রাষ্ট্রায়ত্ত মোবাইল অপারেট টেলিটকে কোটি কোটি টাকার দূর্নীতি : ক্ষমতাবানদের মৌন সমর্থন!

মুহাম্মাদ ইব্রাহীম

0
802

টেলিটককে আমাদের ফোন বলে বলে আমাদের টাকা গায়েব করছে তারা। দূর্নীতিবাজ শাসকগোষ্ঠীর এমন মুখরোচক বানী আমাদের ঘুম পাড়িয়ে রেখেছে শান্তিতে। আর তারা দেশ থেকে বিদেশে পাচার করছে কোটি কোটি টাকা।

সরকারি মোবাইল অপারেটর টেলিটকের প্রায় ২০৫ কোটি টাকার হিসাব পাওয়া যাচ্ছে না। এরমধ্যে আছে সংস্থাটির নামে থাকা বিভিন্ন ব্যাংকে ১০৫ কোটি টাকার এফডিআর এবং চলতি হিসাবের ১০০ কোটি টাকা। সম্প্রতি সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সাহাবুদ্দিনকে সরকার সরিয়ে দেয়। বিদায়বেলা তিনি উল্লিখিত অর্থের হিসাব দিতে পারেননি। এই প্রতিষ্ঠানটির বর্তমানে প্রায় ৩০৫ কোটি টাকার বেশি ঋণ আছে বিভিন্ন দেশি-বিদেশি ও সরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে। বিভিন্ন সেবা আর কেনাকাটায় দূর্নীতি করে বিল পরিশোধ না করায় এভাবে সংস্থাটি দেনায় পড়েছে।

টেলিটকের দায়দেনা সম্পর্কে খোঁজ নিতে গিয়ে জানা যায়, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) কাছে প্রতিষ্ঠানটির দেনা ১০০ কোটি টাকা। এছাড়া ব্যাংক ঋণ আছে ১২৫ কোটি টাকা। বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল) ৮৩ কোটি টাকা পরিশোধের জন্য টেলিটককে চিঠি দিয়েছে। কয়েকটি স্থানীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছেও কয়েকশ কোটি টাকা দেনা রয়েছে টেলিটকের। টাওয়ার কোম্পানি ই-ডটকো, হুয়াওয়ে এবং সামিটও কয়েকশ কোটি টাকা পাবে।

সরকারি মোবাইল কোম্পানি টেলিটকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সাহাবুদ্দিনের বিরুদ্ধে অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসায় সম্পৃক্ততাসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরে। অবৈধ ভিওআইপির মাধ্যমে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন তিনি। বিটিআরসির তদন্তে তার বিরুদ্ধে অনিয়মে সম্পৃক্ততার প্রমাণ মিলেছে। অবৈধ ভিওআইপিতেই বাজিমাত করেছে সাবেক এই এমডি। সে অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মোটা অঙ্কের লেনদেন করেই আজ শত কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

কেনাকাটা থেকে শুরু করে নিয়োগ, পছন্দের কোম্পানিকে কাজ দেওয়া, পুরোনো পদ্ধতির এসব লুটপাট তো রয়েছেই। সেই সঙ্গে যোগ হয়েছে নির্দিষ্ট কোম্পানির কাছ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকার যন্ত্রপাতি আমদানি কমিশন ও বিটিএস সাইট স্থাপনে শেয়ার সাইট থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়ে ই-ডটকোকে উচ্চমূল্যে একচেটিয়া সাইট প্রদান করেছে। ই-ডটকো টেলিটক থেকে বিল কালেকশনের জন্য কিউবিক গ্লোবাল লিমিটেড নামে একটি কোম্পানিকে লবিস্ট হিসাবে নিয়োগ করেছে। এই কোম্পানির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা লোপাট করেছে সাহাবুদ্দিন। কাগজে-কলমে কেনা হয়েছে, কিন্তু বাস্তবে নেই; স্ক্র্যাচকার্ড এবং ক্যাশ কার্ডের হিসাবে এমন কোটি কোটি টাকার গরমিলের প্রমাণ মিলেছে।

জানা যায়, প্রতিষ্ঠানটির মার্কেটিং অ্যান্ড ভ্যাস ডিপার্টমেন্ট থেকে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) নিয়োগ পরীক্ষায় সফটওয়্যার সাপোর্টের বিপরীতে ভেন্ডর কোম্পানি সিনটেক্স সিস্টেমের নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে ৩ কোটি ৮৯ লাখ ৯৪ হাজার ৪৫১ টাকার বিল প্রদানের চেষ্টার অভিযোগে টেলিটকের ক্রয় করে।

আসলে পশ্চিমা গণতান্ত্রিক মডেলে রাজনৈতিক এলিটশ্রেণি ও তাদের সহযোগী আমলা-কর্মকর্তারা সকল সুবিধা ভোগ করে থাকে। তারাই সকল সুযোগ ভাগ করে নিতে দুর্নীতি আর লুটপাটের প্রতিযোগিতা শুরু করে। আর এরা এসব কাজে একে অপরের সহযোগী হওয়ায় কেউ কাউকে কিছু বলে না, বরং একে অন্যকে বাঁচতে সাহায্য করে। এদিকে জনগণকে তারা কথিত উন্নয়ন আর প্রগতি দেখিয়ে বোকা বানিয়ে রাখে। ক্ষমতায় যাওয়ার মাধ্যম নির্বাচনের সময় একদল অপর দলের সাথে খুনোখুনি হয়, ক্ষমতায় গেলে দূর্নীতি হয়। এখন তাই সময় এসেছে এই ইসলামবিরোধী সিস্টেম এবং সিস্টেমের ধারক-বাহকদের বদলে ফেলার, আপামর জনসাধারণকে এ বিষয়ে সচেতন করার।



তথ্যসূত্র:
——–
১। হদিস নেই টেলিটকের ২০০ কোটি টাকার
https://tinyurl.com/5n7yacep

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধউইঘুর মুসলিমদের আর্তনাদ || পর্ব-২ || কল্পকথা নয় – হাইতিওয়াজির গল্প
পরবর্তী নিবন্ধহিন্দু পুলিশ সুপার সুভাষ চন্দ্র সাহার অপরাধনামা : ক্ষমতার অপব্যবহার ও  বিপুল সম্পদ অর্জন