মেডিকেল কলেজে ক্লাসে ছাত্রকে গুলি করলো ‘ছাত্রলীগ শিক্ষক’

0
197

বাংলাদেশের সিরাজগঞ্জ জেলায় শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজে শ্রেণিকক্ষে এক শিক্ষার্থীকে গুলি করেছে ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগ নেতা রায়হান শরীফ নামে এক ‘শিক্ষক’। ঘটনার পর তার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে দুটি অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রসহ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র। তার বিরুদ্ধে দুটি আলাদা মামলা করা হয়েছে।

জানা যায়, ৪ মার্চ সোমবার দুপুরের পর সিরাজগঞ্জ শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজে ক্লাস চলার সময় এক শিক্ষার্থীকে লক্ষ্য করে গুলি চালায় শিক্ষক রায়হান শরীফ। এতে আরাফাত আমিন তমাল নামে ওই শিক্ষার্থী আহত হন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিভিন্ন ভিডিওতে ওই দিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন উপস্থিত শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনেকেই।

এরমধ্যে এক নারী শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন, “আমাদের আজ একটা আইটেম চলতেছিল(ক্লাসে), সে আমাদের বলে, আমার কাছে পিস্তল পোষা পাখির মতো। সে একটা ফটোশুট করার মতো আমাদের ভয় দেখায়। এরকম করে সে একজনকে টার্গেট করে এবং তাকে গুলি মেরে দেয়।”

“এ ঘটনা ঘটার পরে সে আমাদের বন্ধুকে হসপিটালে নিয়ে যেতে দেয়নি। সে আমাদের আটকানোর চেষ্টা করেছে।”

প্রত্যক্ষদর্শী একজন শিক্ষার্থী বলেন, ক্লাস শেষে তাদের একটা ভাইবা পরীক্ষার মতো ছিল। সেখানে সময় না থাকায় সে ত্রিশ জনকে একসাথে ডাকে। সেখানে তমালকে একটা কোয়েশ্চেন করলো তমাল পারলো না। এরপরে সে তার আর্মসটা বের করলো, বের করে টানলো, লোড হয়তোবা আগে থেকেই করা ছিল, সে জাস্ট ফায়ার করলো।

আরেকজন শিক্ষার্থী বলেন, সন্ধ্যা বেলায় তাদের ওয়ার্ড থাকে। ঐ শিক্ষক বলে ওয়ার্ড মিস দিয়ে ওর ক্লাসে যেতে। শিক্ষার্থীরা গতকাল ওর ক্লাসে যায়নি, ওয়ার্ডে গেছে। যার কারণে সে শিক্ষার্থীদের উপর ক্ষেপে ছিল। ঐদিন ক্লাসে সে ১০টা তরবারি নিয়ে আসছে, চাকু নিয়ে আসছে শিক্ষার্থীদের ভয় দেখানোর জন্য।

অস্ত্র বহন এবং হুমকি-ধমকি ছাড়াও ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগও তুলেছেন কয়েকজন শিক্ষার্থী। গভীর রাতে ছাত্রীদের ফোন করে বিরক্ত করতো সে।

৫ মার্চ সকালে গ্রেফতারকৃত শিক্ষকের শাস্তি দাবি করে মেডিকেল কলেজের সামনের রাস্তায় এবং ক্যাম্পাসের ভেতরে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। এসময় তারা বিভিন্ন প্ল্যাকার্ডে তাদের দাবির বিষয়টি তুলে ধরেন।

সিরাজগঞ্জ ডিবির ওসি জুলহাজ উদ্দীন বলেছে, রায়হান শরীফের ব্যাগ থেকে দুটি বিদেশি পিস্তল, ৮১ রাউন্ড তাজা গুলি, ১টি গুলির খোসা, ৪টি ম্যাগজিন, ২টি বিদেশি কাতানা (ছোরা) ও ১০টি অত্যাধুনিক বার্মিজ চাকু উদ্ধার করা হয়েছে।’
গুলির ঘটনার পর রায়হান শরীফের সাবেক ও বর্তমান কর্মস্থলে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সার্বক্ষণিক নিজের সঙ্গে পিস্তল রাখতো সে। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে থাকাকালীন শিক্ষার্থীদের মারধর এবং গভীর রাতে ক্যাম্পাসে ফাঁকা গুলি ছুড়তো রায়হান।

জানা যায়, জেলা শহরের বিএ কলেজ রোডের বাসিন্দা সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ড. আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে রায়হান। তার বিরুদ্ধে নারী শিক্ষার্থীদের যৌন হয়রানির অভিযোগ রয়েছে। সে প্রায়ই পিস্তল নিয়ে ক্যাম্পাস ও ক্লাসে আসায় শিক্ষার্থীরা ভয়ে থাকেন। তার বদলির জন্য অধ্যক্ষের কার্যালয় থেকে একাধিকবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পত্র পাঠানো হলেও ফলপ্রসূ হয়নি। কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের প্রভাষক হয়েও গায়ের জোরে ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের শিক্ষার্থীদের অনির্ধারিত ক্লাস নেয় রায়হান।
২০১০-২০১১ শিক্ষাবর্ষে রাজশাহী মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়েছিল রায়হান। ২০১৩ সাল থেকে কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ পায় সে। তখন থেকেই নিজের সাথে অস্ত্র রাখতো সে।


তথ্যসূত্র:
১. ছাত্ররাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন রায়হান, অস্ত্র কিনে রাখতেন সংগ্রহে
https://tinyurl.com/bp7ncr8e
২. ছাত্রজীবন থেকেই অস্ত্র নিয়ে ঘুরতেন শিক্ষক ডা. রায়হান!
https://tinyurl.com/4cpkszxh
৩. মেডিকেল শিক্ষার্থীকে গুলি করা শিক্ষকের কাছ থেকে দুটি অস্ত্র উদ্ধার, এ পর্যন্ত যা জানা যাচ্ছে
https://tinyurl.com/3ckpe3d9

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধইসরাইলের প্রতি তরুণ আমেরিকানদের সমর্থন কমছে
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে গণধর্ষণে তরুণীর মৃত্যু, ধর্ষকদের একজন ছিল ‘প্রেমিক’!