বেসরকারি কোম্পানির সাথে আঁতাতে সরকারি বীজ অবিক্রীত, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ও দেশ

- সাইফুল ইসলাম

0
113

উন্নতমানের বীজ কম দামে কৃষকের হাতে তুলে দেওয়া বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) দায়িত্ব। কিন্তু বীজ বিতরণ নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে আছে নানা অভিযোগ। বীজ সংকট, ভেজাল, নিম্নমান, দামে নয়ছয়, বরাদ্দে ঘাপলাসহ নানা অনিয়ম ছাপিয়ে এবার বিপুল পরিমাণ বীজ অবিক্রীত থেকে যাওয়ার তথ্য বেরিয়ে এসেছে। অভিযোগ উঠেছে, বেসরকারি কোম্পানিকে বীজ বিক্রির সুযোগ করে দিতে গিয়ে বিএডিসি এ গ্যাঁড়াকলে নিজেরাই পড়েছে।

চলতি রবি মৌসুমে বিএডিসির ৩৭ হাজার টনের বেশি বীজ অবিক্রীত থাকায় দেশের প্রায় ১ হাজার ৫০ কোটি টাকার লোকসান গোনার প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে। এসব বীজ এখন বিএডিসির জন্য ‘গলার ফাঁস’! বাধ্য হয়ে এই বীজধান এখন চাল বানিয়ে বেচা ছাড়া আর কোনো গতি নেই। এভাবে বেচলেও মোটা অঙ্কের টাকা হারাতে হবে দেশকে।

বীজ অবিক্রীত থাকায় বাংলাদেশে খাদ্য উৎপাদন কিছুটা কম হওয়ার শঙ্কা দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। উচ্চফলনশীল ধানের বীজ কাজে না লাগায় প্রায় ৪ দশমিক ২ লাখ টন খাদ্য উৎপাদন কম হতে পারে বলে ধারণা করছেন তারা। এটি দেশের কৃষিতে বড় ধাক্কা বলেও মনে করেন কৃষি অর্থনীতিবিদরা।

অভিযোগ রয়েছে, বেসরকারি কোম্পানির বিক্রি বাড়াতে বিএডিসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার একটি চক্রের আঁতাতে কৃষকের কাছে সঠিক সময়ে বিএডিসির বীজ পৌঁছে না। বেসরকারি সংস্থাগুলোর বীজ বিক্রি হয়ে যাওয়ার পর বিএডিসি বীজ বাজারে দেয়। এতে প্রতিষ্ঠানটির বীজ অবিক্রীত থেকে যায়। এ ছাড়া দক্ষ জনবলের অভাব ও দায়িত্বে অবহেলার কারণেও কৃষক সরকারের কম দামের বীজ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ডিলার বলেন, বিএডিসির বীজ ভালো। প্রত্যন্ত অঞ্চলের কৃষকের কাছে এ বীজের জনপ্রিয়তা রয়েছে। তবে কৃত্রিম সংকট তৈরির কারণে কৃষকরা এ বীজের নাগাল পাচ্ছেন না। ডিলারদের বীজ বরাদ্দ দেওয়া হয় দেরিতে। ফলে একদিকে ভরা মৌসুমে সংকট তৈরি করা হয়, অন্যদিকে মৌসুম শেষে নানা অজুহাতে অবিক্রীত দেখানো হয়। বাধ্য হয়ে অপেক্ষাকৃত বেশি দরে বেসরকারি আমদানিকারকদের কাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করতে হচ্ছে। বিভিন্ন বেসরকারি কোম্পানির বীজ বেশি বিক্রির সুযোগ তৈরি করে দিতে নানা কারসাজি চলে। কখনও কৃত্রিম সংকট, আবার কখনও প্রণোদনার বীজে ভেজালের কারণে সরকারি বীজের প্রতি কৃষকের আস্থাহীনতা তৈরি করতে একটি চক্র কাজ করে। এতে অসাধু বেসরকারি কোম্পানি নিম্নমানের বীজ বাজারে ছেড়ে দেয়, কৃষকরা হন প্রতারিত।

বীজ নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বিএডিসির সদস্য পরিচালক (বীজ ও উদ্যান) মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, কৃষকের কথা চিন্তা করেই বাজারে আমাদের বেশি বীজের সরবরাহ রাখতে হয়, যাতে বীজের কোনো সংকট না থাকে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়েই বীজ মজুত করা হয়। এখনও মৌসুম শেষ হয়ে যায়নি। আগামী মার্চ পর্যন্ত বোরো বীজতলা করা যাবে। এর মধ্যে মজুত থাকা বীজ বিক্রি হয়ে যাবে।

কিন্তু নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএডিসির এক কর্মকর্তা বলেন, চলতি বোরো মৌসুমের বীজতলা তৈরির কাজ এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। ফলে অবিক্রীত থাকা বীজ দিয়ে আর চাষাবাদের সুযোগ নেই। অবিক্রীত থাকা বীজ পরে কৃষককে ধান হিসেবে দিয়ে বিক্রি দেখানো হবে। কৃষক সেটি চাল বানিয়ে নিতে পারেন।



 

তথ্যসূত্র:

১. অন্যকে সুবিধা দিতে গিয়ে বিএডিসি নিজেই গাড্ডায়
http://tinyurl.com/sx8b3hca

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধপাকিস্তানের সাথে আমাদের স্বীকৃত কোনো সীমানা এমনকি জিরো পয়েন্টও নেই: তালিবান
পরবর্তী নিবন্ধআফগানে ৪৭ মিলিয়ন আফগানি ব্যয়ে নির্মিত আরো ৩ টি ব্রীজ যান চলাচলের জন্য উম্মুক্ত