গত ২১শে জুলাই রবিবার পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সঙ্গে করা এক বৈঠকে আমেরিকার রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প আফগান যুদ্ধ বিজয়ের ব্যাপারে এক উদ্ভট মন্তব্য করে। সে মনে করে, আফগানের এক কোটি মানুষকে মেরে সে যুদ্ধ জয় করতে পারতো। কিন্তু, সে তা করেনি। কিন্তু, আফগান যুদ্ধের বাস্তবতা বলে যে, আমেরিকা আফগান জয়ে কোনরূপ চেষ্টার ত্রুটি করেনি। তারা তাদের ‘মাদার অব অল বোম’ নামে পরিচিত বোমাসহ ব্যবহারসহ বহু অর্থ খরচ করেছে আফগান যুদ্ধের পেছনে, চালিয়েছে বর্বরোচিত গণহত্যা। আজ যুদ্ধে ১৮ বছর পার হওয়ার পর দেখা যায় যুদ্ধে তালেবান নেতৃত্বে আফগান মুজাহিদ জাতিই বিজয়ী, আর পরাজিত হয়েছে চরম অহংকারী আমেরিকা। কিন্তু, পরাজয় বরণের পরও আমেরিকার সেই ঔদ্ধত্য মনোভাব যায়নি। যা বুঝা যায় তাদের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক বক্তব্য থেকে। ট্রাম্পের উক্ত বক্তব্যের প্রতিবাদে ইমারতে ইসলামিয়া আফগানিস্তানের সম্মানিত মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ হাফিজাহুল্লাহ একটি বার্তা প্রদান করেছেন। পাঠকদের সুবিধার্থে বার্তাটির অনুবাদ নিচে উল্লেখ করা হলো-
রোববার পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সাথে সাক্ষাতের এক পর্যায়ে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলে, যদি সে চায় তাহলে দশ দিনের ভিতর এক কোটি আফগানীকে হত্যা করে আফগানিস্তান বিজয় করে নিতে পারে এবং এই ধরণের আরো কিছু মন্তব্য সে করেছে।
ট্রাম্পের নীতি চিন্তার বিষয়। তার নীতি হলো, সে আফগানিস্তানে কোন পুলিশ অফিসারের দায়িত্ব পালন করতে চায় না এবং তার এই যুদ্ধ সমগ্র জাতির বিরুদ্ধে হওয়ায় এ জাতির সবাইকে হত্যা করা ব্যতীত এই যুদ্ধে বিজয় লাভ তাই সম্ভব হবে না।যাইহোক, এখন তার দাবী, সে দশ মিলিয়ন আফগানীকে হত্যা করে এই যুদ্ধে বিজয় অর্জন করতে পারে এবং এই ধরণের আরো পদ্ধতির মাধ্যমে যুদ্ধ বিজয় লাভ করতে পারে, তার এই ধরণের দাবী নিছক দায়িত্বহীনতার পরিচয় বহন করে এবং আমরা কঠোর ভাষায় এর প্রতিবাদ করছি।
এই দিবা স্বপ্ন চেঙ্গিস খান, ইংরেজ ও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতারাও দেখেছিল। কিন্তু ইতিহাস তাদের আস্তাকুড়ে নিক্ষেপ করেছে এবং তাদের ক্ষমতা ভূ-পৃষ্ঠেই নিঃশেষ হয়ে গেছে। কিন্তু আফগান জাতি আজও পর্যন্ত মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। ইংশাআল্লাহ ভবিষ্যতেও থাকবে।
অতীতের ১৮ বছরেও আমেরিকা আফগানীদের উপর কম গণহত্যা চালায়নি! তারা বোমার বৃষ্টি বর্ষণ করেছে। এমনকি ‘মাদার অব অল বোম (সকল বোমার মা)’ নামে পরিচিত শক্তিশালী বোমাসহ বিভিন্ন মারণাস্ত্র ব্যবহার করতে সামান্যতম কুন্ঠাবোধ করেনি। কিন্তু ১৮ বছরের শক্তি পরীক্ষায় এ বিষয়টি প্রমাণ হয়ে গেছে যে, আমেরিকার আগ্রাসন ও জুলুম নিষ্ফল হয়েছে, আর আফগানিস্তানকে যে কেন ‘ সাম্রাজ্যবাদের কবরস্তান’ বলা হয়, অজ্ঞদেরকে তা সুস্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।
আমরা মনে করি, জনাব ট্রাম্পের দায়িত্বহীনতার পরিচয় বাদ দিয়ে যুদ্ধের আসল সমাধানের প্রতি মনোনিবেশন করা উচিত। নিষ্ফল অবস্থান ও অবাস্তব দাবীর পরিবর্তে পরিস্থিতি সমাধানে কার্যকরি পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত তার। আফগানের মুসলিম জাতি উত্তম আচরণ ও স্থায়ী সম্পর্কের নজীরবিহীন উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। সুতরাং ভালো হবে, আলোচনাভিত্তিক নিরাপত্তা ও যৌক্তিক সমাধানের ব্যাপারে চিন্তা করা এবং সমগ্র জাতির পক্ষ থেকে ইমারাতে ইসলামিয়ার চুক্তি মোতাবেক নির্ধারিত শান্তিপূর্ণ আলোচনা পরিকল্পনা থেকে সুবিধা নেওয়া, তোমাদের নিজেদের থেকেও তো এ বিষয়টি স্বীকৃত।
ইমারতে ইসলামিয়া আফগানিস্তানের মুখপাত্র
জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ
২০-১১-১৪৪০হিজরী ২২-০-২০১৯ ঈসায়ী