ফিলিস্তিনে মানবিক সহায়তা প্রবেশে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে ভেটো অ্যামেরিকার

- আব্দুল্লাহ্ বিন নজর

0
696

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশের জন্য যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে ভেটো দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ইসরায়েলের ‘আত্মরক্ষার অধিকার’ বিষয়ে কোন স্পষ্ট বক্তব্য না থাকায় গাজায় সাহায্য প্রেরণ ও যুদ্ধবিরতি সংক্রান্ত রেজলুশনটি একাই আটকে দেয় ইসরায়েলের পরম মিত্র অ্যামেরিকা।

গতকাল ১৮ অক্টোবর বুধবার জাতিসংঘে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত লিন্ডা থমাস নিরাপত্তা পরিষদের অধিবেশনে বলেছে যে, যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবটি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র হতাশ। কারণ এই প্রস্তাবে ইসরায়েলের ‘আত্মরক্ষার অধিকার’এর কথা উল্লেখ করা হয়নি।

জবরদখলের শিকার ভূমি মালিকরা জবরদখলকারীর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ বা প্রতিরোধ করলে সেটাকে সন্ত্রাস আখ্যা দেওয়া হচ্ছে। আর এরপর দখলদার শক্তি আবারো জুলুমের শিকার ব্যক্তিবর্গের উপর হত্যাযজ্ঞ চালালে তখন সেটাকে বলা হচ্ছে দখলদার শক্তির ‘আত্মরক্ষার অধিকার’। খুবই দুর্বোধ্য এই অধিকারের সংজ্ঞা, যা সুস্থ মনমস্তিস্ক মেনে নিতে পারে না।

যদিও রেজলুশনটিতে হামাস যোদ্ধাদের ইসরায়েলে অভিযান চলানোর বিষয়ে নিন্দা পর্যন্ত করা হয়েছে, কিন্তু ‘আত্মরক্ষার অধিকারের’ নামে ইসরায়েল বেসামরিক জনগণ হত্যা করার বিষয়টির সমর্থনে কিছু না বলায় চটেছে ইসরায়েলের অভিভাবক খ্যাত অ্যামেরিকা।

লিন্ডা থমাস আরও বলেছে যে, “বিশ্বের অন্যান্য জাতির মতো ইসরায়েলেরও আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে; যেমনটা বর্ণিত আছে ইউএন চার্টারের (জাতিসংঘ সনদ) আর্টিকেল ৫১তে।”

অ্যামেরিকা অবশ্য দাবি করেছে যে, চলমান সংঘাত নিরসনে তারা মাঠ পর্যায়ে কাজ করে যাচ্ছে। তবে প্রতিদিনই মিডিয়ায় দেখা যাচ্ছে যে, গাজার বাড়িঘর হাসপাতাল সহ প্রায় সকল ধরণের বেসামরিক স্থাপনায় নির্বিচারে বোমা হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি যুদ্ধবিমানগুলো, আর ইসরায়েলকে তাদের এই গণহত্যা কার্যক্রম চালিয়ে নিতে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র সহায়তায় দিয়ে যাচ্ছে অ্যামেরিকা ও অন্যান্য পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলো।

আর এরই মধ্যে মার্কিন নীতিনির্ধারকদের এমন মন্তব্য করতেও শোনা যাচ্ছে যে, গাজার এই সংকট সহসাই শেষ হচ্ছে না, বরং যুদ্ধ আরও দীর্ঘস্থায়ী হতে যাচ্ছে।

চলমান ফিলিস্তিন-ইসরায়েল যুদ্ধ বন্ধে যুদ্ধবিরতির এই প্রস্তাবনাটি এনেছিল ব্রাজিল। প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে নিরাপত্তা পরিষদের ১৫ টি দেশের মধ্যে ১২ টি দেশ; একমাত্র অ্যামেরিকা ভোট দিয়েছে প্রস্তাবের বিপক্ষে। আর গাজার মুসলিমদের পক্ষে কথা বলেনি রাশিয়া বা যুক্তরাজ্যও, ভোট দানে বিরত ছিল এই দুই দেশ।

নিরপেক্ষ বিশ্লেষকদের মতে, কথিত এই পরাশক্তিগুলো মূলত পারস্পরিক বিবাদ মীমাংসার ক্ষেত্রে সুবিধাজনক অবস্থানে থাকার জন্য কিংবা স্বার্থ আদায়ের দরকষাকষিতে এগিয়ে থাকার কৌশল হিসেবে মাঝে মাঝে মুসলিমদের পক্ষে কথা বলে থাকে। একারণেই আমরা অ্যামেরিকাকে চীনের বিরুদ্ধে উইঘুর ইস্যু নিয়ে বা চীন-রাশিয়াকে ফিলিস্তিন ইস্যু নিয়ে বিবৃতি প্রদান করতে দেখি। অথচ সকলের হাত মুসলিমদের রক্তে রঞ্জিত।
তবে অ্যামেরিকা তার পতনের সময়েও ইসলাম ও মুসলিমবিদ্বেষী এজেন্ডা বাস্তবায়নে কোন কমতি করছে না।



 

তথ্যসূত্র:

1. US vetoes UN resolution calling for humanitarian pause in Israel-Hamas war
https://tinyurl.com/3cr943kk
2. পক্ষে ভোট দেয় ১২ দেশ, ভোটদানে বিরত থাকে ২ দেশ | Gaza US Veto on UN
https://tinyurl.com/27a473sa

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধফটো-রিপোর্ট || ফিলিস্তিনের সমর্থনে দক্ষিণ সোমালিয়ার লোয়ার শাবেলি রাজ্যে বিক্ষোভ
পরবর্তী নিবন্ধসিমেন্ট প্ল্যান্টের জন্য ইমারতে ইসলামিয়ার ২০০ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি