করে দেয় বা ব্লক করে।”

    ভারতের উগ্র হিন্দুত্ববাদী সমাজ আসলে মুসলিমদের নির্মূলের প্রায় সকল ধাপ অতিক্রম করে গেছে; এখন শুধু মুসলিম গণহত্যার চূড়ান্ত পর্যায় শুরু হওয়ার বাকি। ভারতীয় মুসলিমরা অনাগত হিন্দুত্ববাদী আগ্রাসনের অসনি সংকেত বুঝতে দেরি করলেও, অনেক অমুসলিম গবেষকও ইতিমধ্যে এই বিষয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছে, এটাই পরিস্থিতির নাজুকতা উপলব্ধি করার জন্য যথেষ্ট।

    তবে পরিতাপের বিষয় এই যে, অনেক অমুসলিম দেশও এব্যাপারে কথা বলে তাদের দায়িত্ব আদায়ের তৃপ্তির ঢেকুর তুলতে পারলেও, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের জালিম শাসকেরা এব্যাপারে কোন কার্যাকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না।

    আর কথিত বিশ্বসম্প্রদায় পূর্ব তিমুরের ক্ষেত্রে যেমন সরাসরি পদক্ষেপ নিয়েছিল, তার বিপরীতে ভারত, কাশ্মীর, ইয়েমেন, সিরিয়া ও ফিলিস্তিনের মুসলিমদের ক্ষেত্রে তারা শুধু মায়া কান্না করেই ক্ষান্ত হয়ে যায়। সুতরাং এটা স্পষ্ট যে, তারা শুধু স্বার্থ হাসিল আর পরস্পরকে চাপে ফেলে সুবিধা আদায় করতেই মুসলিম নির্যাতনের ইস্যু নিয়ে কথা বলে থাকে শুধু, কোন পদক্ষেপ নেয়না কখনোই।



    লেখক :  উসামা মাহমুদ




    তথ্যসূত্র:

    1.
    Countries urged India to improve its human rights record at UN
    https://tinyurl.com/yeyea4cx

    মন্তব্য করুন

    দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
    দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

    পূর্ববর্তী নিবন্ধ‘গম্বুজ আকৃতির’ হওয়ায় বাস শেল্টার ভেঙে ফেলার হুমকি বিজেপি সাংসদের
    পরবর্তী নিবন্ধপাক-তালিবানের পৃথক অপারেশনে ২৯ এর বেশি নাপাক সৈন্য হতাহত