ভারতে গো-রক্ষা আইন কি মুসলিম নিধনের হাতিয়ার?

    0
    418

    ভারতের দিল্লিতে গরু জবাইয়ের অভিযোগে দুই মুসলিমকে নির্মমভাবে মারধর করেছে কথিত গো-রক্ষকরা। গত ১৮ মে উগ্র গো-রক্ষাকারীদের দ্বারা ঐ মুসলিমদের নির্মমভাবে মারধর করার একটি ভিডিও প্রচার করেছে হিন্দুতভা ওয়াচ (Hindutva Watch)৷

    ভিডিওতে দেখা গেছে, মারধরের শিকার ঐ মুসলিম যুবকদের দিকে লাঠি ইশারা করছে আক্রমণকারীদের একজন। ক্যামেরার পেছনে থাকা এক ব্যক্তিকে বলতে শোনা যায় যে, ‘এই দুজনই গরু জবাই করতো। তারা গরু জবাই করার জন্য এই গোডাউন বানিয়েছিল।’ তারপর ক্যামেরা ম্যান গোডাউনটি ঘুরে দেখায়।

    যদিও ভিডিওটিতে পশু জবাইয়ের কোনো প্রমাণ নেই, নেই মৃত কোনো প্রাণীর অস্তিত্ব। কোনো প্রমাণ ছাড়াই তারা মুসলিমদের উপর হামলা চালাচ্ছে, তাদের সম্পত্তির ধ্বংস করছে। এই ঘটনাটি দিল্লিতে ঠিক কোথায় ঘটেছে তা এখনও স্পষ্ট নয়।

    একই দিনে, আরেকটি ভাইরাল ভিডিওতে দেখা গেছে যে, হিমাচল প্রদেশের শাহপুর জেলায় কথিত গো-রক্ষকরা একজন অসহায় মুসলিমের উপর আক্রমণ করছে। ভিডিওতে ঐ মুসলিম গরু ব্যবসায়ীর উপর আক্রমণ করে এক হিন্দু দাবি করে যে, তারা বেওয়ারিশ গবাদি পশু জড়ো করে বিক্রি করে। ভিডিওটিতে ঐ মুসলিম ব্যবসায়ীকে থাপ্পড় মারতে দেখা যায় এবং হিন্দু লোকটি তাকে জঘন্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে।

    ভারতে গো-রক্ষার নামে মুসলিমদের উপর এমন আক্রমণের বহু ঘটনা ঘটছে। গরু রক্ষার ছদ্মবেশে তথাকথিত গো-রক্ষক এবং বজরং দলের মতো উগ্রবাদী দলগুলোর সদস্যরা মুসলমানদের উপর হামলা করে চলেছে। গো-রক্ষার নামে মুসলমানদের উপর হামলার করা হলে ভারতীয় প্রশাসনও নীরব ভূমিকা পালন করে। ফলে হিন্দু নেতারা আরও দামিম্ভকতার সাথে সেসব হামলা চালানোর কথা প্রকাশ্যে স্বীকারও করে। এমনকি মুসলিমদের উপর হামলা করতে গিয়ে কেউ আটক হলে তাদের ছাড়িয়ে আনার ব্যবস্থা করার ঘোষণাও দেয় তারা।

    ভারতে কিছু প্রদেশে গরু জবাই নিষিদ্ধ হলেও এই আইনটি উগ্র হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীগুলি গরু রক্ষার আড়ালে মুসলিমদের উপর আক্রমণ করতে ব্যবহার করছে। হরিয়ানার মতো বিজেপি-শাসিত রাজ্যে গরু রক্ষার জন্য বিশেষ টাস্ক ফোর্সও আছে যারা কথিত গো-রক্ষার নামে মুসলমানদের বিরুদ্ধে আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে।

    এভাবে গো-রক্ষার নামে মুসলিমদের উপর আক্রমণ প্রতিনিয়ত ঘটছে এবং নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটা প্রমাণ করে যে গরু রক্ষাকারী আইনগুলি আসলে মুসলমানদের উপর আগ্রাসন চালানোর হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। হিন্দুত্ববাদী দলের কর্মী এবং তথাকথিত গো-রক্ষকদেরকে এসব আইনের দ্বারা আরও ক্ষমতা দেওয়া হচ্ছে।

    কিন্তু যারা এসব বিচারবহির্ভূত হামলার শিকার হয় তাদের সুরক্ষার জন্য কোনো আইন নেই। এরকম একটি মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছিল এ বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি। হরিয়ানার ভিওয়ানির বারওয়াস গ্রামে জুনায়েদ এবং নাসির নামে দুই মুসলিমকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয়েছিল।

    তাদের দুজনকেই বজরং দলের সদস্যরা অপহরণ করেছিল। পরে তাদেরকে গাড়ির ভিতরে আটকে উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা আগুন জ্বালিয়ে দেয়। তাদের বিরুদ্ধে গরু চোরাচালানের অভিযোগ ওঠার পর এ ঘটনা ঘটে। জুনায়েদ এবং নাসিরকে হত্যার তিন মাসেরও বেশি সময় পার হলেও পুলিশ এখনও আসামীদের আটক করেনি।

    এমনিভাবে, হরিয়ানার নুহ জেলার একটি গ্রাম হুসেনপুর। সেখানে গো-রক্ষক দল ওয়ারিশ, শওকিন এবং নাফিসকে ব্যাপক মারধর ও গালিগালাজ করে। পরবর্তিতে ওয়ারিশ মারা গেলে, তার পরিবার এবং শওকিন ও নাফিসের দাবি, ওয়ারিসের মৃত্যুর জন্য বজরং দল দায়ী।

    এভাবেই কোনো প্রমাণ ছাড়াই মিথ্যে অভিযোগে নিরীহ-নিরাপরাধ মুসলিমদের উপর হামলা করছে উগ্র হিন্দুত্ববাদী কিছু গোষ্ঠী। মানব রচিত তাদের সংবিধানের দোহাই দিয়ে বিচারবহির্ভুত ভাবে হত্যা করা হচ্ছে সাধারণ মুসলিমদের। এদিকে মুখে ন্যায় বিচারের কথা বললেও, বাস্তবে মুসলিমদের উপর হিন্দুদের আক্রমণের বেশিরভাগ ঘটনাতেই প্রশাসন নীরব ভূমিকা পালন করে। অনেক ক্ষেত্রে আবার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে হিন্দু আক্রমণকারীদের সহায়তাও করে ভারতীয় প্রশাসন ও রাজনৈতিক ব্যক্তিরা।

    তথ্যসূত্র:
    ——
    1. Two Muslim men brutally thrashed over allegations of Cow slaughter in Delhi
    https://tinyurl.com/2p8vccj7

    মন্তব্য করুন

    দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
    দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

    পূর্ববর্তী নিবন্ধইয়েমেন যুদ্ধ: একটু পেছন ফিরে দেখা
    পরবর্তী নিবন্ধ‘আফগানিস্তান নিজস্ব প্রাকৃতিক সম্পদ দিয়ে উন্নতি করতে সক্ষম’