পোল্যান্ড-বেলারুশ সীমান্তে তীব্র মানবেতর সংকটে পড়েছেন শরনার্থীরা। দু’দেশের কেউই তাদের আশ্রয় দিতে চাচ্ছেনা। এ অবস্থায় কয়েকদিনে তীব্র খাদ্য সংকটে পড়েছেন তারা।
অনেকেই জঙ্গল থেকে মাশরুম কুড়িয়ে খেয়ে বেঁচে আছেন। না খেয়ে এখন পর্যন্ত ১০ জনের মৃত্যুর খবর গণমাধ্যমে এসেছে। বাস্তব মৃত্যুর সংখ্যা আরও বেশি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
তীব্র শীত তার উপর বৃষ্টিতে নারী-শীশুদের পোহাতে হচ্ছে অসহনীয় দুর্ভোগ। অসহায় মানুষদের এ দুর্দিনে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোন দেশই আশ্রয় দিচ্ছে না। তার উপর শরনার্থীরা যাতে ইউরোপে ঢুকতে না পারে সে জন্য মোতায়েন করা হয়েছে হাজার হাজার সেনা। শরনার্থীদের ইউরোপে পৌঁছাতে বাধা দিতে সেনা পাঠিয়েছে আমেরিকাও।
এইসব শরনার্থীদের বেশিরভাগই মধ্যপ্রাচ্যের বাসিন্দা। তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ইরাকের নাগরিক।
২০০৩ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ইরাকে আক্রমণ করে কোয়ালিশন জোট বাহিনী। দাবি করেছিল ইরাক গণবিধ্বংসী অস্ত্র নির্মাণ করছে এবং তাদের কাছে এ ধরনের অস্ত্রের মজুদও আছে। পরে কোন ধরনের গণবিধ্বংসী অস্ত্র খুঁজে পায়নি তারা। তবে মিথ্যা অযুহাতে ধ্বংস করে দিয়েছে দেশটির অবকাঠামো ও এর নাগরিকদের। হত্যা করা হয়েছে লাখ লাখ মানুষকে। তাদের অবরোধে অন্তত ৫ লাখ শিশু নিহত হয়েছিল ইরাকে। এই যুদ্ধ শেষ পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে সিরিয়া, লিবিয়া, ইয়েমেনসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে।
এসব যুদ্ধে নিহত হয়েছেন অসংখ্য মানুষ। ঘর-বাড়ি ধ্বংস হয়ে সৃষ্টি হয়েছে চরম মানবিক সংকট। বোমা হামলা থেকে প্রাণে বাঁচতে বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নিয়ে শরনার্থী হয়েছেন অনেকে। কিন্তু বরাবরই পশুর মতো আচরণ করা হয়েছে এসব শরনার্থীদের সঙ্গে।
শুধু পোল্যান্ড-বেলারুশ-ই নয় , এর আগেও লাখ লাখ শরনার্থীদের সাথে পশুর মতো আচরণ করেছে পশ্চিমারা। অনেককে ডুবিয়ে মেরেছে সাগরে। ভেসে এসেছে ছোট্ট শিশুদের লাশ।
আগ্রাসী আমেরিকা ও তাদের জোটের দাবি ছিল, পৃথিবী ও এর অধিবাসীদের শান্তির জন্যই সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে এসব দেশে আগ্রাসন চালিয়েছে তারা।
এখন একটাই প্রশ্ন,শান্তির জন্য লাখো মানুষের আশ্রয়স্থল ধ্বংস করে কোন শান্তি স্থাপন করতে চেয়েছিল পশ্চিমারা? তাদের আগ্রাসনে বাস্তুহারা মানুষগুলোকে একটু শান্তির খোঁজে হন্যে হয়ে বেড়ানোদের কেন আশ্রয় দিচ্ছেনা তারা?
উল্লেখ যে, পোল্যান্ড ইরাকে আক্রমণকারী মার্কিন কোয়ালিশন বাহিনীর অগ্রগামী চারটি দেশর একটি (আমেরিকা,অস্ট্রেলিয়া,ডেনমার্ক, পোল্যান্ড)। বর্তমান শরনার্থীরা পোল্যান্ড থাকতে নয়। পোল্যান্ডের মধ্য দিয়ে ইউরোপের অন্য দেশে যেতে চাচ্ছিলেন। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে পোল্যান্ড ইরাকে বোমা হামলার অধিকার দেখালেও ইরাকের নাগরিকদের পোল্যান্ডে তাদের পায়ের ধুলো ফেলার অধিকার নেই। এটিই হচ্ছে ইউরোপ-আমেরিকার মানবাধিকার ও স্বাধীনতা।
এমন মানবাধিকারের জন্যই আমাদের দেশের হলুদ মিডয়াগুলো মায়াকান্নায় লিপ্ত থাকে।
শরনার্থীদের সাথে বর্বর আচরণ এটাই প্রমাণ করে যে,মানবতার মুখোশ পরিহিত এসব পশ্চিমারা মানবাধিকার রক্ষা বা শান্তি স্থাপনের জন্য নয়। বরং মুসলিম ও ইসলামের অনুসারী হওয়াই তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত।
তথ্যসূত্র:
======
১। বেলারুশ সীমান্তে শত শত অভিবাসীদের আটকে রেখেছে পোল্যান্ড-
https://tinyurl.com/8czu7czy
২। বেলারুশ সীমান্তে অভিবাসীদের ওপর টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ পোলিশ বাহিনীর –
https://tinyurl.com/cnyxbnrv
৩। পোল্যান্ডে ইইউ-বেলারুশ সীমান্তে আরো এক মরদেহ –
https://tinyurl.com/4e4kv4mx