মাসে মাত্র ৫,৮৫০ টাকা ভাড়া দিয়ে বেইলি রোডের মন্ত্রিপাড়ার একটি অত্যাধুনিক ডুপ্লেক্স সরকারি বাড়িতে ভাড়া থাকেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী ওয়াছিউদ্দিন।
বাড়িটির তত্ত্বাবধায়ক গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন গণপূর্ত অধিদপ্তর। অভিযোগ আছে, ২০২২ সালের ১৬ নভেম্বর প্রভাব খাটিয়ে গণপূর্ত অধিদপ্তরের কাছ থেকে ‘অবিশ্বাস্য’ ভাড়ায় বাড়িটি বরাদ্দ নেন সচিব। সরকারি বাড়ি বা কোয়ার্টারে থাকলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীর মূল বেতনের ৬০ শতাংশ বাড়িভাড়া বাবদ কাটার নিয়ম। তবে কাজী ওয়াছিউদ্দিনের ক্ষেত্রে কাটা হচ্ছে মাত্র ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। অথচ সচিবের মূল বেতন ৭৮ হাজার টাকা। সে হিসাবে তার বাসা ভাড়া হওয়ার কথা ৪৬ হাজার ৮০০ টাকা।
যেখানে রাজধানীর সবচেয়ে অনুন্নত এলাকাতেও ছোট্ট একটি রুম ভাড়া নিতে বা সাবলেটে থাকতে গুনতে হয় পাঁচ থেকে সাত হাজার টাকা, সেখানে রাজধানীর অভিজাত এলাকায় ডুপ্লেক্স বাড়ির ভাড়া এত কম কীভাবে হয়—তা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন।
সমকাল সূত্রে জানায় যায়, একসময় মন্ত্রিপাড়ার নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য সেখানে একটি সাবস্টেশন ছিল। সাবস্টেশনের সঙ্গে থাকা একটি ছোট ফ্ল্যাটে থাকতেন গণপূর্তের একজন নির্বাহী প্রকৌশলী; যার দায়িত্ব ছিল মন্ত্রিপাড়ার বাড়িগুলোর দেখভাল, মেরামত ও তদারক করা। নিচতলা ছিল সাবস্টেশন ও স্টোররুম। দোতলায় ছিল আবাসিক ব্যবস্থা। ২০১৭ সাল থেকে ওই বাসায় থাকতেন গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী (ইএম) তরিকুল ইসলাম। তখন ‘সাবস্টেশন কাম অফিশিয়াল রেসিডেন্স’ হিসেবে বাসাটির ভাড়া বাবদ প্রতি মাসে তরিকুল ইসলামের বেতন থেকে ২৬ হাজার টাকা কেটে নেওয়া হতো। ২০২২ সালে তাকে আকস্মিক বদলি করা হয়। এরপরই ওই জায়গা আধুনিকায়ন করে ডুপ্লেক্সের আদল দেওয়া হয়। পরে ‘অবিশ্বাস্য’ ভাড়ায় গণপূর্ত সচিব কাজী ওয়াছিউদ্দিনকে বাড়িটি বরাদ্দ দেয় গণপূর্ত অধিদপ্তর।
সংবাদমাধ্যম সমকাল জানায়, কাজী ওয়াছিউদ্দিন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব হওয়ার পর তিনি সরকারি বাড়িতে থাকার ইচ্ছা পোষণ করেন। তখন সচিবকে খুশি করতে গণপূর্ত অধিদপ্তরের কিছু কর্মকর্তা সক্রিয় হয়ে ওঠেন। তারা তরিকুল ইসলামের নামে বরাদ্দ বাতিল করেন। পরে তরিকুল ইসলাম বাসাটি ছাড়তে না চাইলে তাকে অন্যত্র বদলি করে দেওয়া হয়। এরপর বাড়িটি সংস্কারের উদ্যোগ নেয় গণপূর্ত অধিদপ্তর। সাবস্টেশন সরঞ্জাম রাখার ঘর অপসারণ করে মোটা অঙ্কের টাকা খরচ করে বাড়িটি ডুপ্লেক্স ভবনে রূপ দেওয়া হয়। বর্তমানে বাড়িটির নিচতলায় রয়েছে বড় পরিসরে ড্রইং-ডাইনিং রুম, দুটি বাথরুম ও একটি সার্ভেন্ট রুম। দোতলায় তিনটি বেডরুম ও তিনটি বাথরুম। পুরো বাড়িটি আধুনিকায়ন করতে গণপূর্তের খরচ হয়েছে প্রায় অর্ধকোটি টাকা।
সচিবকে বাড়ি বরাদ্দের সময় গণপূর্ত অধিদপ্তরের চিঠিতে বলা হয়, ‘সরকারি কাজের সুবিধার্থে আপনাকে বেইলি রোডের মিনিস্টার্স অ্যাপার্টমেন্ট-৩-এর সম্মুখভাগে অবস্থিত দ্বিতীয় তলাবিশিষ্ট ভবনটি অস্থায়ী বাসভবন হিসেবে বরাদ্দ প্রদান করা হলো।’ ওই দিনই আরেকটি ভাড়া-সংক্রান্ত অফিস আদেশ জারি করা হয়। এতে বলা হয়, ‘ঢাকা গণপূর্ত সার্কেল-১, ঢাকা-এর আওতাধীন গণপূর্ত বিভাগীয় বাসা বরাদ্দ কমিটির ২০২২ সালের ২১ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঢাকার ৪০ বেইলি রোডের বাড়িটির ভাড়া মূল বেতনের ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ হারে নির্ধারণ করা হলো।’
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীন আবাসন পরিদপ্তরের ২০০৯ সালের পরিপত্র অনুযায়ী, কোনো সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী রাজধানীতে সরকারি বাসাবাড়ি বা কোয়ার্টারে বাস করলে তার মূল বেতনের ৬০ শতাংশ কাটা যাবে। বিভাগীয় শহরে এটি ৫৫ শতাংশ। জেলা, পৌরসভা বা থানা বা অন্য স্থানে ৪৫ শতাংশ কাটা হয়।
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার সমকালকে বলেন, ‘প্রভাব খাটিয়ে এ ধরনের অবাঞ্ছিত সুযোগ-সুবিধা নেওয়া দুর্নীতির পর্যায়ে পড়ে। এটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। যারা সচিবকে এ সুযোগ করে দিয়েছে, তাদের চিহ্নিত করে শাস্তি দেওয়া দরকার।’
তথ্যসূত্র:
১. মন্ত্রিপাড়ার ডুপ্লেক্স বাড়িতে থাকেন সচিব, ভাড়া মাত্র ৫৮৫০ টাকা
– http://tinyurl.com/2zhsc5vz